মোটরসাইকেলে সঙ্গী বহনে নিষেধাজ্ঞা

মোটরসাইকেল আরোহী কোন যাত্রী বহন করতে পারবে না নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। চালকের পেছনে কোন যাত্রী থাকলে তাকে নামিয়ে দেবে পুলিশ। গতকাল দুপুরে সরকার হঠাৎ করে এমন নিষেধাজ্ঞা জারি করায় ভোগান্তির শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ। দুপুর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে মোটরসাইকেল আরোহীর পেছনে বহনকারী যাত্রীদের নামিয়ে দেয় পুলিশ। মাঝপথে নামিয়ে দেয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে যাত্রীদের। জানা গেছে, গত বুধবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে মোটরসাইকেলে একাধিক যাত্রী বহনে নিষেধাজ্ঞা জারির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এরপর গতকাল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে সামপ্রতিককালে কিছু দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেল ব্যবহার করে বিভিন্ন যানবাহনে বোমা হামলাসহ ব্যাপক সহিংসতা ও নাশকতা চালাচ্ছে। এ ধরনের নাশকতা ও সহিংসতা রোধে এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৯৮৩ সালের মোটর ভেহিকেলস অধ্যাদেশ এর ৮৮ ধারার ক্ষমতাবলে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত সরকার সারা দেশে মোটরসাইকেলে চালক ব্যতীত অন্য কোন যাত্রী বা সঙ্গী বহন নিষিদ্ধ করল।’ পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, সরকারের নিষেধাজ্ঞা জারির পর সারা দেশের পুলিশ সুপারদেরও এ বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রাজধানী ঢাকার মতো সারা দেশেও বিষয়টি কার্যকর করা হচ্ছে। সরজমিন দেখা গেছে, সরকারের এ নিষেধাজ্ঞার পরপরই ঢাকা মহানগর পুলিশ মোটরসাইকেল থামিয়ে চালক ব্যতীত একাধিক আরোহীকে নামিয়ে দিচ্ছেন। একইসঙ্গে মোটরসাইকেল আরোহীদের তল্লাশিও জোরদার করা হয়েছে। গতকাল বিকালে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় তল্লাশি চৌকি বসায় পুলিশ। এসময় জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে সহকর্মীর মোটরসাইকেলে করে গুলশানস্থ একটি করপোরেট অফিসে যাচ্ছিলেন আরিফ। কিন্তু মাঝপথেই তাকে নামিয়ে দেয় পুলিশ। এতে চরম বিপাকে পড়েন তিনি। এসময় আরিফ বলেন, আমি তো এব্যাপারে কিছু জানি না। কিন্তু পুলিশ আমাকে নামিয়ে দিয়েছে। ওদিকে হাতিরঝিলের রামপুরা ব্রিজ পয়েন্টে তল্লাশি চৌকি বসায় পুলিশ। এসময় মানবকণ্ঠের এক সাংবাদিকের মোটরসাইকেলে করে গুলশান যাচ্ছিলেন আরটিভির সাংবাদিক মন্টু। সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পরও পুলিশ মন্টুকে নামিয়ে দেয়। এসময় মন্টু বলেন, মোটরসাইকেলে দুইজন যাওয়া যাবে না- এটা তো আমি জানি না। এটা সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণ। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি সহিংসতার বিভিন্ন ঘটনা অনুসন্ধান করতে গিয়ে তারা জানতে পেরেছেন- বেশির ভাগ ঘটনাতেই দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করছে। মোটরসাইকেলে চালকের পেছনে থাকা আরোহী দ্রুত ককটেল বা পেট্রলবোমা ছুড়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করছেন। এছাড়া ছুড়ে মারার পর সঙ্গে বোমা জাতীয় কোন কিছু না থাকায় তাদের ধরাও যাচ্ছে না। কোন কোন ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হলেও তাৎক্ষণিক বিষয়টি অস্বীকার করায় তাদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। এছাড়া দুর্বৃত্তরা ককটেল বা পেট্রলবোমা হামলার পর রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলি ধরে পালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি অলিগলিতে পুলিশ মোতায়েন সম্ভব নয় বলে দুর্বৃত্তরা সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে। ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) খান মোহাম্মদ রেজোয়ান জানান, সরকারের আদেশ পাওয়ার পর তারা কোন মোটরসাইকেলে দু’জন থাকলে একজনকে নামিয়ে দিচ্ছেন। এছাড়া মোটরসাইকেল আরোহীদের কাউকে সন্দেহ হলে তাকে তল্লাশি করা  হচ্ছে। একই সঙ্গে নিয়ম অনুযায়ী হেলমেট বা ত্রুটিপূর্ণ কাগজপত্র থাকলে জরিমানা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.