‘মেয়েদের জন্যে বাঁইচপার চাই’ -রংপুর মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে কাতরাচ্ছেন দগ্ধ আনিছ

(দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে পেট্রলবোমায় দগ্ধ ট্রাকচালক মো. আনিছ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে কাতরাচ্ছেন। তাঁর অবস্থা দেখে বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছেন স্ত্রী ও স্বজনেরা l ছবি: প্রথম আলো) ‘ট্রাক চালায়ে জীবন চলে। আমরা কী দোষ করছি। এভাবে পেট্রলবোমা দিয়া গরিব মানুষোক মারলো কেন? কার কাছে বিচার চাব। বিচার চায়য়া লাভ কী? মেয়েদের জন্যে আমি বাঁইচপার চাই।’
কথাগুলো রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সিংগিয়া গ্রামের ট্রাকচালক রফিকুল ইসলামের (৪৫)। গত বুধবার রাতে দিনাজপুরের কাহারোলের ভাতগাঁও সেতু এলাকায় ট্রাকে ছোড়া পেট্রলবোমায় তিনি অগ্নিদগ্ধ হন। রফিকুলের মতোই আরও দুজন পোড়া শরীর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন বার্ন ইউনিটে। বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছেন তাঁরা। ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত এসব মানুষ এখন কার কাছে বিচার চাইবেন, সেটাই জানেন না। বুধবার রাতে দিনাজপুরের কাহারোলের ভাতগাঁও সেতু ও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট এলাকায় দুটি ট্রাকে দুর্বৃত্তরা পেট্রলবোমা ছুড়লে দুজন ট্রাকচালকসহ তিনজন অগ্নিদগ্ধ হন। অগ্নিদগ্ধ অন্য দুজন হলেন নীলফামারী সদর উপজেলার রামগঞ্জ বাজার এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবদুল মালেক (৫০)। তিনি রফিকুল ইসলামের ট্রাকে করে বিশ্ব ইজতেমা থেকে ফিরছিলেন। আর দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের পশ্চিম নয়াপাড়া গ্রামের ট্রাকচালক মো. আনিছ (২৬)। বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন আছেন আবদুল মালেক। কথা বলার শক্তি নেই তাঁর। মুখ, দুই হাত ও বুক আগুনে দগ্ধ হয়েছে। চিকিৎসক বলেছেন, শরীরে ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে তাঁর। মালেকের স্ত্রী মমতা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘হামার স্বামীর এই অবস্থায় তিন ছেলে আর দুই মেয়ে নিয়া বাঁচি থাকমো কেমন করি? কার কাছোত বিচার চাই? আল্লায় ওমারগুলার বিচার করবে।’
পণ্যের ট্রাক নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে ঘোড়াঘাট বাসস্ট্যান্ডের কাছে পেট্রলবোমা হামলায় মুখ, হাতসহ শরীরের ওপরের অংশের বেশির ভাগটাই পুড়ে যায় আনিছের। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গায়ে আগুন লাগে তাঁর। যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচার জন্য রাস্তায় গড়াগড়ি দিয়েছিলেন, কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। কথা বলতে বলতে একসময় নিস্তেজ হয়ে যান তিনি। পাশে থাকা মা নাজমা বেগম বলেন, ‘হামার ছাওয়াতো কারো রাজনীতি করে না। হামার ছাওয়াক কেনে আগুন দেলে? এলা হামরা কী খামো?’ হাসপাতালের পরিচালক আবদুল কাদের খান বলেন, চিকিৎসার সব ব্যয়ভার হাসপাতালের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। দগ্ধ রোগীদের সেবা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে।

No comments

Powered by Blogger.