বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলায়নি -হাউস অব কমন্সের বিশ্লেষণ

গত বছর অনুষ্ঠিত তুমুল বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে যে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, ওই নির্বাচনের বছর পূর্তিতে বর্তমানে দেশটিতে একই অবস্থা বিরাজ করছে। ব্রিটিশ এমপিদের জন্য হাউস অব কমন্সের তৈরি করা বাংলাদেশসংক্রান্ত ‘পলিটিক্যাল ক্রাইসিস ইন বাংলাদেশ: জানুয়ারি ২০১৫ আপডেট’ শীর্ষক এক বিশ্লেষণে বর্তমান পরিস্থিতিকে এভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সাংসদদের জন্য প্রস্তুত করা হালনাগাদ এসব তথ্য ‘স্ট্যান্ডার্ড নোট’ হিসেবে পরিচিত। গত বুধবার প্রকাশিত ওই বিশ্লেষণে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের হালনাগাদ পরিস্থিতি তুলে ধরে বলা হয়েছে, বিতর্কিত নির্বাচনের দিনটিকে (৫ জানুয়ারি) বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ‘গণতন্ত্রের হত্যা দিবস’ ঘোষণা দিয়ে ঢাকায় সমাবেশের ডাক দেন। জবাবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনার সরকার সকল প্রকার সমাবেশ নিষিদ্ধ করে এবং খালেদা জিয়াকে তাঁর কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ এখনো বলবৎ রয়েছে এবং সহিংসতায় প্রাণহানি ঘটছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বর্তমান পরিস্থিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে সহিংসতার পথ পরিহার করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। বিশ্লেষণে বলা হয়, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং সেনাবাহিনীর পাল্টাপাল্টি ক্ষমতায় আসার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামী লীগের প্রতি বিরূপ সেনাবাহিনী সব সময়ই রাজনীতিক ভূমিকা পালন করেছে এবং রাজনৈতিক সহিংস পরিস্থিতি নিরসনে তারা সময় সময় ‘সার্কিট ব্রেকার’ হিসেবে কাজ করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া আবারো সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন—এমনটি কেউ কেউ মনে করলেও সেনাবাহিনী সে রকম কিছু করবে তা এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।
এতে বলা হয়, দীর্ঘ দুই বছর সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের নিরঙ্কুশ বিজয়ে অনেকে আশা করেছিলেন বাংলাদেশ হয়তো তার রাজনৈতিক অতীত থেকে বেরিয়ে আসবে। কিন্তু ‘বেটলিং বেগম’ হিসেবে পরিচিত দুই নেত্রীর পরস্পরবিরোধী অনড় মনোভাবের কারণে সে সুযোগ নষ্ট হয়েছে। বাকস্বাধীনতার বিষয়ে সমালোচকদের উদ্বেগ রয়েছে উল্লেখ করে বিশ্লেষণে বলা হয়, ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের সাজা, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারের পরপরই একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার এবং তারেকের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞাসহ গত বছর সরকারের নেওয়া গণমাধ্যম-সংক্রান্ত নীতিমালাগুলো নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার-প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে দেশ-বিদেশে যে প্রশ্ন রয়েছে সে বিষয়টিও পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার বিচার এখনো শুরু না হলেও গত নভেম্বর মাসে ওই মামলাকে চ্যালেঞ্জ করা সর্বশেষ আবেদনটিও খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। হাউস অব কমন্সের এই পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক রাজনীতির ক্ষেত্রে বারবার অবস্থান পরিবর্তনের অভিযোগ রয়েছে। তবে গণতন্ত্রের প্রতি খালেদা জিয়ার প্রতিশ্রুতিও প্রশ্নাতীত নয়। বিএনপি এবং জামায়াত নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। গত বছরের নির্বাচনের আগে আগে শেখ হাসিনা মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করলেও গত এক বছরে তাঁর বক্তব্যে সেই মনোভাব প্রদর্শিত হয়নি। দাতা দেশগুলো গত বছরের নির্বাচনকে সমর্থন না দিলেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ এখনো করেনি। রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সহিংস পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ভালো করছে বলে বিশ্লেষণে মন্তব্য করা হয়। সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সামাজিক উন্ননের ক্ষেত্রে ভালো অগ্রগতি অর্জন করেছে বলে উপসংহার টানা হয় ব্রিটিশ সংসদের এই পর্যবেক্ষণে।

No comments

Powered by Blogger.