‘বিএনপির সফলতা বার্ন ইউনিটের আহাজারি’

দেশব্যাপী চলমান নাশকতা, নৈরাজ্য ও সন্ত্রাস বন্ধের জন্য বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। সংগঠনের নেতারা বলেছেন, বিএনপি বলছে তাদের আন্দোলন সফল। এই সফলতা মানে বার্ন ইউনিটে মানুষের আহাজারি। অচিরেই এই নৈরাজ্য বন্ধ না হলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। আজ শুক্রবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ কর্মসূচি থেকে এ আহ্বান জানানো হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। তিনি বলেন, ‘বিএনপি–জামায়াত জোট গণতন্ত্রের নামে আজ মানুষ হত্যার উৎসবে নেমেছে। তারা আজ মানুষ পুড়িয়ে, বাসে আগুন দিয়ে নাশকতা শুরু করেছে। আমরা এই নাশকতার তীব্র নিন্দা জানাই।’
গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘৭১–এ জামায়াত তাণ্ডব চালিয়েছে পিডিপি-মুসলিম লীগকে সঙ্গে নিয়ে। আর আজকে তারা একই কাজ করছে বিএনপিসহ ২০-দলকে নিয়ে। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর নামগুলো খালি বদল হয়েছে কিন্তু তাদের সেই সহিংসতা বন্ধ হয়নি।’ দেশের সব জেলায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কর্মসূচি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ২৭ জানুয়ারি বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসে নিহত লোকজনের স্মরণে দেশের সব জেলা-উপজেলার শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বালন করা হবে জানিয়ে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘ওই দিন আমরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শপথ নেব।’
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক বলেন, ‘কোনো একটি রাজনৈতিক দলের একার পক্ষে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। আমাদের সবাইকে এই সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
নাট্যকার রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘আজকে যারা অবরোধ করছেন তারা বার্ন ইউনিটে যান, দেখেন আপনাদের আন্দোলনের সফলতা। এভাবে দেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব চলতে পারে না। এটি বন্ধ করতে হবে। তবে কেবল সরকারের পক্ষে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, এ জন্য জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে।’
শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, যারা চিন্তা চেতনায় এ দেশের নয়, তারাই আজকে সন্ত্রাস করছে। তারাই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের নামে লাখ লাখ মানুষকে জিম্মি করেছে। ঐক্যবদ্ধভাবে এই অপশক্তিকে প্রতিরোধ করতে হবে ।
অভিনেতা ইনামুল হক বলেন, ‘একাত্তরের যারা পরাজিত শক্তি তারাই আজকে মানবতা লুণ্ঠন করছে। আমাদের সেই মানবতা রক্ষা করতে হবে।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি নাট্যকার নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘পেট্রলবোমায় মায়ের বুক খালি হয়ে যাবে, এমন দেশ তো আমরা চাইনি। সরকারের কাছে অনুরোধ, কঠোর হাতে পরিস্থিতি দমন করুন।’ জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ বলেন, ‘২০১৩ সালেও আমরা প্রতিরোধ গড়েছিলাম। এই বাংলাদেশ পিছু হটতে জানে না। যারা আজকে সন্ত্রাস করছে, তাদের সমূলে নির্মূল করা হবে। এ জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে এক হতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন নাট্যকার আতাউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব কামরুল হাসান, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ঝুনা চৌধুরী, পথনাটক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, গণসংগীত শিল্পী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ফকির আলমগীর, নাট্যশিল্পী সংসদের যুগ্ম সম্পাদক নাদের চৌধুরী, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সহসভাপতি বেলায়েত হোসেন প্রমুখ।
বেলা তিনটা থেকে শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠান সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত অবধি চলে। আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে দেশের গান ও আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচি, ক্রান্তি শিল্পগোষ্ঠী, সংহতিসহ আরো কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা। অনুষ্ঠানে গত কয়েক দিনের সহিংসতায় নিহত লোকজনের স্মরণে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.