অঞ্জলীকে অনুসরণ করতো সন্ত্রাসীরা

চট্টগ্রামে দিনেদুপুরে নার্সিং কলেজের শিক্ষিকা অঞ্জলী দেবীকে হত্যার ঘটনায় পরিবারের ৫ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তবে এ ব্যাপারে তারা কেউ মুখ না খুললেও পুলিশের ধারণা, কর্মস্থলে সহকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব হওয়ার কারণে এ ঘটনায় কেউ জড়িত থাকতে পারে। পাশাপাশি পারিবারিক বিরোধের বিষয়েও অনুসন্ধান করতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলম মানবজমিনকে বলেন, পুরো ঘটনাটি পরিকল্পিত। যারা ঘটিয়েছে তারা অনেক দিন ধরেই অঞ্জলী দেবীর গতিবিধির দিকে খেয়াল রাখছিল। খুনের আগেও তারা বিভিন্ন সময় বাড়ির আশপাশে অবস্থান করছিল বলে আমরা সন্দেহ করছি। তিনি আরও বলেন, অঞ্জলী দেবীর স্বামী রাজেন্দ্র লাল চৌধুরী, বড় মেয়ে অর্পিতা চৌধুরী, ছোট মেয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী সঙ্গীতা চৌধুরী, বাড়ির দারোয়ান রণজিতসহ ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা কেউই হত্যার ব্যাপারে কিছু বলছেন না। বিষয়টি রহস্যজনক মনে হচ্ছে। গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা দায়েরের পর থেকে কাউকেই গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে ভাড়াটে খুনি ও আশপাশের মানুষজনের কাছ থেকে খুনিদের বিবরণ জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তার কর্মস্থলে বেশ কয়েক দিন আগে অধ্যক্ষের অপসারণ নিয়ে আন্দোলন হয়। সেই আন্দোলনে তার ভূমিকার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে রাজেন্দ্র লাল চৌধুরীর প্রথম সংসারের কারও সঙ্গে কোন বিরোধ রয়েছে কিনা তাও অনুসন্ধান করবে পুলিশ। খুনিরা যে কেবল তাকেই খুন করতে এসেছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় অঞ্জলীর পাশে পড়ে থাকা ব্যাগ ও মোবাইলের চিত্রে। কেননা ছিনতাইকারী হলে এগুলো নিয়ে চলে যেতো। পারিবারিক সূত্র জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ৮টায় তেলোপট্টির সেই নিজের বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থল নার্সিং কলেজের দিকে যাচ্ছিলেন অঞ্জলী দেবী। এ সময় বাসার ঠিক ৩০-৪০ গজ দূরে যেতেই তিনি পেছনে ফিরেন। তার গতিরোধ করে ৪ সন্ত্রাসী দাঁড়ালে তিনি তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় তাদের একজন কয়টা বাজে বলে অঞ্জলীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। ৩০ সেকেন্ড দাঁড়ানোর পরই খুনিরা ফাঁকা রাস্তায় তাকে একা পেয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। প্রথমে তার মাথায় আঘাত করা হয়। এরপর ৩টি কোপ দেয়া হয় পিঠে ও ঘাড়ে। আশপাশের লোকজন এ ঘটনা দেখে এগিয়ে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র থাকায় তারা সাহস করেননি। এক ব্যক্তি দূর থেকে পাথর ছুড়লে সন্ত্রাসীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর সেখানে অতিরিক্ত রক্ষক্ষরণ হলে সাড়ে ১১টায় তার মৃত্যু হয়। ঘটনার সময় অঞ্জলী দেবীর স্বামী রাজেন্দ্র লাল বাথরুমে ছিলেন। তিনি জানান, বাড়ির দারোয়ান রণজিত তাকে প্রথমে হত্যার কথা জানান। এরপর দ্রুত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। স্ত্রী হত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. রাজেন্দ্র লাল চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, আমি ফতেয়াবাদ এলাকায় প্রাইভেট ডাক্তারি করি। আমার স্ত্রী ২৩ বছর ধরে নার্সিং কলেজের শিক্ষক। কোন দিন কারোর সঙ্গে দুই কথা হয়নি। কিন্তু কেন তাকে এভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো তা জানি না। আমরা যে মামলা করবো তার কোন কারণও খুঁজে পাচ্ছি না। সন্ত্রাসীরা আসলেই কি অঞ্জলী দেবীকে মারতে এসেছিল? আমি এ খুনের বিচার চাই। অঞ্জলি দেবীর দুই মেয়ে। বড় মেয়ে অর্পিতা চৌধুরী। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষানবিশ চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছেন। ঘটনার পরপরই তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমার মায়ের সঙ্গে কোন বিরোধ নেই কারোর। তিনি কলেজে কেমন শিক্ষক ছিলেন তা তার সহকর্মীরা ভাল বলতে পারবেন। কিছুদিন আগে তার কলেজে অধ্যক্ষের অপসারণ নিয়ে আন্দোলন হয়েছিল। কিন্তু আমার মা সেসব ঝামেলার বাইরে ছিলেন। তিনি সব সময় ঝামেলা এড়াতেন। বাসা থেকে কেবল কলেজেই যেতেন। একই রকম অভিমত ব্যক্ত করে ছোট মেয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী সঙ্গীতা চৌধুরী বলেন, খবরটি শুনে মনে হলো কোন পৈশাচিক ঘটনার খবর শুনলাম। আমার মাকে এভাবে খুন করবে কে? যারা হত্যা করেছে তাদের উদ্দেশ্য কি ছিল। চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মিনারা খানম বলেন, কলেজে তার সঙ্গে কোন দিন বিরোধ তৈরি হয়নি কারোর। তিনি ছিলেন চুপচাপ। আমরা তার ঘটনার বিচার চাচ্ছি। এ ঘটনায় সবার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নগর পুলিশের পাঁচলাইশ জোনের সহকারী কমিশনার দীপকজ্যোতি খিসা বলেন, ঘটনাটি নৃশংস। খুনের আলামত দেখে বোঝা যাচ্ছে পূর্বপরিকল্পিত। এ ঘটনায় পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ঘটনাটি বেশ রহস্যজনক। কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে আজকালের মধ্যে আশা করছি ধরা পড়ে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.