বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপযোগী ব্ল্যাকবেক্স আগ্রহ বাড়ছে

সাগরতল থেকে ওপরে তুলে আনার পর ভাসছে এয়ারএশিয়ার
উড়োজাহাজের পেছনের অংশের একটি টুকরা। ছবি: এএফপি
দুর্ঘটনা হলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এমন (ইজেকটেবল) ‘ব্ল্যাকবক্স’ রেকর্ডার বাণিজ্যিক উড়োজাহাজে সংযুক্ত করার প্রস্তাব অনেক আগের। নানা কারণে এত দিন সেই প্রস্তাব হালে পানি পায়নি। তবে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের ফ্লাইট৮৯ এমএইচ ৩৭০ উধাও হয়ে যাওয়া ও এয়ারএশিয়ার ফ্লাইট কিউজেড ৮৫০১ ট্র্যাজেডির প্রেক্ষাপটে প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা জেগেছে। প্রস্তাবটি সংশ্লিষ্ট মহলে গৃহীত হলে বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ব্যবহৃত প্রতিটি উড়োজাহাজে ‘ইজেকটেবল’ ব্ল্যাক বক্স থাকবে। এর সুবিধা হচ্ছে, কোনো কারণে বিমানপোতটি বিধ্বস্ত হলে ব্ল্যাক বক্সটি তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে সাগরে পড়লে ব্ল্যাক বক্সটি পানিতে ডুবে যাওয়ার পরিবর্তে ভাসতে থাকবে। বছরের পর বছর প্রস্তাবটি ঘুরছে জাতিসংঘের বিমান পরিচালনাসংক্রান্ত বৈশ্বিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) বিভিন্ন কমিটির দ্বারে দ্বারে। তবে সংস্থাটির আসন্ন একটি উচ্চপর্যায়ের নিরাপত্তা সম্মেলনের আলোচ্য সূচিতে এটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে সংস্থাটির কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আইসিএও এমন একটি বৈশ্বিক পদ্ধতি দাঁড় করাতে চায়, যার মাধ্যমে উড়োজাহাজের অবস্থান শনাক্ত প্রক্রিয়ার আরও উন্নয়ন ঘটানো ও দুর্ঘটনার স্থান অতি দ্রুত নিশ্চিত করা যাবে। গত বছর মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজটি রহস্যজনকভাবে লাপাত্তা হওয়ার পর সংস্থাটি যেসব পদক্ষেপ নেয়, তার আওতায় ওই পদ্ধতি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। আইসিএওর একজন প্রতিনিধি রয়টার্সকে বলেন, ইজেকটেবল রেকর্ডার ব্যবহারের বিষয়টিতে গভীরভাবে দৃষ্টি দেওয়ার সময় এসেছে। বিষয়টি সংবেদনশীল হওয়ায় তিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি। প্রস্তাবটির ব্যাপারে ওয়াকিবহাল আইসিএওর আরেক কর্মকর্তা বলেন, বাণিজ্যিক উড়োজাহাজগুলোতে ইজেকটেবল রেকর্ডার লাগানোর পক্ষে সবার মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত উড়োজাহাজের ব্ল্যাক্স বক্স পাওয়া অনেক সময়ই কঠিন,
সময়সাপেক্ষ এমনকি অসম্ভব হয়ে ওঠে। ২০০৯ সালের জুন মাসে ২২৮ আরোহী নিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরে বিধ্বস্ত হয় এয়ার ফ্রান্সের ফ্লাইট ৪৪৭। এর ব্ল্যাক বক্স পাওয়া যায় ২০১১ সালে। আইসিএও যে মান নির্ধারণ করে দেয়, তা বেশির ভাগ আন্তর্জাতিক ফ্লাইটই অনুসরণ করে। কারণ তাদের দিকনির্দেশনা ১৯১ সদস্য দেশকে মেনে চলতে হয়। ২০১২ সালে আইসিএওর ফ্লাইট রেকর্ডার প্যানেল দুর্ঘটনার স্থান শনাক্ত সহজ করতে একটি মান প্রস্তাব করে। ইজেকটেবল রেকর্ডার লাগানোর বিষয়টিও এতে ছিল। তবে ‘পুনর্বিবেচনা’ করতে সেটি দুবার প্যানেলের কাছে ফেরত পাঠায় আইসিএওর প্রভাবশালী এয়ার নেভিগেশন কমিশন। ষাটের দশকেই ইজেকটেবল রেকর্ডার তৈরি করে কানাডা সরকারের জাতীয় গবেষণা কাউন্সিল। এরপর মার্কিন নৌবাহিনীর এফ/এ-১৮ যুদ্ধবিমানসহ হাজার হাজার যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারের মতো বিভিন্ন ছোট আকাশযানে যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়েছে। সামরিক রেকর্ডারগুলো উড়োজাহাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পানির ওপরে ভাসতে পারে এবং নিজের অবস্থান জানাতে উদ্ধারকারী স্যাটেলাইটে সংকেত পাঠিয়ে থাকে। তবে বাণিজ্যিক উড়োজাহাজের প্রথাগত রেকর্ডারগুলো পানিতে পড়লে ডুবে যায়। আর পানির নিচে কেবল স্বল্প একটা দূরত্ব পর্যন্ত সেগুলোর সংকেত ধরা পড়ে। এতে করে অবস্থান শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। আধুনিক বাণিজ্যিক উড়োজাহাজগুলোতে দুটি স্থায়ী রেকর্ডারের জায়গা রয়েছে। একটির জায়গায় ইজেকটেবল রেকর্ডার লাগিয়ে নিলেই চলে। কিন্তু খরচ নিয়ে উদ্বেগ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণে সেটি করা হচ্ছে না। এগুলোর প্রতিটির দাম কমবেশি ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। আর বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হানিওয়েল ইন্টারন্যাশনালের তৈরি প্রথাগত একটি ব্ল্যাক বক্সের দাম ১৩ থেকে ১৬ হাজার মার্কিন ডলার। প্রতিষ্ঠানটির একজন মুখপাত্র বলেন, আইনি কোনো প্রয়োজনীয়তাও নেই, আবার গ্রাহকদের চাহিদাও তেমন নেই। তাই তাঁদের কোম্পানি ইজেকটেবল রেকর্ডার তৈরি করে না। সূত্র: রয়টার্স

No comments

Powered by Blogger.