মামলার ভারে সংসদ সচিবালয় by কাজী সোহাগ

মামলার ভারে আক্রান্ত এখন সংসদ সচিবালয়। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের করা ৭৩টি মামলা নিয়ে বিপাকে সংশ্লিষ্টরা। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন মামলার কাজে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের ছুটতে হচ্ছে হাইকোর্ট কিংবা জজ কোর্টে। বছরের পর বছর ধরে ঘটছে এ ঘটনা। পাশাপাশি এ খাতে বাজেটের তুলনায় বাড়ছে ব্যয়। অনিয়ম, দুর্নীতি, জেলা কোটা না মানা, নেতিবাচক পুলিশি প্রতিবেদনের কারণে নিয়োগ বাতিল করা হয়। আর এর বিরুদ্ধে রিট করেন সংশ্লিষ্টরা। এরপর বছরের পর বছর      আর কোন পদক্ষেপ নেয়া হয় না। ১৪ বছর বয়সী মামলাও রয়েছে। কর্তৃপক্ষের আগ্রহ থাকে নিয়োগ বাতিল করা পর্যন্তই। এ চিত্র সংসদ সচিবালয়ের। ২০০৫ ও ২০০৬ সাল  থেকে ৫৮টি রিট দায়ের করা  হয়েছে সংসদ সচিবালয়ের আদেশের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে কয়েকটি মামলায় স্থগিতাদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া, সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে বাসা বরাদ্দ বাতিলের আদেশ দেয়া হলেও  বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিক্ষুব্ধরা মামলা করেছেন। বর্তমানে এ নিয়ে দায়ের করা ১৫টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি মামলায় পরবর্তীতে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি সংসদ সচিবালয়। অপর ১০টিতে রয়েছে স্থগিতাদেশ। সংসদ সচিবালয়ের মামলার তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এবং বয়স প্রমার্জন করে নিয়োগ নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতি করায় নিয়োগ আদেশ বাতিল করা হয়েছে তৃতীয় শ্রেণীর ৩ কর্মচারীর। তারা হলেন-শারমিন সেতারা, বেগম আরজু-আরা ও মো. আতারব হোসেন। সবচেয়ে বেশি নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে জেলা কোটা অমান্য করার দায়ে। এ তালিকায় রয়েছেন ৬৬ জন। তারা হলেন-মাসুদ রানা, আবু বকর সিদ্দিক, হামিদুল ইসলাম, মকবুলার রহমান, জাহেদ আলী, আশরাফুল ইসলাম, আমির হোসাইন, রফিকুল ইসলাম, বেলাল হোসেন, বাবুল হাওলাদার, আব্দুর রাজ্জাক, হাসিবুল হক, আনিসুর রহমান, মোকছেদুল মোমিন, মমতাজ আলী, নূর ইসলাম, সাহাদত বকুল, আবদুল সাত্তার, ফরিদুজ্জামান, ফিরোজা বেগম, সিতেন শীল, আল-মামুন, জাকির হোসেন, মনসুর আলী, আবুল কালাম, জহিরুল ইসলাম, আবদুল সোবহান, মোকছেদুল ইসলাম, হারুন-অর রশিদ, মোজাফ্‌ফর রহমান, জিয়াউর রহমান, রিয়াজুল ইসলাম, মোশাররফ হোসেন, মহিবুর রহমান, আবুল কালাম আজাদ, মাহিনুর আক্তার, রবিউল ইসলাম, আব্দুল জব্বার, আহসান হাবীব, আব্দুস সাত্তার, তাজুল ইসলাম, এনামুল হক, আসাদুজ্জামান, আবুল হোসেন, ইসমাইল হোসেন। একই অভিযোগে দুটি মামলায় ৫ জন ও ১৬ জন বাদী হয়ে মামলা করেন।
এছাড়া আত্তীকৃত কর্মকর্তারা ২০০১ সালে হাইকোর্টে ও ২০০৭-এ সুপ্রিম কোর্টে দুটি মামলা দায়ের করেন। সংসদ সচিবালয়ে এটাই সবচেয়ে বেশি বয়সী মামলা। টানা ১৪ বছর ধরে বিচারাধীন রয়েছে এ মামলার কার্যক্রম। নিষ্পত্তি না হওয়ায় এসব কর্মকর্তারা এখনও মুচলেকা দিয়ে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। এরইমধ্যে বেশ কয়েকজন পদোন্নতি পেয়েছেন। এমনকি মন্ত্রীর পিএস হিসেবেও কাজ করছেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পিএস এম মাসুম সংসদ সচিবালয়ে আত্তীকৃত কর্মকর্তা ছিলেন। এছাড়া পদোন্নতি নিয়ে হাইকোর্টে রয়েছে ২টি মামলা। ২০১২ সালে সহকারী গ্রন্থাগারিক থেকে গ্রন্থাগারিক পদে পদোন্নতি নিয়ে মামলা করেন জমিলা কুলসুম। একই বছর বিতর্ক সহ-সম্পাদক থেকে সহকারী বিতর্ক সম্পাদক পদে পদোন্নতি নিয়ে মামলা করেন মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। বাসা বরাদ্দ নিয়ে দায়ের করা ১৫টি মামলার বাদীরা হলেন-মকছেদুল ইসলাম, বেলাল হোসাইন, হারুন-অর-রশিদ, ইসমাইল হোসাইন, আবুল কাশেম পাটোয়ারী, মো. আবদুল্লাহ, জাহাঙ্গীর আলম, সমেনা খাতুন, ডা. জেবা আহমেদ, হাসিনুর রহমান, সহিদ, হুমায়ুন কবির, মামুন-অর রশিদ, আবু তাহের ও হাসিবুল ইসলাম। মামলার ভারে আক্রান্ত থাকলেও সংসদ সচিবালয়ে এ জন্য নেই নিজস্ব আইনজীবী প্যানেল। কেবল বিশেষ ক্ষেত্রে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়। সর্বশেষ আত্তীকৃতদের দায়ের করা মামলায় আইনজীবী প্যানেল নিয়োগ দেয় সংসদ সচিবালয়। সমপ্রতি আইন অধিশাখার পক্ষ থেকে সংসদ সচিবের কাছে স্থায়ীভাবে নিজস্ব আইনজীবী প্যানেল গঠনের প্রস্তাব দেয়া হলেও তা বাতিল করা হয়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, সাধারণত রিট দায়ের হলে তা এটর্নি জেনারেলের কাছে পাঠানো হয়। তখন সেখান থেকে ওই মামলার পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। আবার জজ কোর্টে মামলা দায়ের করা হলে সংসদ সচিবালয় তা পাঠিয়ে দেয় সরকারি কৌঁসুলির কাছে। এরপর আর নিজস্ব আইনজীবী প্যানেলের কোন প্রয়োজন নেই বলে মতামত দেয়া হয়। বিষয়টি স্পিকার পর্যন্ত যায়নি বলে জানান আইন অধিশাখার কর্মকর্তারা। তারা বলেন, সচিবের সিদ্ধান্তের পর বিষয়টি আর স্পিকারের কাছে পাঠানোর প্রয়োজন নেই।

No comments

Powered by Blogger.