অবরোধে ভেঙে পড়েছে পণ্য পরিবহন অস্থির চালের বাজার

ষষ্ঠ দিনের মতো অবরোধে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের গুলি ও চোরাগুপ্তা হামলার ঘটনা ঘটেছে। টানা অবরোধে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ভেঙে পড়েছে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা। নির্ধারিত সময়ে পণ্য বাজারে না পৌঁছানোয় বাজারে দেখা দিচ্ছে সরবরাহ ঘাটতি। ফলে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। বাইরে থেকে রাজধানীতে চাল সরবরাহ কমে যাওয়ায় দামে প্রভাব পড়ছে। এদিকে ঝুঁকি নিয়ে বাড়তি ভাড়ায় চাল আনছেন কিছু ব্যবসায়ী। এতেও দামে প্রভাব পড়ছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ৫ই জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত অবরোধের কারণে চালবাহী ট্রাক ঢাকায় প্রবেশ করছে না। ঢাকায় চালের বড় সরবরাহ আসে উত্তরাঞ্চল থেকে। অবরোধে এসব অঞ্চলের মহাসড়ক অচল হয়ে পড়ায় চাল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কুষ্টিয়ার দাদা মিনিকেট চালের স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম মানবজমিনকে জানান, ‘অবরোধ শুরু থেকে আজ পর্যন্ত একটি গাড়িও ঢাকায় পাঠাতে পারিনি। গতকাল দু’টি গাড়ি প্রথমে লোড করি, পরে অবরোধ আরও কঠিন হতে পারে শোনার পর শেষ পর্যন্ত সাহস পাইনি। ইতিমধ্যে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।’ একই অভিযোগ চাঁপাইনবাবগঞ্জের চালকল মালিক সাইফুল ইসলামেরও। তিনি জানান, ঢাকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা বার বার ফোন করার পরও চালের কোন ট্রাক পাঠাতে পারিনি। অবরোধ দীর্ঘায়িত হলে ব্যবসায়ীরা শেষ হয়ে যাবে। স্বাভাবিক সময় মাসে ২০ থেকে ২৫টি চালের ট্রাক পাঠানো হতো। কিন্তু অবরোধ চলমান থাকায় চাল নিয়ে হাহাকার শুরু হচ্ছে।
এদিকে মিল মালিকরা চাল পাঠাতে পারছে না বলে রাজধানীর পাইকারি বাজারগুলোতে চালের দাম বাড়ছে। ইতিমধ্যে বাবুবাজার, বাদামতলী ও কাওরান বাজার আড়তে প্রতি বস্তা চালের দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। রাজধানীর পাইকারি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি ট্রাকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। আর মহাজনরাও আগের দামে বিক্রি করতে নারাজ বলে জানান তারা। ফলে পাইকারি বাজারের সঙ্গে সঙ্গে খুচরা বাজারেও বেড়েছে এক থেকে দুই টাকা। আর এতে করে চলমান অবরোধে দেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ পড়েছে বিপাকে।
এব্যাপারে ‘বাদামতলী ও বাবুবাজার চাউল আড়তদার সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, বাবুবাজার ও বাদামতলী পাইকারি বাজারে গড়ে প্রতিদিন প্রায় একশ’ ট্রাক চাল আসে। সেখানে ৫ই জানুয়ারির পর থেকে এ পর্যন্ত হাতেগোনা কয়েক ট্রাক চাল এসেছে। বাড়তি টাকা দিয়েও ট্রাক চালকরা আসতে চাইছে না। রাজনৈতিক অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী সপ্তাহ থেকেই চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। তাই অনতিবিলম্বে সরকার ও বিরোধী দলের প্রতি তিনি দেশের জনগণের স্বার্থে স্থিতিশীল ও নিরাপদ পরিবেশ প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।
সূত্র জানায়, বাদামতলী ও বাবুবাজার চালের আড়তে দেশের ১০ থেকে ১৫টি জেলা থেকে সবচেয়ে বেশি চাল আসে। কুষ্টিয়া, নোয়াপাড়া ও যশোর থেকে আসে মিনিকেট চাল। নওগাঁ থেকে চাল ২৮ ও পারিজা, শেরপুর ও ময়মনসিংহ থেকে নাজিরশাইল চাল আসে। আর টাঙ্গাইল ও বগুড়া থেকে হাসলি চাল আসে। দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসে চিনিগুড়া, মিনিকেট এবং পারিজা। ঈশ্বরদী ও নাটোর থেকে আসে মোটা চাল। অথচ এসব এলাকাতেই অবরোধ সবচেয়ে বেশি। গাড়ি ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক। আর এ কারণে ট্রাকচালক কিংবা পাইকারি ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিতে নারাজ।
এদিকে পাইকারি বাজার নামে পরিচিত বাদামতলী ও বাবুবাজারে ঢাকার বাইরে থেকে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক চালের ট্রাক আসে। এসব ট্রাকের চাল নামানোর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে কয়েক শ’ শ্রমিক।
মেসার্স চাঁদ তারা রাইস এজেন্সির প্রোপাইটর মো. রতন মিয়া বলেন, আগের আমদানি থাকার কারণে এখনও তেমন কোন প্রভাব পড়ছে না। আগামী সপ্তাহেও যদি দেশের এমন অবস্থা বিরাজমান থাকে তবে চালের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকায় গাড়ি চলাচল করলেও ঢাকার বাইরে থেকে কোন ট্রাক আসতে রাজি হয় না। ট্রাকচালক রমজান আলী বলেন, পাঁচ দিন পর গতকালই তিনি ট্রাক নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। আগুনের ভয়ে রাস্তায় ট্রাক নামাতে সাহস পান না। তারপরও পেটের তাগিদে বের হয়েছেন। পিকেটাররা আগুন দিলে একদিকে নিজের জীবনের ভয় অপরদিকে ট্রাক মালিকের ভয়। এ জন্য ঝুঁকি নিতে ভয় হয়।
