সংসদে খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা

অবরোধে মানুষ হত্যার অভিযোগ এনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কঠোর  সমালোচনা করা হয়েছে। গতকাল সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের এমপিরা পয়েন্ট অব অর্ডারে বলেন, জনগণের জীবন রক্ষায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতেই হবে, এক্ষেত্রে কোন দয়া-মায়ার সুযোগ নেই। একজন অপরাধীর (খালেদা জিয়া) স্থান কোন কার্যালয় বা অন্য কোথাও নয়, একমাত্র স্থান হচ্ছে জেলখানা। আর খালেদা জিয়া যে সহিংস ও নিষ্ঠুর পথে হাঁটছেন, সেই পথেই একদিন তিনি নিঃশেষ হয়ে যাবেন। জনবিচ্ছিন্ন খালেদা জিয়া আজ দেশের ১৬ কোটি জনগণকে অবরোধ করেছেন, জনগণকে মুক্তিপণ হিসেবে ব্যবহার করছেন। জনসমর্থনহীন সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের দিয়ে খালেদা কোনদিন কোনকিছু আদায় করতে পারবে না। আগেও খালেদা জিয়া পরাজিত হয়েছেন, এবারও হবেন। আগামী সাত দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলেও দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
মাগরিবের নামাজের বিরতির পর অনির্ধারিত এ বিতর্কের সূত্রপাত করেন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। এতে অংশ নেন সরকারি দলের আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবদুল মতিন খসরু, জাহাঙ্গীর কবির নানক, বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, কাজী ফিরোজ রশিদ, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম প্রমুখ। প্রশ্নোত্তর পর্বেও বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংস রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব ছিলেন সংসদ সদস্যরা। হাজী মোহাম্মদ সেলিম অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসার সহযোগিতায় এক মাসের বেতন দেয়ার প্রস্তাব করলে আমির হোসেন আমুসহ অন্যরা সমর্থন জানান। আমির হোসেন আমু বলেন, খালেদা জিয়া জঘন্য জিঘাংসামূলক রাজনীতি শুরু করেছেন। সরকারকে পতনের জন্য নয়, যেহেতু আন্দোলনে সমর্থন পাননি সেই কারণে জনগণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন খালেদা জিয়া। তাই প্রতিহিংসামূলকভাবে সাধারণ মানুষকে হত্যা করছেন। এত মানুষ মারলেন, কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া এতটুকুও দুঃখবোধ বা সমবেদনা প্রকাশ করলেন না, একটি কথাও বলেননি। কারণ, তিনিই নির্দেশ দিয়ে মানুষ হত্যা করছেন। দেশকে পাকিস্তানের মতো অকার্যকর দেশে পরিণত করার ষড়যন্ত্রে নেমেছেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ারা যে ইসলামপন্থি নয়, ইসলাম বিরোধী তা প্রমাণ করেছেন। ইসলামিক দলগুলোর প্রতি প্রশ্ন- যারা বিশ্ব ইজতেমায় বাধা দিল, নবী করিম (সা.) জন্ম দিবসে বাধা দিল- সেই খালেদা জিয়াদের বিরুদ্ধে তাদের কোন কথা নেই কেন? কিছু না পাওয়ার গাত্রদাহ থেকে খালেদা জিয়া দেশের বিরুদ্ধে অগ্নিদাহ করছেন। তোফায়েল আহমেদ বোমা হামলায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া অভির ঘটনা তুলে ধরে আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, কি নিষ্ঠুর খালেদা জিয়া? এটা কি রাজনীতি? খালেদা জিয়াও তো মা।
তিনি এমন নিষ্ঠুরভাবে অন্য মায়ের কোল খালি করছেন? তিনি বলেন, এ পর্যন্ত হাতেনাতে যারা ধরা পড়েছে তারা সবাই বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার। ছাত্রদলের এক সভাপতি বাসায় বোমা মারতে গিয়ে বিস্ফেরণে মারা গেছে। অথচ কি অসত্যবাদী রাজনৈতিক নেতা খালেদা জিয়া, বলে সরকার নাকি করছে! তিনি বলেন, নির্বাচন বানচাল করে খালেদা জিয়া অগণতান্ত্রিক সরকার আনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি, পরাজিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ’৮০ সালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করা আমাদের বড় রাজনৈতিক ভুল ছিল। যুগপৎ আন্দোলন না করলে আজ বিএনপিকে খুঁজে পাওয়া যেত না। খালেদা জিয়া আজ যে পথে হাঁটছেন, সেই পথেই তিনি শেষ হয়ে যাবেন। আগেও খালেদা জিয়া পরাজিত হয়েছেন, আগামীতেও হবেন।
আগামী ৭ দিনের মধ্যে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী করে কেউ কোন দাবি আদায় করা যেত, তবে পৃথিবীতে রাজনীতি থাকতো না। খালেদা জিয়া আরও মায়ের কোল খালি করতে পারেন, কিন্তু কিছু পাবেন না। একদিন জনগণের কাছে অবশ্যই কৈফিয়ত দিতে হবে। এটা রাজনীতি নয়, জঙ্গি-সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কাজ। তিনি বলেন, দেশের কোথাও হরতাল-অবরোধ হচ্ছে না। অরাজকতা-সন্ত্রাস চালিয়ে খালেদা জিয়া একটি ম্যাসেজ দিতে পেরেছেন যে, বাংলাদেশের অবস্থা ভাল নয়। খালেদা জিয়াকে সহিংস অবস্থা থেকে ফিরতে হবে। সারা দেশে দাবি উঠেছে- খালেদা জিয়াকে আইনের আওতায় আনতে হবে। রাস্তায় বিএনপির কোন নেতা-কর্মী নেই, কিছু সন্ত্রাসী আর ভাড়া করা লোকদের মাঠে নামিয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা সত্যের জন্য লড়াই করছি।