মুখোমুখি দু’পক্ষ- ঢাকায় আওয়ামী লীগের শোডাউন, ২০ দলের হরতাল

ফের মুখোমুখি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আজ রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউন করার প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। একই দিনে ঢাকার আশপাশের চার জেলায় হরতাল ডেকেছে ২০ দল। আর ঢাকা বিভাগের ১৬ জেলায় হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। আওয়ামী লীগের সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগমের প্রস্তুতি নিলেও গতকাল রাত পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি নিয়ে ছিল ধূম্রজাল। রাতে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, রাত পর্যন্ত অনুমতির বিষয়টি তারা নিশ্চিত হননি। তবে অনুমতি পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশার কথা জানান তারা। অন্যদিকে ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা জানান, আওয়ামী লীগকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে রাতে। কিন্তু কোন কর্মকর্তাই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি। ঢাকায় গত ৪ঠা জানুয়ারি থেকে সব ধরনের সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করে আওয়ামী লীগের সমাবেশ অনুমতি নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। এমন ধূম্রজালের মধ্যেই আজ দুই পক্ষের মাঠের কর্মসূচি ঘিরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
ব্যাপক লোক সমাগম করবে আওয়ামী লীগ: বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আজকের সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগমের লক্ষ্য রয়েছে। বেলা ২টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে এ সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আজকের জনসভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও বক্তব্য দেবেন। ১০ই জানুয়ারি এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার জন্য জনসভার তারিখ পিছিয়ে তা ১২ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। এ বিষয়ে ৮ই জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইজতেমার বিষয়টি ভাবনায় রেখে জনসভাটি ১০ই জানুয়ারির পরিবর্তে ১২ই জানুয়ারি (আজ) হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। গত ৪ঠা জানুয়ারি উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজধানীতে সভা, সমাবেশ, মিছিল নিষিদ্ধ করেছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এদিকে সমাবেশে কয়েক লাখ লোকের সমাবেশ ঘটাতে চায় আওয়ামী লীগ। জনসভাকে সফল করার লক্ষ্যে দলের বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমণ্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যলায়ে গত কয়েক দিন ধরে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করেছে আওয়ামীলীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে। ধানমণ্ডিতে সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় শনিবার। এদিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যৌথসভায় মিলিত হন ঢাকা মহানগর ও তার পার্শ্ববর্তী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার এমপিরা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিমসহ অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা। বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ আজকের জনসভা সফল করতে ঢাকা মহানগর আওয়ামীলীগসহ দলের সবাইকে সর্বাত্মকভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ ও ঢাকা মহনগরের একাধিক নেতা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা প্রায় অভিন্ন সুরে বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সোমবারের সমাবেশ সফল করার জন্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনা কেন্দ্র থেকে দেয়া হয়েছে। জনসভায় যাতে ব্যাপক লোকসমাগম হয় সেজন্য ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো থেকে ব্যাপক লোকসমাগমের কথা বলা হয়েছে। এদিকে আজকের সমাবেশকে সফল করতে গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এক বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। বর্ধিত সভায় বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামসহ মহানগরের অন্য নেতারা। বক্তব্যে তারা মহানগরের প্রতিটি থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিটের নেতাকর্মীদের বেলা ২টা বাজার আগেই সভাস্থলে পৌঁছার নির্দেশ দেন। তারা বলেন, ১২ই জানুয়ারির (আজ) সমাবেশকে জনসমুদ্রে রূপান্তরিত করতে যা যা করা দরকার তার সবই করা হবে।
রাজধানী ঘিরে ২০ দলের হরতাল: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা ও শীর্ষ নেতাদের মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদ এবং নেতাদের মুক্তির দাবিতে রাজধানীর চারপাশে ৪ জেলাসহ সারা দেশে ৭ জেলায় হরতাল ডেকেছে ২০ দল। ফেনীতে সোমবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ২০ দলীয় জোট। পাশাপাশি একই ঘটনায় ঢাকা জেলাসহ ১৬ জেলায় হরতাল ডেকেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। গতকাল মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হাই, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার, মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ড. মোখছেদুর রহমান আলাদা ব্রিফিং ও বিবৃতিতে এ হরতালের ঘোষণা দেন। ওদিকে ঢাকাসহ ১৪ জেলায় সোমবার হরতাল ডেকেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। গতকাল ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। হরতাল ডাকা জেলাগুলো হলো- ঢাকা, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা (উত্তর ও দক্ষিণ), ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর ও নেত্রকোনা। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান সংশ্লিষ্ট জেলা ছাত্রদল নেতাকর্মীদের হরতাল সফল করার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া আলাদাভাবে হরতালের ডাক দিয়েছে টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রদল। গতকালের হরতালের সময়সীমা বাড়িয়ে আগামীকাল ভোর ৬টা পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করেছে বগুড়া জেলা ২০ দল। নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে হরতাল ডেকেছে ফেনী জেলা ২০ দল। এছাড়া নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলায় হরতাল ডেকেছে উপজেলা বিএনপি। এদিকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)। হরতালে দেশের ব্যবসা, যান, মাল ও সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় এ উদ্বেগ প্রকাশ করে সংগঠনটি।
আটকের পর ৫ নেতা নিখোঁজ, দাবি ছাত্রদলের: এদিকে পুলিশের হাতে আটকের পর রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের ৫ নেতা নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করেছে ছাত্রদল। গতকাল বিকালে ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, শুক্রবার আটকের পর থেকে ওই ৫ ছাত্রনেতার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশও এ ব্যাপারে কিছু বলছে না। নিখোঁজ ছাত্রনেতারা হলেন- কলেজ শাখা ছাত্রদলের সমাজসেবা সম্পাদক জসীম উদ্দিন (বিএ-৩য় বর্ষ), সদস্য সুজন চন্দ্র দাস (ব্যবস্থাপনা-৩য়), রোমান আহম্মেদ (ব্যবস্থাপনা-৩য়), কেএম নাজমুল হাসান নিহাত (ইংরেজি-৪র্থ) ও ইরফান আহম্মেদ ফাহিম (বিএসএস-২য় বর্ষ)। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক জহির উদ্দিন জানান, কবি নজরুল কলেজের ছাত্রদলের সমাজসেবা সম্পাদক জসীমকে গত শুক্রবার পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। জসীমের সন্ধান না পেয়ে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে সারা দিন যোগাযোগ করা হলেও কেউ ফোন রিসিভ করেনি। এরপর শনিবার সন্ধ্যার পরে জসীমের ফোন থেকে কল করে নিখোঁজ বাকি চারজনকে ভিক্টোরিয়া পার্কে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে এরা যাওয়ার পর জসীমের পাশে ডিবি পুলিশকে দেখতে পায়। তারা আর সরে আসতে পারেনি, তাদেরও ডিবি ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের আটকের কথা ডিবি স্বীকার করেনি। এ বিষয়ে সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, ভিক্টোরিয়া পার্কের আশপাশ থেকে শনিবার রাতে ও গতকাল সন্দেহভাজন হিসেবে কয়েকজন আটক করা হয়েছে। তবে তিনি আটককৃতদের নাম জানাননি।

No comments

Powered by Blogger.