সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ নারীপুলিশ নিহত

রাজধানী ঢাকা ও উপশহর কেরানীগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশের তিন নারী সদস্য নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও ২৬ জন নারী পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। ঢাকার মতিঝিল এলাকায় নিহতরা হলেন আকলিমা (২২) ও মনিরা খাতুন (২৩)। এছাড়াও ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জে নিহত নারী পুলিশ সদস্য হলেন শেলী আক্তার (২৫)। আহত পুলিশ সদস্যদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নারী পুলিশ সদস্য নিহতের ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। আহতরা হাসপাতালে কান্নায় ভেঙে পড়েন। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী পুলিশ ট্রাকটি আটক করতে পারলেও চালককে আটক করতে পারেনি। খবর পেয়ে পুলিশের আইজিপি, ডিএমপি কমিশনারসহ পুলিশর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হাসপাতালে ছুটে যান।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল ভোর সাড়ে ৬টায় মতিঝিল থানাধীন ফকিরাপুল মোড়ে নারী পুলিশবাহী চট্টগ্রাম মেট্রো (জ) ০৪-১৭৭ নম্বরের একটি বাসকে পেছন থেকে খুলনা মেট্রো (ড) ১১-০২৭৯ নম্বরের একটি মালবাহী ট্রাক ধাক্কা দেয়। এতে বাসটি উল্টে যায়। এসময় বাসের মধ্যে থাকা নারী পুলিশের সদস্যরা চিৎকার করতে থাকেন। পরে পথচারীরা ওই উল্টে যাওয়া বাসের মধ্যে থেকে নারী পুলিশের সদস্যদের উদ্ধার করেন। এতে মোট ২৯ জন নারী পুলিশের সদস্য আহত হন। পথচারীরা আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে রাজারবাগ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা আকলিমা ও মনিরা খাতুনকে মৃত ঘোষণা করেন। আকলিমার কনস্টেবল নম্বর-২৫৬৭২। মনিরার কনস্টেবল নম্বর-২২১৭৬। ময়নাতদন্তের জন্য তাদের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা বিভিন্ন সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। ক্রাইম সিনের সদস্যরা দুর্ঘটনাস্থল কর্ডন করে রাখে। সেখানে নারী পুলিশ সদস্য নিহত ও আহত হওয়ায় পথচারীসহ স্থানীয়রা ভিড় করেন। পুলিশকে তাদের ভিড় সামলাতে বেগ পেতে হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ফকিরাপুলের মোড়ের হোটেল কর্মচারী আহাদ হোসেন জানান, অবরোধে রাস্তা প্রায় ফাঁকা ছিল। গাড়ি দ্রুত চালানোরও একটি প্রতিযোগিতা ছিল। তবে বাসটির গতি খুব একটি বেশি ছিল না। এসময় পেছন থেকে দ্রুতগতির একটি ট্রাক ওই বাসটিকে ধাক্কা দেয়। বাসটি উল্টে গেলে ওই বাসের মধ্যে থেকে নারী পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করা হয়। দুর্ঘটনায় আহত কনস্টেবল ইয়াসমিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, তারা রাজারবাগে ব্যারাকে থাকেন। রির্জাভ পুলিশ। সকাল বেলায় তাদের আবদুল গনি রোডের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে (পিসিআর) ডিউটি ছিল। ডিউটি অনুযায়ী তারা একটি বাসে করে নির্দিষ্ট স্থানে যাচ্ছিলেন। এসময় একটি গাড়ি পেছন থেকে ধাক্কা দিলে বাসটি উল্টে যায়। ইয়াসমিন জানান, আকলিমা ও মনিরা বাসের দরজার পাশে বসা ছিল। তাদের মাথায় দু’জনেরই আঘাত লাগে। এতে তাদের মৃত হয়। আকলিমার পিতার নাম গোলাম মোস্তফা। গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ার চর থানার পিরিজপুর এলাকায়। সাড়ে তিনবছর আগে পুলিশের কনস্টেবল পদে তিনি যোগদান করেন। তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। মনিরা খাতুনের পিতার নাম ভুলু মিয়া। গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থানার ভবানীপুর এলাকায়। তিনি সাড়ে তিন মাস আগে পুলিশের কনস্টেবল হিসেবে যোগদান করেছেন। দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। তারা দুইজনেই অবিবাহিত ছিলেন। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের পর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে নামাজে জানাজা শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। তাদের গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হবে পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে আহত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৭ জন চিকিৎসাধীন। পুলিশের সদস্যরা হলেন, ইয়াসমীন, শাহনাজ, লিজা, সিমা, ফরিদা, আলফা বেগম ও সোহাদ বেগম। অপরদিকে রাজারবাগ হাসপাতালে মোট ১৯ জন চিকিৎসাধীন সদস্যরা হলেন, লাইলী আক্তার, নাজনীন আক্তার, মনিকা, ঝুমা রানী, শিল্পী, সালমা, আফরিন, মাহফুজা আক্তার, জেসমিন, মিতালী, নিলীমা, ববিতা, রুনা আক্তার, রহিমা বেগম, কাবেরী নন্দী, আলপনা, ফাতেমা, দিপ্তি মন্ডল, আঁখি। বাসের মধ্যে থাকা একমাত্র কনস্টেবল লিলি বেগম তেমন কোন আহত হননি। ঢাকা মেডিক্যালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তিনি চলে গেছেন। রাজারবাগ পুলিশ লাইনের নারী পুলিশের এসি ওখিং মে জানান, ওই বাসে মোট ২৯ সদস্য ছিল। আহতদের অধিকাংশের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত। তাদের উন্নত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আহতদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেখতে আসেন পুলিশের মহাপরিদর্শক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক। তিনি বলেন, এ ঘটনা মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহন ও তার চালককে আইনের আওতায় আনা হবে। প্রধানমন্ত্রী এ দুর্ঘটনার খোঁজ নিয়েছেন এবং সুচিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। এসময় তার সঙ্গে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়াসহ পুলিশ এবং হাসপাতালে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মতিঝিল থানার ওসি (তদন্ত) প্রলয় কুমার জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। দুর্ঘটনার জন্য ট্রাকটিকে আটক করা হলেও চালক পলাতক রয়েছে। তাকে আটক করার জন্য বিভিন্নস্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে, গতকাল সাড়ে ৩টায় কেরানীগঞ্জের রাজউক ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পের রাস্তায় ট্রাক এবং সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশ সদস্য শেলী আক্তার, অজ্ঞাত যুবক ও সিএনজি অটোরিকশা চালকসহ তিনজন আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড হাসপাতাল) নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত নারী পুলিশ শেলী দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কোনাখোলা পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন। তার স্বামীর নাম জয়নাল আবেদীন। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানা এলাকায়।

No comments

Powered by Blogger.