মিয়ানমার সম্পর্কে নতুন ভাবনা ওয়াশিংটনের

দীর্ঘদিনের টানাপড়েন ঘুচিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নের চিন্তাভাবনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ লক্ষ্যে জান্তা সরকারের সময়ে আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মিয়ানমারের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার কথা ভাবছে তারা। মিয়ানমার সরকারের ভেতর গণতন্ত্রের চর্চা ও বিরোধী দলের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠার লক্ষণ দেখা দেওয়ায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাঁরা একে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে চমকপ্রদ পরিবর্তন হিসেবে অভিহিত করছেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসে গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

পত্রিকাটি জানায়, প্রাথমিকভাবে দুই দেশের সম্পর্কের অচলাবস্থার বরফ গলতে শুরু করে গত বছরে মিয়ানমারে নির্বাচনের পর। নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক থাকলেও সেনা সমর্থিত নতুন সরকার রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বেশ কিছু পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, ওই সময় কেউই ভাবেনি যে, সরকার দেশটিতে মানুষের মৌলিক অধিকারের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেবে এবং শান্তিতে নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চির শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠবে। জান্তা সরকারের দুই দশকের শাসনামলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা বর্তমান প্রেসিডেন্ট থিয়েন সেইন দায়িত্ব নিয়েছেন প্রায় ছয় মাস হলো। তিনি জান্তা সরকারের অতীতের নীতি থেকে সরে আসার স্পষ্ট ইঙ্গিত দেন। ইতিমধ্যেই কর ও সম্পত্তিবিষয়ক আইনে পরিবর্তন, সংবাদমাধ্যমের ওপর বাধানিষেধ শিথিল ও রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছেন তাঁরা।
পত্রিকাটির মতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর মিয়ানমারের রাজনীতিতে এ স্পষ্ট পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বী বলে বিবেচিত চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র এ দেশটিকে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে রাখার নানা পদক্ষেপ নিয়ে নতুন করে ভাবার। মিয়ানমারও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন চাইছে। গত সপ্তাহে অপ্রত্যাশিত ৩৬০ কোটি ডলারের একটি বাঁধ নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় মিয়ানমার। চীনের অর্থায়নে বাঁধটির নির্মাণ চলছিল। এ ঘটনায় মিয়ানমার সরকারের তীব্র সমালোচনা করে চীন।
মিয়ানমারের ব্যাপারে সন্দেহ সত্ত্বেও ওবামা প্রশাসন কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে সম্পর্ক উন্নয়নের দিকে হাঁটার উদ্যোগ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে, মিয়ানমারের নতুন সরকার গণতন্ত্র চর্র্চার পাশাপাশি দেশে স্থিতিশীলতা ফেরানো ও অর্থনৈতিক সুযোগ গ্রহণের চেষ্টা করবে। একই সঙ্গে চীনের প্রভাবাধীন এ অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠারও একটি সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। পরিবর্তনের এ উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও অন্যদের কিছুটা ধাঁধায় ফেললেও মিয়ানমারের পক্ষ থেকে সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রবল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে ভঙ্গুর অর্থনীতিকে পুনর্গঠন করতে চাচ্ছে তারা। মিয়ানমারে সম্প্রতি নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত ডেরেক মিশেল এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি বলেন, 'তারা (মিয়ানমার) যেভাবে এগোচ্ছে আমরাও সেভাবেই এগোচ্ছি। তারা ইতিবাচক পদক্ষেপ নিলে আমরাও তাই করব। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করব, সংস্কারের লক্ষ্যে আমরা তাদের সহায়তা দিতে রাজি।' মিশেল গত মাসে পাঁচ দিনের সফরে মিয়ানমার যান। সে সময় তিনি সরকার ও বিরোধী দল, উভয় পক্ষের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এরপর গত সপ্তাহে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ উন্না মং লুইং যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। তিনি নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। দীর্ঘদিন ধরে উনা মং লুইংয়ের আমেরিকা সফরে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়। জান্তা সরকার ক্ষমতা দখলের পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আমন্ত্রণে মিয়ানমারের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন।

No comments

Powered by Blogger.