ভেঙে পড়েছে পণ্য পরিবহন: অবরোধ দীর্ঘ হওয়ার সঙ্গে ভেঙে পড়েছে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা। পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকায় আসতে না পারায় মজুত কমে আসছে অনেক পণ্যের। শীতের শাকসবজি ও কাঁচা পণ্য ঢাকায় আসতে না পারায় ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে। এতে মাথায় হাত পড়েছে কৃষকের। কোথাও কোথাও শাকসবজি গবাদি পশুকে খাওয়ানো হচ্ছে। কৃষিবিদ ড. মনজুর হোসেন মানবজমিনকে জানান, কৃষকরা এখন নির্বাক। তারা ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। উত্তরবঙ্গের কোন কৃষকের মুখে হাসি নেই। কোটি কোটি টাকার শস্য ফলিয়ে আজ তাদের মাথায় হাত। মমিনউদ্দিন নামের রাজশাহীর এক কৃষক জানান, চার দিন ধরে স্থানীয় বাজারে গেছি কিন্তু একটি ফুলকপিও বিক্রি হয়নি। তিনি ১৮ হাজার ফুলকপির চারা লাগিয়েছিলেন। আজ সবই তার গলার ফাঁস হয়েছে। তিনি জানান, টমেটো বাজারজাতের শুরুতে প্রতি মণ ছিল ১৪০০ টাকা। এখন তা মাত্র ২০০ টাকায় নেমে এসেছে। তাও বিক্রি হচ্ছে না। এছাড়া শীতকালীন সব পণ্য সরবরাহ পরিস্থিতি নাজুক বলে জানান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনজুর।
শফিক গাজী ব্যাপারী। যাত্রাবাড়ী আড়তের একজন পাইকার ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫টি ফুলকপির ট্রাক আসতো। কিন্তু অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে গতকাল দু’টি ট্রাক এসেছে, যা চাহিদার তুলনায় একদম-ই সামান্য। সে কারণে বাজারে পণ্যসঙ্কট দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে ৮০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে তার। টমেটোর পাইকার ব্যবসায়ী লাল মিয়া বলেন, অবরোধের প্রথম পাঁচ দিনে এক টাকারও মাল কিনিনি। তবে গতকাল ৯ খাছি কিনে ভয়ে ভয়ে ঢাকায় ঢুকি। আবদুল জলিল জানান, চলমান অবরোধে ৮০% পণ্য আসা কমে গেছে।
প্রায় একই চিত্র যাত্রাবাড়ীর মাছের বাজারেও। যাত্রাবাড়ী বুড়িগঙ্গা মৎস্য বাজারের ম্যানেজার আবদুল মান্নান বলেন, অবরোধে দৈনিক বিক্রি ৭ কোটি থেকে ৪ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। এদিকে অবরোধে রাজধানী কাওরান বাজারের সবজি ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন চরম বিপাকে। পিকেটারদের ছোড়া ঢিল, আগুন, বোমাতঙ্ক আর চালকদের অতিরিক্ত ট্রাক ভাড়ার কারণে ক্ষেতের সবজি ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে। কিছু পাইকার অধিক ভাড়া দিয়ে ঢাকার কাওরান বাজারে সবজি নিয়ে এলেও লাভবান হতে পারছে না তারা। প্রতি ট্রাকে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৫০০০ টাকা। এরই মধ্যে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে রাজি থাকলেও মিলছে না ট্রাক। ফলে কৃষকের মাঠের ফসল মাঠেই নষ্ট হচ্ছে। সবজি ব্যবসায়ীদের মতে, সরকার ও বিরোধী দল কথায় কথায় বলে তাদের আন্দোলন-সংগ্রাম দেশ ও দেশের মানুষের জন্য। তাদের বক্তব্য যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তো এ দেশেরই মানুষ। মানুষের কষ্টের বিনিয়োগ ঘরে তোলার সুযোগ দিক। কাওরান বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি পর্যায়ে প্রতিটি সবজিতে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। আর খুচরা পর্যায়ে তা বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকায়। ৫ই জানুয়ারির আগে প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধা কপি বিক্রি হতো ৩ থেকে ৪ টাকা, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকা। খুচরা বাজারে ১৫ টাকার কপি বিক্রি হচ্ছে এখন ২০ টাকা। এছাড়া ভরা মওসুমেও আলু ও ক্ষীরার দাম বেড়েছে। তবে মুলা আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। লাল শাকসহ সব ধরনের শীতকালীন সবজির দাম কম থাকার কথা থাকলেও হু হু করে বাড়ছে সবজির দাম। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, চলমান অবরোধে পাইকারি ব্যবসায়ীদের অনেক টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে। মানিকগঞ্জের বাঁধাকপি ব্যবসায়ী নূরুল ইসলাম বলেন, আমি প্রায় ২৫ বিঘা জমির বাঁধাকপি কৃষকের কাছ থেকে কিনেছি। চলমান অবরোধে ঢাকায় কপি আনতে না পেরে জমিতেই তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এরমধ্যে যা আনছি তাতেও ট্রাক ভাড়া পড়ে যাচ্ছে দ্বিগুণ।
অন্যদিকে দিনাজপুরের লাউ ব্যবসায়ী শাহ কামাল বলেন, আগে দিনাজপুর থেকে ঢাকায় আসতে ট্রাক চালককে ৮০০০ টাকা দিলেই খুশি থাকতেন। এখন ২০০০০ টাকা বললেও ঢাকায় আসতে চান না। লাউ নিয়ে আমি এখন মহাবিপদে আছি। এভাবে কি একটা দেশ চলতে পারে? সরকার আমাগো দিকে না তাকিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য গোয়ার্তমি করছে। আর এর খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের। প্রতি গাড়িতে লোকসান হচ্ছে ৭ থেকে ৮০০০ টাকা। হরতাল আমাগো জীবন শেষ করে দিয়েছে। আলু ব্যবসায়ী মো. মাসুদ নতুন আলুর বাজার ধরতে গতবারের মতো এবারও অর্ধশত বিঘা আলু কিনেছে। দ্রত শীতের বাজার ধরতে ছোট থাকাকালীন সময়েই আলু ওঠানো হয়েছে। কিন্তু এখন তা ঢাকায় আনতে তাকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। কোল্ডস্টোরেও রাখার উপায় না থাকায় তার চোখেমুখে ছিল হাহাকারের ছাপ। বন্ধুবান্ধবের দেখাদেখি বেগুন ব্যবসায়ী আলমগীর খান এ বছর প্রথম ব্যবসায় নেমেছেন। কিন্তু দেশের পরিস্থিতি তাকে শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে। যশোরের মহাজন রবিউলের কাছ থেকে শীতের শুরুতে চার লাখ টাকার বেগুনের অর্ডার করেছে। সে অনুযায়ী, মহাজন বেগুন নিতে বারবার তাগাদা দিচ্ছেন। ১৪০০০ টাকার ট্রাক ২০০০০ টাকায় রাজি হওয়ার পরও তা ঢাকার বাজারে আনতে পারছেন না। এ অবস্থায় আলমগীর চরম হতাশায় পড়েছেন। এসব চিত্র পুরো দেশের।