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, গোটা বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত। একপক্ষ শান্তির পক্ষে, অন্যপক্ষ সন্ত্রাসনির্ভর। কিন্তু সন্ত্রাস ও গণতন্ত্রে একসঙ্গে বাস করতে পারে না। খালেদা জিয়া এখন জঙ্গি নেতা মোল্লা ওমরের মতো বাংলাদেশের নেতা হয়েছেন। নাশকতা-সহিংসতা-সন্ত্রাসের কাছে দেশের গণতন্ত্র বন্দি হয়ে যাবে? সন্ত্রাসীর নেত্রী খালেদা জিয়ার কাছে বন্দি হয়ে থাকবে? এটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারকে জনগণের নিরাপত্তা দিতে হবে। এ জন্য যারা অপরাধী তাদের দৃঢ়হস্তে দমন করতে হবে। কোন দয়া-মায়া দেখালে চলবে না। গণতন্ত্র ও সংবিধানকে অতীতেও সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি হতে দিইনি, আগামীতেও দেব না। দেশের মানুষ আজ সন্ত্রাস-নাশকতা-খুনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ। খালেদা জিয়া রাষ্ট্রের ও জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তি-গণতন্ত্র-আইনের শাসনের পক্ষে। অন্যজন খালেদা জিয়া সন্ত্রাস-নাশকতা চালাচ্ছেন। তাই অবশ্যই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। অপরাধীর স্থান কোন কার্যালয় বা অন্য কোথাও নয়, একমাত্র স্থান জেলখানায়। খুনিদের সঙ্গে কিসের সংলাপ? স্বাধীনতা বিরোধীদের সঙ্গে বিশ্বের কোথাও কোনদিন সংলাপ হয়নি, বাংলাদেশেও হবে না।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, দেশে রাজনৈতিক সঙ্কট নয়, মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ চলছে। খালেদা জিয়া জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ নন, দেশের ১৬ কোটি জনগণকে অবরুদ্ধ করেছেন, দেশের জনগণকে মুক্তিপণ হিসেবে ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, মানুষ পুড়িয়ে মানুষ মারা কি আন্দোলন হতে পারে? রাস্তায় বোমাবাজি করে, সন্ত্রাস করে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা কখনও রাজনৈতিক সংস্কৃতি হতে পারে না। জনগণকে সম্পৃক্ত করে অহিংস রাজনীতিই দাবি আদায় হয়, নৈরাজ্য-নাশকতা বা সন্ত্রাস চালিয়ে নয়। তিনি বলেন, জনগণ আজ পুড়ে মরছে, মানুষ আর্তনাদ করছে- এর সমাধানটা কোথায়? জনগণের জানমাল রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। এ দায়িত্ব পালনে সরকারকে আরও কঠোর হতে হয়, হতে হবে। কেননা সন্ত্রাস সমাজ ও গণতন্ত্রের শত্রু। সরকারকে এখনই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না। সরকারি দলের শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতির নামে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হতে পারে না। বাংলাদেশ ৩০ লাখ জীবনের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতা-গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে তালেবানি শাসনে কেউ পরিণত করবে- তা হতে দেয়া হবে না। কোন বিবেকবান মানুষ ছোট শিশু, দিনমজুর, ট্রাকচালককে নৃশংসভাবে হত্যা করতে পারে না।
খালেদা জিয়ার বক্তব্যেই প্রমাণ হয়েছে বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে জঙ্গি-সন্ত্রাস চালাচ্ছে তা তালেবান-আল কায়েদার সঙ্গেই তুলনা করা যায়। তিনি বলেন, তালেবান-আল কায়েদার সঙ্গে খালেদা জিয়ার কোন তফাৎ নেই। খালেদা জিয়া চান বাংলাদেশ যেন কোনভাবেই এগিয়ে আসতে না পারে। দেশবাসীকে একাত্তরের মতো প্রতি পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। খালেদা জিয়া আইনের ঊর্ধ্বে নন। বিএনপি কার্যালয় থেকে খালেদা জিয়া মানুষ মারা নির্দেশ যদি দিতেই থাকেন, তবে বিক্ষুব্ধ জনগণ প্রকাশ্য দিবালোকে তাকে ওই কার্যালয় থেকে বের করে এনে বিচার করবে। বাংলাদেশকে তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত হতে দেবে না জনগণ। জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, বিচার কে করবে? সাধারণ মানুষরা সরকারে যেতে চায় না, গদির জন্য লড়াই করে না।
বার্ণ ইউনিটে কিভাবে দু’বছরের শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। এক নেত্রী বাংলাদেশকে আফগানিস্তান বানাতে চান, আরেক নেত্রী শুধু চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে চান। এটা হতে পারে না। তিনি বলেন, রাজপথে কোন লোক নামে না, কতিপয় বোমাবাজরা বোমা মেরে মানুষ খুন করবে- এটা হতে পারে না। আমরা আর কত জানাজায় অংশ নেব? সরকার যদি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারে তবে ইতিহাসের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। স্বাধীন দেশে বিনা কারণে-অজুহাতে মানুষ জীবন দেবে, এজন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া। সস্তা স্লোগান নয়, পরিস্থিতি সামাল দেয়ার দায় সরকারের।

No comments

Powered by Blogger.