বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় ঘেরাও

আমরা সাধারণ মানুষ। কাজ করলে খাওয়া জুটে। না করলে খালি পেটে থাকতে হয়। অব্যাহত অবরোধে কাজ পাচ্ছি না। এতে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। দেশ বিধ্বংসী অবরোধ প্রত্যাহার না করলে বিএনপি চেয়ারপারসনের অফিস উচ্ছেদ করা হবে। গতকাল দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট নেতা বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের অফিসের প্রায় ১০০ গজ দূরে দু’টি লাল ব্যানার নিয়ে ‘খেটে খাওয়া নগরবাসী’ নামে দিনমজুরদের একটি সংগঠনের প্রায় ৭০ জন নেতাকর্মী বিক্ষোভ সমাবেশে এ সব কথা বলেন। এ সময় তাদের হাতে কোদাল ও ডালি ছিল। তারা খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে বাগ্‌বিতন্ডা হয়। এ সময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে জুতা এবং ডিম নিক্ষেপ করেন। দুপুর ১২টা থেকে ১ ঘণ্টা তারা কার্যালয়ের এক শ’ গজ দূরে গুলশান মডেল স্কুলের সামনে অবস্থান নেন। পরে পুলিশের অনুরোধে তারা সেখান থেকে চলে যান। খেটে খাওয়া নগরবাসীর এই কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মীদেরও দেখা গেছে। কর্মসূচি পালনের সময় বেগম খালেদা জিয়া তার গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। সরেজমিন ঘুরে ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় জানা গেছে, বিক্ষোভকারীদের হাতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ছিল। এসব প্ল্যাকার্ডে ‘মানুষ পোড়ানো বন্ধ করুন’, ‘আমার পরিবারের সদস্যদের মারবেন না’, ‘ভাত দে নইলে অবরোধ তুলে নে’, ‘আমি কাজে যেতে চাই’, লেখা ছিল। রবিউল ইসলাম নামের এক নির্মাণ শ্রমিক জানান, আমরা গরিব। কোন দল করি না। রাজনীতিও বুঝি না। গত ২০ দিন ধরে অবরোধ চলার কারণে আমরা কোন কাজ পাচ্ছি না। বিএনপি চেয়ারপারসন বিনা কারণে অবরোধ ডেকে বসে আছেন। তিনি বলেন, এই অবরোধ সাধারণ মানুষ মানে না। আরেক নির্মাণ শ্রমিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এখন হিংসাত্মক কর্মসূচি দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া সরকার পতনের ডাক দিয়েছেন। আরেক শ্রমিক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খালেদা জিয়া সারা দেশকে অবরুদ্ধ করে ফেলেছেন। শ্রমিকরা তাদের কাজে যেতে পারছেন না। ছাত্ররা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছে না। ব্যবসা-বাণিজ্যও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না। শ্রমিক ইমদাদুল হক বলেন, মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এজন্য দায়ী হচ্ছে খালেদা জিয়া। দরকার হলে খালেদা জিয়ার অফিসকে গুঁড়িয়ে ফেলা হবে। এ বিষয়ে গুলশান জোনের পুলিশের এডিসি মোক্তারুজ্জামান বলেন, ‘খালেদা জিয়ার অফিস ঘেরাও করা হবে এমন তথ্য আমাদের কাছে ছিল। এজন্য সকাল থেকে গুলশান-২ নম্বরের মোড়সহ খালেদার অফিস এবং বাড়িগামী রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। তিনি বলেন, নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নাশকতা এড়াতে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, আর্মড পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা তৎপর ছিল।
শ্রমিক লীগের কর্মসূচিতে বাধা: এদিকে কথিত খেটে খাওয়া দিনমজুররা খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের কাছাকাটি পৌঁছাতে পারলেও পরিবহন শ্রমিক লীগ, মুক্তিযোদ্ধ প্রজন্ম লীগ, গার্মেন্ট শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ঢাকা মহানগর ইউনিটসহ বেশকিছু সংগঠনের কয়েকশ’ নেতাকর্মী গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বর থেকে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয় ঘেরাওয়ের উদ্দেশে অগ্রসর হলে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। একপর্যায়ে সংগঠনের নেতাকর্মীরা সেখানেই অবস্থান নিয়ে মিছিল ও সমাবেশ করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে। সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইনসুর আলী বলেন, আগামী ২৪শে জানুয়ারির মধ্যে খালেদা জিয়া অবরোধ প্রত্যাহার না করলে তার গ্রেপ্তার দাবিতে ২৫শে জানুয়ারি সকল পেশার শ্রমিকদের নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণঅনশন কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে শ্রমিক লীগের ব্যানারে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি থাকলেও জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় কোন নেতাকে দেখা যায়নি।

No comments

Powered by Blogger.