অনেক নাটকীয়তার পর ২০ গজ দূরে থামল ট্রেন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোড্ডার একটি অবৈধ লেভেলক্রসিং। তাতে আটকা পড়ে আছে মালবাহী ট্রাক। ওদিকে দ্রুতগতিতে ছুটে আসছে যাত্রীবাহী ট্রেন। অবধারিত সংঘর্ষের আশঙ্কায় সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়। এরই মধ্যে সচল হয়ে ওঠেন কয়েকজন। তাঁদের ঐকান্তিক চেষ্টায় অনেক নাটকীয়তা শেষে মাত্র ২০ গজ দূরত্বে থমকে দাঁড়ায় ট্রেনটি। হাঁফ ছেড়ে বাঁচে ট্রেনের দেড় হাজার যাত্রীসহ উপস্থিত লোকজন।
গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টা ৫০ মিনিট। আখাউড়া স্থলবন্দর অভিমুখী পাথর বোঝাই একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট-১৬-১১৫১) আখাউড়া আউটার সিগন্যালের অদূরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোড্ডা এলাকার লেভেলক্রসিং পার হওয়ার সময় আটকে যায়।

ওদিকে প্রায় একই সময়ে লেভেলক্রসিং অভিমুখে ছুটে আসছে মহানগর প্রভাতী ট্রেন। চালক ট্রেন আসতে দেখে ট্রাক ফেলে পালিয়ে যায়। উপস্থিত লোকজন হয়ে পড়ে হতবিহ্বল। এ অবস্থায় অনেকে রেললাইনের ওপর দাঁড়িয়ে যান। কেউ লাল নিশান উড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে চালককে ট্রেনটি থামানোর ইঙ্গিত দিতে থাকে। কেউ কেউ ছুটে যায় মসজিদের জন্য চাঁদা তোলার কাজে ব্যবহৃত মাইকের কাছে। তারা অনবরত মাইকে ট্রেনটি থামানোর আহ্বান জানাতে থাকে। একপর্যায়ে চালক বিষয়টি বুঝতে পেরে ট্রেন থামিয়ে দেন। ট্রেনটি যখন পুরোপুরি গতি হারায় তখন ক্রসিং মাত্র ২০ গজ দূরে।
সড়কপথের যাত্রী ইকবাল বলেন, 'আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাচ্ছিলাম। ট্রেনটি খুব কাছাকাছি চলে আসতে দেখে মসজিদের জন্য চাঁদা তোলার মাইকে বারবার ট্রেনটি থামানোর আহ্বান জানাই। অন্যরা রেললাইনে দাঁড়িয়ে লাল নিশান উড়াতে থাকেন। অবশেষে খুব কাছাকাছি এসে ট্রেনটি থামাতে সক্ষম হন চালক।'
ট্রেনচালক আজম বলেন, 'ডাবল লাইন থেকে সিগন্যাল লাইনে ওঠার উদ্দেশ্যে ট্রেনের গতি কমিয়ে ১০ কিলোমিটারে নামিয়ে আনা হয়েছিল। দূর থেকে লাল নিশান উড়ানো দেখে ট্রেনটি থামাই। তখন ট্রেন থেকে ট্রাকটির দূরত্ব ছিল মাত্র ২০ গজ।'
ট্রেনযাত্রী আবেদ ও স্বাধীন বলেন, 'চিনাইর লেভেলক্রসিং পার হওয়ার পরপরই লোকজনকে ট্রেন থামানোর ইশারা দিতে দেখি। কিন্তু আমরা কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। একপর্যায়ে চালক ট্রেন থামিয়ে দেন। গতি কম না থাকলে হয়তো বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়তে হতো।' এ ঘটনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রেলপথে ট্রেন চলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে একটি পোলার লোডার দিয়ে ট্রাকটি সরিয়ে নেওয়ার পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। আখাউড়া রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার খায়রুল বশির জানান, প্রায় এক ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু হয়। প্রসঙ্গত, রেলওয়ের খাতায় এই লেভেলক্রসিংটি অবৈধ। এখানে কোনো গেটম্যান নেই। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এ লেভেলক্রসিংয়ে 'নিজ দায়িত্বে পারাপারের' একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দায় সেরেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

No comments

Powered by Blogger.