ইয়েমেন সংকট- চুক্তি সত্ত্বেও সরছে না বিদ্রোহীরা

ইয়েমেনে চলমান রাজনৈতিক সংকটের ইতি ঘটাতে প্রেসিডেন্ট ও শিয়াপন্থী হুতি বিদ্রোহীদের মধ্যে গত বুধবার একটি চুক্তি হয়েছে। এর পরও রাজধানী সানাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে বিদ্রোহীরা। তারা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদসহ বিভিন্ন সরকারি ভবনের বাইরে যোদ্ধাদের মোতায়েন অব্যাহত রেখেছে। খবর এএফপি ও আল-জাজিরার। প্রেসিডেন্ট আবদুরাবুহ মানসুর হাদির অপহৃত চিফ অব স্টাফ আহমেদ আবদ বিন মোবারক এখনো হুতি বিদ্রোহীদের হাতে রয়েছেন। বিদ্রোহীরা গত সেপ্টেম্বর মাসে তাদের শক্ত ঘাঁটি দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে সানা ও বিভিন্ন সুন্নি অধ্যুষিত এলাকা দখল করার পর থেকেই মূলত সংকটপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ইয়েমেন। ঐক্যের সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করবে, এমন শর্তে তখন হুতিরা অস্ত্রবিরতিতে রাজি হয়েছিল। অস্ত্রবিরতির শর্ত অনুযায়ী মিলিশিয়ারা সব এলাকা থেকে সরে যেতে সম্মত হলেও সানার অনেক এলাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে। দেশের বিতর্কিত খসড়া সংবিধান নিয়ে চলতি সপ্তাহে হুতি বিদ্রোহীরা আবার সানায় সক্রিয় হয়। ওই সংবিধানে দেশকে ছয়টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করার কথা বলা আছে। হুতিদের ভাষ্য, এ পদক্ষেপ দেশকে ধনী ও দরিদ্র অঞ্চলে বিভক্ত করে ফেলবে। গত সোমবার সানায় সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের রক্তক্ষয়ী লড়াই শুরু হয়। দুই দিনের মধ্যেই বিদ্রোহীরা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদসহ বিভিন্ন সরকারি ভবনের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। গত বুধবার স্বাক্ষরিত নয় দফা চুক্তি অনুযায়ী বিদ্রোহীরা বিভিন্ন সরকারি ভবন থেকে যোদ্ধাদের সরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বিতর্কিত খসড়া সংবিধানে সরকার বিভিন্ন বিষয়ে ছাড় দেবে, এমন শর্তে তারা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদসহ প্রেসিডেন্ট হাদি ও প্রধানমন্ত্রী খালিদ বাহাহর বিভিন্ন বাসভবনের বাইরে থেকে যোদ্ধাদের প্রত্যাহার, প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ মোবারককে মুক্তি ও সানার বিভিন্ন তল্লাশিচৌকি থেকে মিলিশিয়াদের সরিয়ে নিতে রাজি হয়। এককথায় হুতিরা সানার পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ করার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট হাদির সঙ্গে একমত হয়েছে। লোকজনকে স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরতে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালু করার আহ্বান জানিয়েছে তারা। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালেও ওই চুক্তির শর্তগুলো বাস্তবায়নের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। প্রেসিডেন্টের দপ্তরের একজন কর্মকর্তা গতকাল সকালে বলেন, ‘মোবারককে এই সময়ের মধ্যেই ছেড়ে দেওয়ার আশা করা হচ্ছিল। তবে এখনো তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়নি।’ আর সানায় অবস্থানকারী একজন সাংবাদিক জানান, হুতিরা এখনো সর্বশক্তি নিয়ে সানায় রয়েছে। প্রেসিডেন্ট হাদির বাসভবনের চারপাশে বিদ্রোহী যোদ্ধাদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। এমনকি সেখান থেকে আধা মাইল দূরে অবস্থিত গোয়েন্দা সদর দপ্তরের দিকে যোদ্ধাদের অবস্থান সম্প্রসারিত করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বাহাহর বাসভবনের তিনটি প্রবেশদ্বারের মধ্যে একটি এখনো অবরুদ্ধ করে রেখেছে বিদ্রোহী যোদ্ধারা। তবে গতকাল প্রধানমন্ত্রী বাহাহর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। দুই দিন অবরুদ্ধ করে রাখার পর গত বুধবার তাঁকে বাসভবন থেকে বের হওয়ার সুযোগ দেয় হুতি মিলিশিয়ারা।

No comments

Powered by Blogger.