বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছেন সিরিসেনা

মাইথ্রিপালা সিরিসেনা
শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা গতকাল শনিবার দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনে তাঁর মন্ত্রিসভা গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির কূটনৈতিক অবস্থান পুনর্গঠন এবং গণতান্ত্রিক সংস্কারের অঙ্গীকার পূরণ করার ওপরই তিনি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। খবর এএফপির। দীর্ঘদিনের শাসক মাহিন্দা রাজাপক্ষেকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচনে হারানোর পরদিন গত শুক্রবার সন্ধ্যায় শপথ নেন সিরিসেনা। তিনি ‘জাতীয় ঐক্যের’ ভিত্তিতে একটি মন্ত্রিসভা গঠন করার চেষ্টা করছেন। বলা হয়েছে, এতে পার্লামেন্টের বিভিন্ন মতাদর্শের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব থাকবে। সিরিসেনার সহযোগী নিশান্থা ওয়ার্নাসিংহে বলেন, মন্ত্রিসভার সদস্যদের বাছাই করাই এখন সিরিসেনার মূল কাজ এবং তিনি সেটা শুরুও করেছেন। জরুরি ভিত্তিতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য ১০০ দিনের কর্মসূচির কথা বলেছেন সিরিসেনা। এর মধ্যে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খর্ব করার বিষয়টি রয়েছে। দশকব্যাপী ক্ষমতায় থাকাকালে রাজাপক্ষে এসব ক্ষমতা নিজের আওতায় নিয়েছিলেন। সিরিসেনা শপথ নেওয়ার অল্প সময় পরই নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় নেতা রনিল বিক্রমাসিংহেকে। তাঁকেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্ষমতা দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক শক্তিধর দেশ ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যেতে পারে। প্রাচীন রাজধানী ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর ক্যান্ডি থেকে সিরিসেনা আজ রোববার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তিনি ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় তামিল বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ের অবসানের লক্ষ্যে শান্তি প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন এবং এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সমর্থনও পান। সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের আমলে শ্রীলঙ্কায় মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে কলম্বোর সম্পর্কের অবনতি হয়। পশ্চিমা অনেক দেশই তামিলদের বিরুদ্ধে দমন অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে রাজাপক্ষেকে বর্জন করে। সিরিসেনাকে যাঁরা প্রথম অভিনন্দন জানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও সিরিসেনার অধীনে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের আভাস দিয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং অস্ট্রেলিয়াও প্রায় একই ধরনের মনোভাব প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে। শপথ গ্রহণের পর প্রথম ভাষণে সিরিসেনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘আমাদের এমন একটি পররাষ্ট্রনীতি থাকবে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সব আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করে দেশের জনগণকে সর্বোচ্চ সুফল এনে দেবে। আমরা সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করব।’

No comments

Powered by Blogger.