জলাবদ্ধতায় কৃষকের সমস্যা নিষ্কাশনে মাছচাষির বিপদ- ৮ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমি অনাবাদি পাঁচ বছর by কল্যাণ ব্যানার্জি

জলাবদ্ধতার কারণে পাঁচ বছর ধরে অনাবাদি সাতক্ষীরার তিন উপজেলার ৮ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমি। এ জমিতে বোরো চাষের জন্য কৃষকেরা এবার নিজ উদ্যোগে ১২০টি পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন করছেন। এই পানিও কিছু লোকের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়েছে। সেচে ফেলা পানিতে তলিয়ে গেছে তাঁদের বাড়ির আঙিনা ও মাছের ঘের।
সরেজিমনে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ এলাকার নিচু জমি পানিতে তলিয়ে আছে। পানি সরিয়ে দেওয়ার জন্য বেশ কটি সেচযন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। জমির পানি সেচে মানিকনগর খালে ফেলা হচ্ছে। খালের পানি উপচে সিংনাল গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ির আঙিনায় ঢুকছে। ২০টির বেশি চিংড়িঘের তলিয়ে গেছে।
জেলা খামারবাড়ি উপপরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় আমতলা বিলে ১ হাজার ৮৪০ হেক্টর, তালা উপজেলার গোপালপুর ও ইসলামকাতি বিলে ৬ হাজার ৪৪০ হেক্টর ও কলারোয়া উপজেলার মানিকনগর বিলে ৬৫০ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে আছে। বেতনা ও কপোতক্ষ নদ দিয়ে বর্ষার পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় লোকজন বলেছেন, প্রায় চার হাজার কৃষকের জমি আছে এ চারটি বিলে। এসব জমি চার-পাঁচ বছর ধরে চাষ করা যাচ্ছে না।
নারায়ণপুর গ্রামের আবদুল কাদের জানান, আমতলা বিলে তাঁর ১০ বিঘা জমি রয়েছে। পানিতে ডুবে থাকায় গত চার মৌসুম ধরে ওই জমিতে ধান চাষ করতে পারছেন না। ফসল আবাদ করতে না পারায় তিনি অভাবে পড়েছেন। চলতি মৌসুমে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে পানি নিষ্কাশন করে বোরো চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁরা রায়পুর ও আমতলা বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য আটটি সেচপাম্প ব্যবহার করছেন। তাঁদের আশা, ওই এলাকার ১ হাজার ২০০ বিঘা জমির জলাবদ্ধতা দূর করে বোরো আবাদের আওতায় আনতে পারবেন।
কলারোয়া উপজেলার মানিকনগর গ্রামের ফজলুল দফাদার বলেন, মানিকনগর বিলে তাঁর ২৫ বিঘা জমি রয়েছে। পাঁচ-সাত বছর ধরে ওই সব জমিতে আমন চাষ করতে না পেরে তিনি অভাবে আছেন। তিনি বলেন, ২৮ জানুয়ারির মধ্যে পানি নিষ্কাশন করতে না পারলে বোরো আবাদ করাও অসম্ভব হয়ে পড়বে। তখন চাষও করতে পারবেন না, আবার পানি নিষ্কাশনের টাকাও গচ্চা যাবে।
এদিকে সিংনাল গ্রামের আবদুল আজিজের অভিযোগ, পাম্প দিয়ে নিষ্কাশন করায় তাঁদের বাড়ির আঙিনায় পানি থই থই করছে। প্রায় ২৫টি মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। এভাবে পানি সেচা হলে তাঁদের বাড়ি ছাড়তে হবে।
ওই গ্রামের শের আলী, শওকাত মল্লিক, রফিক সানাও একই অভিযোগ করেন। তাঁরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার উপপরিচালক আবদুল গফুর জানান, আমন মৌসুমে কৃষক জলাবদ্ধতার কারণে বিস্তীর্ণ জমিতে চাষ করতে পারেননি। বোরো মৌসুমে পানি সেচে কৃষকেরা প্রায় ২ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আবাদ করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এ কাজে কোনো সাহায্য না করলেও কাজটি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে তিন উপজেলার সাতজন কৃষক বলেছেন, কর্তৃপক্ষ এ কাজে কোনো সাহায্য করছে না, বিষয়টি পর্যবেক্ষণও করছে না।

No comments

Powered by Blogger.