অবরোধে ভাঙচুর, আগুন, সংঘর্ষ: ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের গুলি আর চোরাগোপ্তা হামলায় আতঙ্ক দেশজুড়ে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাড়িছাড়া বিরোধীপক্ষ। হামলার আশঙ্কায় অবরুদ্ধ সাধারণ মানুষ। টানা অবরোধে স্থবিরতা নেমে এসেছে জনজীবনে। বাড়িঘর, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, কার্যালয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি হামলা-ভাঙচুর। অবরোধের ৬ষ্ঠ দিন গতকালও হবিগঞ্জ ও কুমিল্লার দেবিদ্বারসহ দেশের বিভিন্নস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ২০ দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। হবিগঞ্জে পুলিশের গুলিতে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক সেলিমসহ বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ ও শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বগুড়ায় রেল লাইন বিচ্ছিন্ন হওয়ায় ৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকে ট্রেন চলাচল। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তা কেটে ফেলা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে গতকাল বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পটুয়াখালী, লালমনিরহাট, পিরোজপুর ও ফেনীর দাগনভূঞায় হরতাল কর্মসূচি পালন করেছে ২০ দল। রাজধানীতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবরুদ্ধ গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে ফের ট্রাক দিয়ে ব্যারিকেড দেয় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এর আগে শনিবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আওয়াল মিন্টুর গুলশানের বাসা লক্ষ্য করে ৬ রাউন্ড গুলি চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার রাতে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও পুলিশের উপর হামলার অভিযোগে কুমিল্লা, নড়াইল, বরিশাল, সিলেটের বিয়ানীবাজার, সিরাজগঞ্জসহ সারা দেশে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে।
রাজধানীতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান দুদু, নড়াইল পৌর মেয়র ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ জাপল, লালমনিরহাট জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মফিজুল ইসলাম বাবু, সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান, কুলাউড়া উপজেলা জামায়াতের আমীর  আবদুল বারী মাস্টার, চৌদ্দগ্রাম পৌর জামায়াতের আমীর মাহফুজুর রহমান, খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সহসভাপতি ও সরকারি এমএম সিটি কলেজের সাবেক জিএস মশিউর রহমান যাদু, বগুড়ার শেরপুর পৌর কাউন্সিলর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও শহর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শাহাবুল করিম, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বাচ্চুসহ যশোরে ৪৯ জন, রাজশাহীতে ৪৬ জন, সাতক্ষীরায় ৪১ জন, মৌলভীবাজারে ২৫ জন, কক্সবাজারে ২০ জন, কুমিল্লায় ২০ জন, লালমনিরহাটে ১৯ জন, নড়াইলে ১০ জন, চাঁদপুরে ১১ জন, নোয়াখালীতে ২৮ জন, রংপুরে ২৫ জন, ফেনীতে ২০ জন, রাজশাহীতে ২৩ জনসহ ২০ দলীয় জোটের পাঁচশতাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থককে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বাচ্চুকে পিটিয়ে পুলিশে দিয়েছে ছাত্রলীগ। এদিকে অবরোধে নাশকতা ঠেকাতে বগুড়ার ধুনটের পল্লী এলাকার ১০টি পয়েন্টে গ্রাম পুলিশ মোতায়েন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ/সোনারগাঁও প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জে যাত্রীবাহী দু’টি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তাদের হামলায় দুই বাসের চালকসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল রাত পৌনে ৯টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেরিখালী ব্রিজের শুকতারা পেট্টোল পাম্পের সন্নিকটে বোরাক পরিবহনের একটি বাস ও শহরের কালিবজারে উৎসব পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়।
