বড় লোকসানের আশঙ্কা বাণিজ্য মেলায় by হামিদ বিশ্বাস

টানা অবোরোধ ও হরতালে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। ইতিমধ্যে মেলার ২২তম দিন কেটে গেছে। এর মধ্যে প্রথম তিন/চারদিন ছাড়া বাকি সব দিনই হরতাল-অবরোধে কেটেছে। এছাড়া প্রথম দিনগুলোতে বিক্রির পরিমাণ ছিল অনেকটাই শূন্য। আর বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতা এতটা বেড়েছে যে জনমনে রীতিমতো ভীতি জমেছে। ফলে আতঙ্কের মধ্যে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি একেবারেই কমে গেছে। এতে মেলার চলতি ২০তম আসরে বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কা করছেন প্যাভিলিয়ন ও স্টল মালিকরা। তবুও শেষ ছুটি শুক্রবার ও শনিবারের প্রতি তাকিয়ে আছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল মেলার বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন ও স্টলে ঘুরে এমন তথ্যই মিলেছে। তারা জানিয়েছেন, প্রতিবছর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয় ছোট-বড় সব মানের ব্যবসায়ীদের লাভ, প্রচার ও প্রসারের জন্য। মাসব্যাপী এ মেলায় যেন সারা বছরের ব্যবসাকে সমতায় রাখতে পারে। কিন্তু এ বছরের মেলায় লাভের বদলে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ ক্ষতিপূরণ থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পাবেন এ প্রশ্নই এখন মেলার বেশিরভাগ ব্যবসায়ীর মুখে মুখে। লোকসানের কারণ হিসেবে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করেছেন অনেকেই। মেলার কয়েকজন স্টল ইনচার্জের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার দর্শনার্থীর একটু ভিড় থাকে। কিন্তু তাদের মধ্যে ক্রেতা সংখ্যা গত বছরের তুলনায় অনেক কম। অন্য দিনগুলোতে আরও খারাপ অবস্থা। এ বিষয়ে ব্রাদার্স ফার্নিচার প্যাভিলিয়নের এসিস্ট্যান্ট মার্কেটিং ম্যানেজার মো. রুহুল আমিন মানবজমিনকে জানান, ঢাকার ক্রেতাকে সব সময় কম-বেশি পেয়ে থাকি। মূলত মেলায় এসেছি সারা দেশের ও ফরেন বায়ারদের জন্য। কিন্তু তা অনেকটাই শূন্য। তিনি বলেন, বিক্রির যে টার্গেট ছিল তা থেকে এখনও ৫০% পিছিয়ে আছি। আড়ং প্যাভিলিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কবির হোসেন খান বলেন, পরিস্থিতি শোচনীয়। অপেক্ষায় আছি শেষ ছুটির দিনগুলোর জন্য। এটাই এখন শেষ সম্বল। আক্তার এন্টারপ্রাইজের ইনচার্জ মো. সেলিম বলেন, দোকান ভাড়া ও স্টাফদের বেতন দিয়ে প্রতিদিন খরচ হয় ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। কিন্তু দিনে ৫০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করতে পারি না। অথচ গত বছরের মেলায় এ সময় প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা বিক্রি হতো। কিয়াম প্যাভিলিয়নের কর্মকর্তা মামুন জানান, শুধু রাজধানীর একাংশ মানুষ মেলায় আসছে। অবরোধের কারণে সাভার, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ থেকে মানুষজন আসতে পারছে না। অথচ তারাই আমাদের মূল ক্রেতা। আতিক ট্রেড স্টলের ইনচার্জ লাভলু বলেন, এবারের মেলায় বিনিয়োগের অর্ধেকও উঠে আসবে না। সারা দিনে বিনিয়োগের টাকার পরিমাণ বিক্রি করতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। লোকজন আসে দেখে আবার চলে যায়।
হাজির বিরিয়ানির বিশাল প্যাভিলিয়নের হেলাল উদ্দিন বেপারী বলেন, আমার দোকানে বাজার, ভাড়াসহ প্রতিদিন খরচ হয় প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু দৈনিক বিরিয়ানি বিক্রি হয় মাত্র ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। গত শুক্রবার বিক্রি হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। সব হিসাব করলে এবার আমাদের মাথায় হাত। দেশের সার্বিক পরিস্থিত যাতে ভাল হয় সে জন্য দু’পক্ষকে (সরকার ও বিরোধী দল) সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মেলার শেষ হওয়ার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। যদি এখনও দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ঠিক হয় তাহলে অন্তত বড় ধরনের লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে পারি। সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে অ্যালুমিনিয়াম ফার্নিচার স্টলের ইনচার্জ মাহবুব জানান, মেলায় সরকারের তো কোন ক্ষতি নেই। সরকার ঠিকই জায়গার ভাড়া নিচ্ছে। ট্যাক্সও দিচ্ছি। যা ক্ষতি সব আমাদের। কিন্তু আমরা কি দোষ করেছি। কবে যে এ অস্থিরতা ঠিক হবে তা-ও জানি না। হরতাল-অবরোধের কারণে শুধু মেলার নয়, দেশের আমদানি-রপ্তানি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অভ্যন্তরীণ খাত, বীমা, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ও সেবাখাতসহ সবকিছুর প্রবৃদ্ধি নিচের দিকে নামছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভবিষ্যতে দেশের এ ক্ষতিগুলো বড় অংকের ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলেও মন্তব্য করেন মেলায় বিনিয়োগকারীরা। একইসঙ্গে আদৌ দেশের অবস্থা স্থিতিশীল হবে কিনা এমন আশঙ্কাতেও ভুগছেন তারা।

No comments

Powered by Blogger.