মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে পিপিপি, বিপাকে গিলানি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির জন্য রাজনীতিতে ফিরে আসার পথ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। যে দলের প্রতি আনুগত্য দেখাতে গিয়ে গিলানি আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রীত্বের সঙ্গে পার্লামেন্ট সদস্যপদ হারিয়েছেন, সেই পাকিস্তান পিপলস পাটিই (পিপিপি) তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
বিশ্লেষকদের অভিমত, পিপিপি নেতৃত্বাধীন সরকার দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গিলানি ও তাঁর ছেলেদের রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চালুর বিষয়ে সুইজারল্যান্ডে চিঠি না পাঠানোয় গত এপ্রিলে গিলানি আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন। সংবিধান অনুযায়ীই প্রেসিডেন্ট জারদারি দায়মুক্তি ভোগ করছেন- এ যুক্তিতে চিঠি না পাঠানোর ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান নেন তিনি। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে গত জুনে প্রধানমন্ত্রীত্ব ও পার্লামেন্টের সদস্যপদ হারান গিলানি। সুপ্রিম কোর্টে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আগামী বছর সাধারণ নির্বাচনেও অংশ নিতে পারবেন না তিনি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দলের স্বার্থ দেখতে গিয়ে বেকায়দায় পড়া গিলানির বিরুদ্ধে এবার তাঁর দলই বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফআইএ) হজ দুর্নীতি মামলায় গিলানি ও তাঁর বড় ছেলে আবদুল কাদের গিলানির বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করেছে। খোদ পিপিপির এক পক্ষের নেতারাই এ নোটিশের ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিপিপির জ্যেষ্ঠ এক মন্ত্রী পাকিস্তানের ডন পত্রিকাকে বলেন, 'সবদিক থেকেই সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা এফআই কেন গিলানি পরিবারকে তাড়া করছে বুঝতে পারছি না। পুরো বিষয়টিকে খুবই অযৌক্তিক মনে হচ্ছে।'
নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লিগের (পিএমএল-এন) এমপি পীরজাদা ইমরান আহমেদ শাহ ২০১০ সালের ডিসেম্বরে অভিযোগ করেন, আবদুল কাদের গিলানি হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন। বিনিময়ে রাও শাকিল আহমেদ নামের এক ব্যক্তিকে হজ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেন এবং ঘুষের এক কোটি রুপি দিয়ে একটি গাড়ি কেনেন। গিলানিও এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়। গিলানির দুই ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির আরো অনেকগুলো মামলা রয়েছে।
গত বুধবার আবদুল কাদির গিলানি হুমকি দিয়েছেন, তাঁদের ওপর থেকে এফআইএয়ের নোটিশ প্রত্যাহার করা না হলে, জাতীয় পরিষদ থেকে তিনি ও তাঁর ভাই পদত্যাগ করবেন। জাতীয় পরিষদে দেওয়া ভাষণে তিনি জানান, 'পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে' উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিকও তাঁদের সাহায্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট জারদারির সঙ্গে গিলানির সম্পর্কে কোনো দূরত্ব তৈরি হয়েছে কি না, পার্লামেন্টের বাইরে এ ব্যাপারে আবদুল কাদিরকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। কাদির জবাব দেন, 'তাঁদের সম্পর্ক এখনো ভালো। তবে রাজনীতিতে সবই সম্ভব।'
জুনে প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়ার পর গিলানি প্রেসিডেন্টের বাসভবনে গিয়ে ওঠেন। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন। গুজব ওঠে, দলের নেতৃত্ব নিয়ে জারদারির সঙ্গে বিরোধের জের ধরেই প্রেসিডেন্টের বাসভবন ছেড়ে দেন গিলানি। তিনি বর্তমানে পিপিপির ভাইস চেয়ারম্যান পদে আছেন। বলা হয়, বিরোধ মেটাতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরাফ নিজে গিয়ে গিলানিকে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ফিরিয়ে আনেন। তবে পরিবারের জন্য বেশি জায়গা দরকার_এই কথা বলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পার্শ্ববর্তী সিন্ধু হাউসে উঠেছেন গিলানি। পিপিপি ও সরকারের বিরুপ আচরণের কারণেই গিলানির পরিবার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ধারণা করছে সংবাদমাধ্যমগুলো। সূত্র : ডন।

No comments

Powered by Blogger.