স্টাফ রিপোর্টার, হবিগঞ্জ থেকে জানান, হবিগঞ্জে চোরাগুপ্তা হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশসহ ২৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশ ২৫ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। বিএনপি নেতাকর্মীরা কমপক্ষে ২০টি যানবাহন ভাঙচুর করে। পুলিশ ৫ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। রোববার দুপুরে শহরের ২নং পুল বাইপাস সড়কে বিএনপি অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করে। পরে বিএনপি নেতাকর্মীরা সেখানে ১টি ট্রাক ও ১টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা  ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে পৌঁছে দ্রুতবিচার মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক সেলিমকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এক পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবক দল হবিগঞ্জ সদর উপজেলার আহ্বায়ক আবদুল মান্নান তাকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। সংঘর্ষে পুলিশ ২৫ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক সেলিম, স্বেচ্ছা সেবক দল হবিগঞ্জ সদর উপজেলার আহ্বায়ক আবদুল মান্নান, যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামছুল ইসলাম মতিন, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের অহ্বায়ক সাহাব উদ্দিন, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ওয়াহিদুজ্জামান ওয়াহিদ ও জেলা মোটর চালক দলের আহ্বায়ক তারা মিয়া গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা জুয়েলকে গ্রেপ্তার করে। পরে বিএনপি নেতাকর্মীরা বাইপাস সড়কের কবির কলেজের পাশে আরও দু’টি বাস ভাঙচুর করে।
এর আগে সকাল ৮টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উলুকান্দি নামক স্থানে একটি মাছ বোঝাই ট্রাক আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় যুবদল কর্মীরা। এ ঘটনায় পুলিশ যুবদল কর্মী কলাপাড়া গ্রামের সুরাজ মিয়া, বিরামচর গ্রামের কিম্মত আলী ও সাদ্দাম এবং নিশাপট গ্রামের শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করে।  অপরদিকে শনিবার রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত শায়েস্তাগঞ্জের লস্করপুর থেকে নতুন ব্রিজ এলাকা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ১৫টি দূরপাল্লার গাড়ি ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন।
স্টাফ রিপোর্টার বগুড়া থেকে জানান, অবরোধের পাশাপাশি বগুড়ায় বিএনপির ডাকা ২৪ ঘণ্টার হরতালের আগের রাতে বগুড়ার ছাতিয়ানতলা এলাকায় রেল লাইন কেটে এবং ৫২০টি স্প্যান্ডেল ক্লিপ খুলে ফেলে দুর্বৃত্তরা। এতে ৪ ঘণ্টা রেল চলাচল বন্ধ থাকে। এ ঘটনায় জিআরপি ৫ জনকে আটক করেছে। একই রাতে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শেরপুর উপজেলার মহিপুর ও ছোনকায় হরতাল ও অবরোধকারীরা ২টি ট্রাকে পেট্রল বোমা ছুড়ে মারে। এতে ট্রাকে আগুন ধরে চালক গুরুতর আহত হন। আহত ট্রাক চালককে বগুড়া শজিমেক হাসপতালে ভর্তি করা হয়েছে। একই স্থানে আরও ৫/৭টি ট্রাক ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়া শহরের পিটিআই মোড়  কলোনিতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাসহ পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন ঘটনায় শনিবার রাত থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ ৮০ জনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে শেরপুর পৌর যুবদলের সভাপতি শাহাবুল করিম ও ২জন জামায়াতের রোকনসহ ৪জন রয়েছে। এদিকে  আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত হরতাল আহ্বান করলেও তা বাড়িয়ে আগামী মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত করা হয়েছে। রোববার সকালে বগুড়ার সাবগ্রাম এলাকায় হরতালকারীরা গাছ কেটে রাস্তায় বেরিকেড দেয়। বগুড়া রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার বেনজুরুল ইসলাম বেঞ্জু জানান, শনিবার রাত দেড়টার দিকে ২৮ নম্বর গেটম্যান বাহারুলের মাধ্যমে খবর পাই, বগুড়া সদরের ছাতিয়ানতলা এলাকায় দুর্বৃত্তরা রেল লাইন কেটে উপড়ে ফেলেছে এবং ৫২০টি স্প্যান্ডেল ক্লিপ খুলে ফেলেছে। তাৎক্ষণিকভাবে রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে রেল লাইন মেরামত করে ট্রেন চলাচল সচল রাখা হয়।
কুলাউড়া থেকে সংবাদদাতা জানান, কুলাউড়ায় গত এক সপ্তাহে বিএনপি-জামায়াতের দু’শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। চারটি পৃথক মামলায় অজ্ঞাতনামাসহ ২৫৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ এসল্ট, গাড়ি পুড়ানো ও রেলে নাশকতার অভিযোগে এ মামলাগুলো কুলাউড়া থানা ও শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানায় করা হয়েছে। মামলার পর থেকে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পুলিশ ও যৌথবাহিনী বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশির কারণে কুলাউড়া এখন আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে। শনিবার রাতভর অভিযানে আটক করা হয় উপজেলা জামায়াতের আমীর মাস্টার আবদুল বারীসহ ১০ কর্মী সমর্থককে।
