বউবাজার অগি্নকাণ্ড-প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি

ঘুম ঢুলুঢুলু চোখে দাউ দাউ আগুনের শিখার কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ। শনিবার শেষ রাতে রাজধানীর হাজারীবাগের বউবাজার বস্তিতে অগি্নকাণ্ডে ১১ জন নারী ও শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুর প্রতিবেদন এভাবেই এসেছে বিভিন্ন সংবাদপত্রে।
এমন করুণ মৃত্যু আর কত! আগুন নেভানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের চরম অসহায়ত্বও ফুটে উঠল এই ভয়াল অগি্নকাণ্ডের ঘটনায়। বস্তিতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যাবে, কিন্তু পথ অতিশয় সংকীর্ণ, আগুন নেভাতে সবচেয়ে জরুরি যে উপকরণ পানি, তার অপ্রতুলতা কিংবা একেবারেই না মেলা, বস্তির সর্বত্র বিপুল দাহ্য পদার্থের উপস্থিতি এবং গায়ে গায়ে লাগানো বস্তি ঘরের আশেপাশেই দোকান এবং পাকা ভবনের সারি। এসব কারণে বস্তিতে আগুন লাগলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হয় বিপুল। আগুন নেভানো ফায়ার সার্ভিসের কাজ, বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে কি-না কিংবা বস্তি নির্মাণ বৈধ কি-না, সেটা তাদের দেখার কথা নয়। কিন্তু পুরান ও নতুন ঢাকায় বড় ধরনের অগি্নকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে অভিযোগের তীর নিক্ষিপ্ত হয় ফায়ার সার্ভিসের প্রতিই। অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে ওঠা শহরের দায় তাদের ওপর চাপানো অনুচিত। কিন্তু যেভাবে অগি্নকাণ্ডে জানমালের ক্ষতি হচ্ছে তাতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কার্যকর সমন্বয় সাধন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। পারস্পরিক দোষারোপের বিন্দুমাত্র সুযোগ এখানে নেই। বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রের রাজধানীতে বস্তিবাসী থাকবেই। দরিদ্র ও হতদরিদ্র লাখ লাখ মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই এই বস্তি। সরকারি জমি জবরদখল কিংবা নানা রকম ধান্ধাবাজি করে যারা বস্তি তোলে এবং পুলিশ ও প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ সহায়তা ও মদদে এসব বস্তি থেকে ভাড়া আদায় করে, তারা রাজধানীর আবাসন সংকটের সুযোগ নিচ্ছে। এই টাউটদেরকে হটিয়ে দিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আবাসনের ব্যবস্থা সরকার করে দেবে, নিকট ভবিষ্যতে এমন প্রত্যাশাও বৃথা। কয়েক মাসের ব্যবধানে বউবাজার, মহাখালী, বেগুনবাড়ীসহ কয়েকটি বস্তিতে বড় ধরনের অগি্নকাণ্ডের ঘটনা ঘটল। ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বস্তিতে অগি্নকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে কীভাবে জানমাল রক্ষা করতে হবে, সে বিষয়ে কয়েকটি বস্তিতে প্রচারাভিযান পরিচালনার দাবি করেছিল। কিন্তু সর্বশেষ বউবাজার বস্তির অগি্নকাণ্ড থেকে বলা যায়, অন্তত এ ক্ষেত্রে জানমাল রক্ষার প্রস্তুতি তাদের মধ্যে দেখা যায়নি। হতে পারে যে এই বস্তিতে অগি্নকাণ্ড সংক্রান্ত সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালিত হয়নি। কিন্তু এখন তো বেতার-টিভি রয়েছে অতিদরিদ্র পরিবারেও। অগি্নপ্রতিরোধে এবং দুর্ঘটনায় আত্মরক্ষার কৌশল তো গণমাধ্যমে তাদের কাছে পেঁৗছানো সম্ভব। এর সুবিধা আরও ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর জানিয়েছেন, সারাদেশে আরও ১৫৬টি ফায়ার স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ উদ্যোগ যেন ফাইলের স্তূপে চাপা না পড়ে, বরং দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয় সেটাই প্রত্যাশিত। আগুন নেভাতে পানির বিকল্পও ভাবতে হবে। অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং ভূমিদস্যুদের আগ্রাসনে রাজধানীর জলাধারগুলো একের পর এক বিলীন হয়ে গেছে_ এ বাস্তবতাও বিবেচনায় রাখা চাই। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের প্রতিদিন কাজ থাকে না। কিন্তু যখন দুর্ঘটনা ঘটে তখন যেন তারা সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন, সেভাবেই তাদের প্রস্তুত রাখা দরকার। বউবাজার অগি্নকাণ্ডে নিহতদের স্বজনের প্রতি আমাদের শোক ও সমবেদনা। অসহায় বস্তিবাসী যাতে নতুন করে জীবন শুরু করতে পারে সে জন্য সরকার সাধ্যমতো সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে, এটাও প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.