শঙ্কায় বরিশালের ৭১ হাজার এসএসসি পরীক্ষার্থী

জেএসসি উত্তীর্ণ  হয়ে মাধ্যমিকে ভাল ফলাফল করার জন্য দুই বছর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেছি। আর ওই পরিশ্রমের ফল পাওয়ার জন্য এসএসসি পরীক্ষায় অংশ  নেবো। পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছি দিনরাত পরিশ্রম করে। কিন্তু সবকিছুই মনে হয় ভেস্তে যাবে। কারণ সুস্থ ভাবে পরীক্ষা দিতে পারব কিনা তার নিরাপত্তা কেউই দিতে পারছে না। ঘর থেকে বেরুলেই এখন মৃত্যুর প্রহর গুনতে হয়। সবসমযই চিন্তা  পেট্রল বোমার আঘাতে এই বুঝি প্রাণটা গেলো। তাই পরীক্ষা আদৌ দিতে পারব  কিনা তাও একরকম সন্দিহান। অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গেই কথাগুলো বলেন সদর উপজেলার চরবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী লুনা অক্তার। তিনি বলেন অবরোধ-হরতাল যাদের জন্য তারা করুক, তাতে অপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের জীবনের নিরাপত্তা দিয়ে যেন পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয় এ দাবি সরকার ও অবরোধ সমর্থকদের প্রতি। একইভাবে ক্ষোভ আর আবেগে নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ চাইলেন নগরীর মহাবাজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, বর্ধিত ওয়ার্ডের বাসিন্দা হওয়ায় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে গিয়ে তাদের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। আর এটা কোনদিনই পায়ে হেঁটে যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এ অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা হলেও গাড়ি চেপে যে যাবেন সে সাহসও পাচ্ছেন না। তাই পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে আতঙ্ক দূর করে যাতে পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করা হয়  এ দাবি জানান।
কেবল লুনা আর আরেফিন সিদ্দিকই নয়  বরিশাল শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া প্রায় ৭১ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যেই শঙ্কা  তারা আদৌ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে কিনা? আর কেবল শিক্ষার্থীরাই নয় তাদের নিয়ে অভিভাবকরাও রয়েছেন চরম আতঙ্কে। কারণ  হরতাল আর অবেরোধ বন্ধ না করে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হলে তাদের সন্তানরা সুস্থ শরীরে পরীক্ষা দিতে পারবে এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না।
তৈয়ব আলী মুনসী নামে এক অভিভাবক বলেন, তার মেয়ে গ্রামের স্কুলে লেখাপড়া করে। সেখান থেকেই এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ  করবে। পরীক্ষার প্রস্তুতি অনেক ভাল। কিন্তু সমস্যা হলো বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি। কারণ তার মেয়ের এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র তাদের বাড়ি থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে। আর ওই পথ গাড়িতে করেই আসতে হবে। যদি অবরোধকারীরা ওই গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে তাহলে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যাবে। তাই সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে পরীক্ষা নেয়া উচিত। বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবা হোসেন বলেন, জেএসসির পরে এসএসসিতে ভাল ফলাফল করার জন্য শিক্ষার্থীরা কঠোর পরিশ্রম করেছে। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে তাদের মধ্যে আতঙ্ক ঢুকে গেছে। এখন এ আতঙ্ক দূর করা না গেলে ভালভাবে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। তাই সরকার, বিরোধী দল ও আন্দোলনকারীদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে এসএসসি পরীক্ষার জন্য হলেও এ সংঘাত বন্ধ করা উচিৎ। অন্যথায় দেশের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে। বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়াউল হক বলেন, এসএসসি পরীক্ষার সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সকল কেন্দ্রে পরীক্ষার খাতাপত্র পৌঁছে গেছে। এখন পরীক্ষা অনুষ্ঠানের অপেক্ষা। তবে অবরোধের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। অবরোধকারীরা এসএসসি পরীক্ষার বিষয়টি লক্ষ্য রেখে পরীক্ষা চলাকালীন অবরোধ তুলে নেবে অথবা শিথিল করবে। কারণ এটা তাদের সন্তানদেরও ভবিষ্যতের বিষয়।

No comments

Powered by Blogger.