স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, বরিশাল জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার সুদিপ্ত সরকারকে বহনকারী গাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে অবরোধ সমর্থনকারী পিকেটাররা। রোববার রাত ৯টায় বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের রহমপুর সেতুর কাছে এ হামলা চালানো হয়। হামলায় পুলিশ কর্মকর্তার গাড়ির  চালক কনস্টেবল মহসিন আহত হয়েছেন। সুদিপ্ত সরকার জানান, অবরোধে মাঠ পর্যায়ে নিরাপত্তা কার্যক্রম তদারকির জন্য তিনি বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক দিয়ে যাচ্ছিলেন। রহমতপুর সেতুর কাছে পৌঁছলে অবরোধকারীরা তাকে বহনকারী জিপ গাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে গাড়ির সামনের গ্লাস ভেঙ্গে যায় এবং চালক মহসিন আহত হন। তাকে শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া রোববার রাতে বরিশাল থেকে ঢাকাগামী মেঘনা পরিবহন নামক একটি বাসে পিকেটাররা ঢিল ছুড়লে মজিবর রহমান নামে এক যাত্রী আহত হন।
ভোলাহাট (চাঁপাই নবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, অবরোধকারীরা ভোলাহাট-রহনপুর সড়ক কেটে যান চলাচল বন্ধ করার চেষ্টা চলিয়েছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাটাস্থান ভরাট করে যান চলাচলের উপযোগী করে। এদিকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পাহারায় ভোলাহাটে আটকে পড়া ২১টি মালবাহী ট্রাক গন্তব্যে পৌঁছার জন্য উপজেলা পার করে দেয়া হয়।
চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের রাণীরবন্দরে শনিবার রাতে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে এক মহিলাসহ ৪ জনকে আটক করেছে। তারা হলেন- নশরতপুর  গ্রামের কাজিপাড়ার তছলিমউদ্দিন (৬২), কলেজ ছাত্র রবিউল ইসলাম (২৮), রাজু আহম্মেদ (২৪) এবং হামিদুল পাড়ার মকবুল হোসাইন মুন্সির স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৩৮)।
দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, রোববার সকালে ছাত্রলীগ-পুলিশ এবং ছাত্রদলের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় কুমিল্লার দেবিদ্বার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় দেবিদ্বার এসএ সরকারি কলেজ হোস্টেল,  ইউনিক ইন্টার ন্যাশনাল স্কুল, বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও দোকানপাটসহ অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর হয়। আহত হয়েছেন সাংবাদিকসহ অন্তত ১০ জন। পুলিশ ১ জনকে আটক করেছে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সকাল ৮টায় ২০দলের অবরোধ চলাকালে ছাত্রদলের কর্মী-সমর্থকরা কিরিচ, রামদা, চায়নিজ কুড়াল, রড, লাঠিসহ একটি মিছিল নিয়ে দেবিদ্বার এস.এ. সরকারি কলেজ হোস্টেল ও কলেজ রোডের কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অতর্কিত হামলা চালায়। সংবাদ পেয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ছাত্রদলের সমর্থকদেরকে ধাওয়া করে। পুলিশ অন্তত ৬০ রাউন্ড শটগানের গুলি ছুড়ে। এ সময় দেবিদ্বার পৌর এলাকার ভূষণা গ্রামের যুবলীগ কর্মী মালু মিয়া (২৮) তার অসুস্থ পুত্রকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে ফেরার পথে ছাত্রদল কর্মীরা তাকে লাঠি ও চায়নিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। সংঘর্ষের ছবি ও সংবাদ সংগ্রহকালে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার দেবিদ্বার প্রতিনিধি মো. আক্তার হোসেন ও দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার দেবিদ্বার প্রতিনিধি মো. ফখরুল ইসলাম ইটের আঘাতে আহত হন। সংবাদ পেয়ে সকাল ১০টায় একদল ছাত্রলীগ কর্মী সংগঠিত হয়ে পিস্তল, কিরিচ, রাম দা, চায়নিজ কুড়াল, রড, লাঠি ও ইটপাটকেল নিয়ে এবং গুলিবর্ষণ করতে করতে ছোট আলমপুর চৌরাস্তার মোড়ে অবস্থানরত ছাত্রদল কর্মীদের ধাওয়া করে। ছাত্রদল কর্মীরা পিছু হটলেও রাস্তার দু’পার্শ্বে থাকা বাসা-বাড়ি, দোকানপাট ও ইউনিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের গেট, সাটার এবং টিনের বেড়া কুপিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে ছাত্রলীগকর্মীরা। ছাত্রদল  নেতারা অভিযোগ করেন, তাদের পূর্ব ঘোষিত শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে পুলিশ অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে আমাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে ছাত্রলীগ কর্মীরা পুলিশের সামনেই পিস্তলসহ বিভিন্ন মারণাস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়।
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির দু’কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার সকাল পর্যন্ত শহরের বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। আটককৃতরা হলেন- জিয়া ও নাজমুল।
উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, রোববার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে বগুড়া-নগড়বাড়ী মহা সড়কে উল্লাপাড়া পৌর শহরের বিজ্ঞান কলেজের পাশে অবরোধকারীরা যাত্রীবাহী সিএনজি চালিত একটি অটোরিকশা পুড়িয়ে দিয়েছে। তবে চালক ও যাত্রীরা হতাহত হননি। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভায়। অটোরিকশা চালক খোকন জানায়, অবরোধকারীরা যাত্রীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে গাড়িতে আগুন দেয়।
গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে টমেটো ও বরইভর্তি একটি ট্রাকে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে রহনপুর পৌর এলাকার হুজরাপুর নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। ভোলাহাট থেকে টমেটো ও বরইভর্তি ট্রাকটি ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছিল। এদিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২০-দলীয় জোটের ১১৬ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। অন্যদিকে চৌডালা ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি শাহ আলমকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে উদয়নগর ব্রিজ এলকায় প্রায় ২৪ ফিট রাস্তা কেটে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে অবরোধকারীরা।
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতাল গেট ও আলিয়া মাদরাসা এলাকায় রোববার সকাল ১০টায় রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল করেছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। এ সময় আলিয়া মাদরাসা এলাকায় ৩টি ককটেল বিস্ফোরণ ও হাসপাতাল গেট এলাকায় দু’টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায় তারা। এছাড়া রামগঞ্জ উপজেলার সোনাপুর-চৌরাস্তায় সড়ক অবরোধ করে ও টায়ার জ্বালিয়ে মিছিল করেছে উপজেলা যুবদলের সভাপতি গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে যুবদলের নেতাকর্মীরা। একই সময়ে লক্ষ্মীপুর শহরের মিয়ার রাস্তার মাথা এলাকায়, বাসটার্মিনাল এলাকায় ও মিছিল করেছে অবরোধকারীরা। এদিকে শনিবার রাতে আলিয়া মাদরাসার পেছনের শিবিরের মেসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় ছাত্রাবাসে ছাত্রদের বই, কোরআন শরীফ, হাদিস, জামাকাপড় আসবাবপত্রসহ সকল মালামাল পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেছে শিবির। এছাড়া লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা (পূর্ব) সাধারণ সম্পাদক ও চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বাচ্চু ও উপজেলা শিবিরের সভাপতি হারুনুর রশিদসহ বিএনপি, জামায়াত ও শিবিরের ২৪ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভোররাতে সদর উপজেলা, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি, কমলনগর, চন্দ্রগঞ্জ থানাসহ জেলার বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, পাবনার চাটমোহরে গতকাল ভোররাতে মহিলা কলেজ রোডে পণ্যবাহী ট্রাক ভাঙচুর করেছে অবরোধকারীরা। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছেন ট্রাকের চালক আবদুল হালিম (৪০)। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২ শিবিরকর্মী ও ২ বিএনপি নেতাকে আটক করেছে। পাবনা থেকে পণ্যবাহী ট্রাকটি চাটমোহরের উদ্দেশে ছেড়ে আসলে চাটমোহর পৌর সদরের মহিলা কলেজ রোডে অবরোধকারীদের হামলার শিকার হয়। পুলিশ আহত চালককে উদ্ধার করে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরে পুলিশ শিবিরকর্মী কাজী পাড়া মহল্লার সাদ্দাম (১৯) ও জয় (২০), মথুরাপুর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম (৩০) ও পৌর সদরের আফরাতপাড়া থেকে বিএনপি নেতা কালাম (২৪)-কে আটক করে। আটককৃতদের পাবনা জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, অবরোধ কর্মসূচি এবং আন্দোলন সংগ্রামকে কেন্দ্র করে মানিকগঞ্জে গত ১৫ দিনে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বিএনপির প্রায় ১০০ নেতাকর্মী ও সমর্থককে। মামলার আসামি হয়েছেন বিপুলসংখ্যক। আজ আবারও মানিকগঞ্জে সকাল সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জেলা বিএনপি।
নলছিটি (ঝালকাঠি) প্রতিনিধি জানান, ঝালকাঠির নলছিটিতে শনিবার গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধা ভবন ও আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পেট্রল বোমা নিক্ষেপ। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, রাতের আঁধারে কে বা কারা শহরের পোস্ট অফিস সড়কের উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ভবন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পেট্রল বোমা নিক্ষেপ করে। এতে দু’টি কার্যালয়ের দরজা পুড়ে যায়।
বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি জানান, বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়নের ধানাইদহ এলাকায় নাটোর-পাবনা মহাসড়কে শনিবার গভীর রাতে ৭টি পণ্যবাহী  ট্রাকে ভাঙচুর চালিয়েছে অবরোধকারীরা। রাত ১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত অবরোধকারীরা চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে ট্রাকগুলো ভাঙচুর করে। এদিকে ভাঙচুরে জড়িত সন্দেহে রমজান আলী (২২), আশরাফুল ইসলাম (৩০) ও জনাক আলী (২৮) নামে তিনজনকে পুলিশ আটক করেছে। তারা স্থানীয় বিএনপি কর্মী।
চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, চৌদ্দগ্রামে সন্ধ্যায় এক তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে যাওয়ার প্রস্তুতিকালে অধ্যাপক মফিজুর রহমানসহ পাঁচ জামায়াত নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বেশ কয়েকটি গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এ সময় পুলিশ শটগানের ৩২ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় শনিবার মধ্যরাতে থানার এসআই নুরুজ্জামান হাওলাদার, ইব্রাহিম ও এএসআই দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে ১৮৯ জনের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন।
ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীর দাগনভূঞায় ককটেল বিস্ফোরণ, সড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাঙচুর, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে দিয়ে যুবদলের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। রোববার দুপুরে ফেনী-নোয়াখালী সড়কের দাগনভূঞার সিলোনিয়া এলাকার হরতালকারীরা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করে। এ সময় তারা ৮-১০টি গাড়ি ভাঙচুর করে হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ করলে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর আগে সকালে দাগনভূঁঞার জিরো পয়েন্টে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ করে হরতালকারীরা। এদিকে ফেনীতে গাড়িতে আগুন ও ভাঙচুরের মধ্যে দিয়ে ৬ষ্ঠ দিনের মতো অবরোধ পালন করছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। পুলিশ নাশকতার অভিযোগে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ৯ জনকে আটক করেছে। এছাড়া সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশের বিভিন্ন স্থানে ৩-৪টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে অবরোধকারীরা। শনিবার মধ্যরাতে ফেনী-নোয়াখালী সড়কের মাতুভূঁঞা এলাকায় একটি ট্রাকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। শহরের পলিট্যাকনিক্যাল এলাকায় একটি সিএনজি অটোরিকশায় আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার নন্দীগ্রামে জাসদ নেতার কারগাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় নন্দীগ্রাম উপজেলা জাসদ নেতা জিয়াউল হক শাহীন তার নতুন ক্রয়কৃত কার নিয়ে বগুড়া থেকে নন্দীগ্রামে আসার পথে বগুড়া-নাটোর মহাসড়কে নন্দীগ্রামের শৈলগাড়ী নামক স্থানে কতিপয় দূর্বৃত্ত রাস্তায় গাছ ফেলে ব্যারিকেড দিয়ে কার গাড়িটি থামায়। এরপর দুর্বৃত্তরা জিয়াউল হক শাহীন ও তার সহযোগি রেজাউল করিমকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বেদম আঘাত করে। এতে তারা দু’জনেই গুরুতর আহত হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সকাল ৭টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কের ইসরাইল মোড় এলাকায় রাস্তার ওপর টায়ারে আগুন লাগিয়ে ঝটিকা মিছিল করে ছাত্রশিবির। একই সময়ে মুসলিমপুর নামক স্থানে রাস্তার গাছ কেটে ব্যারিকেড দেয় জামায়াত কর্মীরা। এদিকে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জর শহরের নয়াগোলা এলাকায় কয়েকটি অটোবাইক ভাঙচুর করে অবরোধকারীরা। অন্যদিকে শনিবার রাত ৮টার দিকে শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে শ্যামপুর ব্রিজের কাছে আওয়ামী লীগ কর্মী বাজিতপুর গ্রামের মৃত কুড়ান মণ্ডল ছেলে কালু (৩২)-কে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে দুর্বৃত্তরা। এর কিছুক্ষণ পর রাত ৯টার দিকে চামারহাট নামক স্থানে আওয়ামী লীগ কর্মী মো. ঝড়ুর ছেলে তরিকুল ইসলাম (৩৪)-কে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এসময় তার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। এদিকে জামায়াতের ইউনিয়ন আমীর ও সেক্রটারিসহ জামায়াত-বিএনপির ১৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, রাজশাহী গোদাগাড়িতে ট্রাকে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ও বিএনপির লাগাতার অবরোধ দমনে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে রাজশাহীতে বিএনপি ও জামায়াতের ২৩ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার ২৪ ঘণ্টার এ অভিযান চলাকালে মহানগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। গোদাগাড়ীতে ট্রাকে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় জামায়াত-শিবিরের ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
