গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দুর্বলতা স্পষ্ট

ব্যঙ্গাত্মক পত্রিকা শার্লি এবদো কার্যালয়ে জঙ্গি হামলায় নিহতদের
প্রতি সংহতি জানাতে শুক্রবার প্যারিসের আর্ক দো ত্রিয়ঁফ
সৌধে লেখা হয় ‘প্যারিসই শার্লি’ বার্তাটি। ছবি: রয়টার্স
এ সপ্তাহে ফ্রান্সে একাধিক জঙ্গি হামলা ও জিম্মি ঘটনার পর পাশ্চাত্যের গোয়েন্দা ও সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থাগুলোর দুর্বলতার চিত্র ফুটে উঠেছে। দেখা যাচ্ছে, সংস্থাগুলোর হাতে হামলাকারীদের বিষয়ে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হিসেবে আগাম তথ্য থাকে। তবে হামলার পরই কেবল সংস্থাগুলো তাদের হাতে থাকা তথ্য থেকে যোগসূত্রগুলো মেলাতে পারে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা থেকে শুরু করে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক হামলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব হামলার বিষয়ে তথ্য-উপাত্তের সমুদ্রের মধ্য থেকে একটি যোগসূত্র খুঁজে বের করা একটি বড় সমস্যা। সিআইএ এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার সাবেক পরিচালক অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল মাইকেল হেইডেন বলেন, ‘কোনো সমস্যা শুরু হলে আপনাকে সব তথ্য-উপাত্ত তলিয়ে দেখতে হবে।’ সিআইএর সাবেক প্রধান বিশ্লেষক ব্রুস রিডেল বলেন, ফ্রান্সের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর এ ক্ষেত্রে একটি সমস্যা আছে।
সেটি হচ্ছে যেসব নাগরিক সিরিয়া বা ইরাকে সন্ত্রাসী সংগঠনে যোগ দিতে সেখানে যাওয়ার পর দেশে ফিরেছে, তাদের কর্মকাণ্ডের ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারিটা তারা করতে পারে না।’ রিডেল বলেন, ‘এসব ফেরত আসা জিহাদি যদি আইন না ভাঙে, তবে একটি গণতান্ত্রিক সমাজে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা যায় না। আবার এদের পেছনে সব সময় নজরদারিও করা যায় না।’ প্যারিসের বিতর্কিত ব্যঙ্গাত্মক পত্রিকা শার্লি এবদোতে হামলাকারী বলে সন্দেহভাজন দুই ভাই সাইদ ও শেরিফ কোশিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের গোয়েন্দারা আগেই সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। তাঁদের নাম ১২ লাখ সম্ভাব্য সন্ত্রাসীর তথ্যসংবলিত ‘টাইড’ নামের একটি তালিকায় ছিল। কর্মকর্তারা বলছেন, শেরিফ কোশি ইরাকে আল-কায়েদার হয়ে লড়তে লোক জোগাড়ের দায়িত্বে ছিলেন। শেরিফের ভাই সাইদ ২০১১ সালে ইয়েমেনে আল-কায়েদার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। এ কারণে তাঁদের ওপর নজরদারি শুরু হয়। স্বাভাবিক জীবনে ফিরলে ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ নজরদারি বন্ধ করে দেয়। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশ করায় ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁরা গত বুধবার শার্লি এবদো দপ্তরে হামলা চালিয়ে সাংবাদিক, শিল্পী, পুলিশসহ ১২ জনকে হত্যা করেন। পরে পুলিশ ও বিশেষ বাহিনীর অভিযানে তাঁরাও নিহত হন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নজরদারির ক্ষেত্রে একটি প্রাধান্যের তালিকা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.