চরাচর-শিশু দিবস by তামান্না ইসলাম অলি

আজ ২০ নভেম্বর। আন্তর্জাতিকভাবে এ দিনটিকেই বিশ্ব শিশু দিবস হিসেবে উদ্যাপন করা হয়। শৈশবকে সম্মান জানানোই এ দিনটির মূল উদ্দেশ্য।
তবে প্রতিটি দেশই নিজেদের মতো করে এ দিনটি উদ্যাপন করে। শিশু দিবসের শুরু হয়েছিল ১৯২০ সালের ২৩ এপ্রিল তুরস্কে।
পরে ১৯২৫ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জুন মাসের ১ তারিখকে শিশু দিবস ঘোষণা করা হয়। তবে বিশ্বব্যাপী তা উদ্যাপন করা হয় ১৯৫৫ সালের অক্টোবর মাসে। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর চাইল্ড ওয়েলফেয়ারের সহযোগিতায় জেনেভায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এরপর ১৯৫৯-এর ২০ নভেম্বর শিশু অধিকার ঘোষণা করেছিল যুক্তরাজ্যের কার্যকরী পরিষদ। এর পর থেকেই এ দিনটিকে শিশু দিবস হিসেবে ধরা হয়। 'আজকের শিশু আগামীদিনের সম্ভাবনা'_এই আপ্ত বাক্যটি এখন প্রমাণিত সত্য। একজন শিশু কতটা দক্ষ হিসেবে গড়ে উঠল, তার ওপর নির্ভর করে গোটা জাতির উন্নয়ন। সে জন্য দরকার শিশুর বেড়ে ওঠার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। তাই শিশুদের দায়িত্বশীল করে গড়ে তোলার দায়িত্ব অনেকটাই রাষ্ট্রের।
একজন সুনাগরিকের কাজ কী? জীবনের শুরুতে একজন শিশুকে তা জানিয়ে দেওয়া শিশু দিবস পালনের একটা লক্ষ্য, যেমন_কেউ যেন তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটা তার মনে বিশ্বাস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দেওয়া দরকার। তাদের জানাতে হবে, সবার আগে তাদের এ কথা মনে রাখতে হবে যে তাদের কাছ থেকে কেউ যেন কষ্ট না পায়। সেটা মা-বাবা থেকে শুরু করে রাস্তার ছিন্নমূল মানুষটি পর্যন্ত হতে পারে, কারণ কাউকে কষ্ট দেওয়া খুব সহজ; কিন্তু আনন্দ দেওয়াটা অনেক কঠিন। আর আনন্দ দেওয়ার কঠিন কাজটি যেন তারা সহজ করে নিতে পারে, সে বিষয়টিও শিশুর মনে গেঁথে দেওয়া দরকার। আর এ জন্য শিশু দিবস পালনের মতো আনুষ্ঠানিকতা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
দেশের প্রতি দায়িত্বশীলতা শেখার উপযুক্ত সময়ই শৈশবকাল। ছোটবেলায় তার মনের মধ্যে বিশ্বাস সৃষ্টি হওয়া উচিত যে 'দেশের সম্পদের ক্ষতি হলে তা সবারই ক্ষতি', যে কারণে ছোটবেলা থেকেই অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, কোনো কিছু অপচয় না করার। এই কাজগুলো শিশু নিজে যেমন করবে না, করতে দেবে না অন্যকেও। মোদ্দা কথা, শিশুর মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগাতে হবে জীবনের শুরুতে। আর এ জন্য একটা উপলক্ষ চাই। তেমনই একটি উপলক্ষ বিশ্ব শিশু দিবস।
এখন বিশ্ব শিশু দিবসে আমরা দেখব, বাংলাদেশের শিশুদের সার্বিক অবস্থাটা কেমন। বাংলাদেশের মোট শিশুর একটি বড় অংশ এখনো রয়ে গেছে সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণীর পরিবারে। বিভিন্ন জরিপ সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, গোটা দেশে পথশিশু আছে প্রায় সাড়ে চার লাখ, যাদের ৭৫ শতাংশই বাস করে ঢাকা শহরের বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট ও ফুটপাতে। আমাদের চার কোটি মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এদের নিজেদের জমি নেই। প্রতিবছরই তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়, এদের মধ্যে কিছুসংখ্যক বেঁচে থাকার তাগিদে গ্রাম ছেড়ে শহরে আসে। তাদের পরিবারের শিশুরাই আশ্রয়হীন হয়ে পথশিশু হয়ে দাঁড়ায়। এরা জানেও না শিশু দিবস কী।
তামান্না ইসলাম অলি

No comments

Powered by Blogger.