নড়াইল প্রতিনিধি জানান, নড়াইল পৌর মেয়র জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী, জেলা বিএনপির যুগ্মসম্পাদক মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাহবুব মোর্শেদসহ বিএনপির ৯ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে গাড়িতে আগুন দেয়ার অভিযোগে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা করা হয়। এদিকে, বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের শিকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আলী, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুব মোর্শেদ জাপল, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলামসহ ১৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এছাড়া ২৫ থেকে ৩০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) দেলোয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্টাপ রিপোর্টার, রূপগঞ্জ থেকে জানান, রূপগঞ্জ উপজেলার মৈকুলী এলাকায় ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে অবরোধকারীরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে।
শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, শেরপুরে পুলিশী বাধা উপেক্ষা করে অবরোধের সমর্থনে ২০-দলের বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তবে সমাবেশ করতে পারেনি। এ সময় পুলিশের সঙ্গে জোট নেতাকর্মীদের ধাক্কাধাক্কি ও বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে।
ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, রোববার দুপুরে অবরোধের সমর্থনে বের হওয়া বিএনপির মিছিলে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৬ জন। পুলিশ বিএনপির ৮ কর্মীকে আটক করেছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবরোধ সৃষ্টি করে কমপক্ষে ১৫-২০টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। দুপুরে ঘাটাইল উপজেলা বিএনপি নেতাকর্মীরা অবরোধ কর্মসূচি পালনের জন্য দলীয় কার্যালয়ে সমবেত হয়। পরে ৫ শতাধিক নেতাকর্মী বিএনপি কার্যালয় থেকে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি  কলেজ মোড়ে পৌঁছলে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় মিছিলে থাকা বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বাস, ট্রাক ও সিএনজি ভাঙচুরের চেষ্টা করলে  পুলিশ লাঠিচার্জ ও পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। উভয়ের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা উপজেলার কলেজমোড়, বীরঘাটাইল, গুনগ্রাম, বানিয়াপড়া, পোড়াবাড়ি, কুশারিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় অবরোধ সৃষ্টি করে ১৫-২০টি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় বাসের হেলপারসহ ৬ জন আহত হয়।
বাকৃবি প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ছাত্রদলের মিছিলে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। ভোর সোয়া ৭টার দিকে ইয়ার মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন জনির নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়াসিন মার্কেট থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ হয়ে প্রধান ফটক দিয়ে বের হয়ে যায়। পরে ময়মনসিংহের ক্যাওয়াটখালিতে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা সকালেরর নাস্তা করার সময় টহলরত পুলিশ তাদেরকে চলে যেতে বলে। এসময় ছাত্রদল পুলিশকে নাস্তা শেষ করে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু পুলিশ তা না শুনে তাদের উপর এলোপাতাড়ি গুলি, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে আহত হয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন জনিসহ প্রায় চার নেতাকর্মী।
কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি: ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকায় গাড়ি পোড়ানো মামলায় বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। গতকাল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামান তালুকদার বাদী হয়ে অগ্নিসংযোগ ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলাটি দায়ের করেন। জড়িত সন্দেহে আটক মো. সাকিল (২৫), নাজিম (৩৫) ও আবুল কাশেমকে (৫৫) গ্রেপ্তার দেখিয়ে এ মামলায় আসামি করা হয়। গতকাল দুপুরে তাদের আদালতে প্রেরণ করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ।
ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের সুতিপাড়া আকাশ সিএনজি পাম্পের পাশে রোববার ভোররাতে ঢাকাগামী  নিরাপদ পরিবহনের একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় বাসের যাত্রীরা লাফিয়ে নেমে পড়েন। এতে সড়কে সকল যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে ধামরাই ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ও ধামরাই থানা পুলিশ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও বাসটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এদিকে পুলিশ গত শনিবার সন্ধার পরপরই কেন্দ্রীয় বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খানের ধামরাইয়ের বালিয়া ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদের কালামপুর গ্রামের বাড়িসহ উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন নেতাকর্মীর বাড়ি বাড়ি তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.