নতুন নির্বাচনের আহ্বান সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির, রাজধানীতে পাঁচ গাড়িতে আগুন ককটেল বিস্ফোরণ

অবিলম্বে সমঝোতার ভিত্তিতে নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, ভোটারবিহীন নির্বাচনে বর্তমান সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। জনসমর্থনবিহীন সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দেশের মানুষের বাক-স্বাধীনতা, সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সভা-সমাবেশ করার অধিকার খর্ব করে দেশের মানুষকে জিম্মি করে রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের মদতপুষ্ট সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা নির্বিচারে প্রতিবাদমুখী মানুষকে নির্যাতন, হত্যা, গুম ও গ্রেপ্তার করছে। এ থেকে আইনের শাসনে বিশ্বাসী আইনজীবীরাও রক্ষা পাচ্ছে না। অসংখ্য আইনজীবীসহ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ আলীকেও মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০ দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এমনকি তার জীবন বিপন্ন করার জন্য নিষিদ্ধ পেপার স্প্রে তার ওপর নিক্ষেপ করা হয়েছে। সরকারের এমন কার্যক্রমে সারা দেশে গণবিস্ফোরণ দেখা দিয়েছে। সরকার বেসামাল হয়ে নির্বিচারে দমন নীতি চালাচ্ছে। হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হত্যা ও পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে শত শত মানুষকে। দেশ আজ মহাসঙ্কটের সম্মুখীন। কয়েকদিন যাবৎ রাজধানী ঢাকা সারা বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে রয়েছে। সরকার যদি মনে করে অস্ত্রের জোরে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন দমন করে জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ক্ষমতায় টিকে থাকবে তাহলে দেশে এক চরম অরাজকতা সৃষ্টি হবে যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। আমরা মনে করি এ থেকে উত্তরণের একটি মাত্র পথ বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে অবিলম্বে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দ্বারা দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার কায়েম করা এবং অবিলম্বে দেশের সকল রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং যারা কারাগারে আছেন তাদের মুক্তি দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের অডিটরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ সমিতির অন্য নেতারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীতে পাঁচ গাড়িতে আগুন ককটেল বিস্ফোরণ
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ষষ্ঠ দিনে রাজধানীর বিভিন্নস্থানে একের পর এক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে পাঁচটি যানবাহনে। গতকাল বিকালে ছাত্রদল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকাসহ ১৪ জেলায় সোমবার (আজ) হরতাল ঘোষণা করার পরই যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলো ঘটে। আতঙ্কে সন্ধ্যার পর রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কমে যায়। ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ডিউটি অফিসার ফরিদুজ্জামান জানান, রোববার রাত পৌনে ৮টার দিকে আব্দুল্লাহপুরে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বাসটিতে আগুন লাগার খবর শুনে টঙ্গী স্টেশন থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেন। সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে দক্ষিণ কমলাপুর সরদার গার্মেন্টসের সামনে একটি চলন্ত লেগুনায় পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এতে ওই লেগুনার চালক সেলিম গুরুতর আহত হন। অচেতন অবস্থায় পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন। সেলিমের শরীরের ৩৮ শতাংশ পুড়ে গেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। সেলিমের পিতার নাম ফয়জুল হক। গ্রামের বাড়ি শরিয়তপুর জেলার জাজিরা এলাকায়। মুগদার মদিনাবাদ এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকেন তিনি।
সন্ধ্যা ৭টায় মহাখালী ওয়্যারলেস এলাকায় পানির ট্যাঙ্কির পাশে একটি প্রাইভেটকারে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কয়েকজন যুবক গাড়িতে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে পাশে থাকা একটি ট্রাকেও অগ্নিসংযোগ করে তারা। যুবকরা এসময় অবরোধ ও আজকের হরতালের পক্ষে স্লোগান দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তার আগে বিকাল ৪টায় শেওড়াপাড়ায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বাসটি কৌশলে থামিয়ে পেট্রল ঢেলে এতে দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দেয়। বাসটি তালতলা থেকে আব্দুল্লাহপুরের দিকে যাচ্ছিলো। এছাড়াও রাজধানীর বিভিন্নস্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। রোববার সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গেটের ভেতরে পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সন্ধ্যার পর দুই যুবক মোটরসাইকেলযোগে এসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। তবে গেটে কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাড়াহুড়ো করে গেটের বাইরে গিয়েও তাদের আটক করতে পারেন নি। সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় সূত্রাপুর থানার লক্ষ্মীবাজারে পরপর ৫টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিকট শব্দে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর লক্ষ্মীবাজারের অনেক দোকান বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। সূত্রাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দুর্গাপ্রসাদ জানান, ককটেল বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় ফকিরাপুল এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্বৃত্তরা পরপর ৫টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটালে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় লোকজন ছুটাছুটি করতে থাকে। তাৎক্ষণিকভাবে ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করে পুলিশ। এসময় নিরাপত্তার স্বার্থে ফুটপাথের দোকানগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। বিকালে বংশালে ককটেল বিস্ফোরণে এক রিকশাচালক গুরুতর আহত হন। তাকে ওই এলাকার ন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.