বরিশালের জনসভায় খালেদা জিয়া- ‘সুযোগ দিন, দেশের চেহারা পাল্টে দেব’ by সেলিম জাহিদ ও সাইফুর রহমান

ক্ষমতায় গেলে ব্যাপক উন্নয়ন করে দেশের চেহারা পাল্টে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা যদি সুযোগ দেন, আমি যদি বাংলাদেশের এ চেহারা পরিবর্তন করতে না পারি, তাহলে যে শাস্তি দেবেন, মাথা পেতে নেব।’
গতকাল সোমবার বিকেলে বরিশালের বেলস পার্ক মাঠে (বঙ্গবন্ধু উদ্যান) এক বিশাল জনসভায় খালেদা জিয়া এ প্রতিশ্রুতি দেন।
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘আমরা দেশ থেকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গি দূর করব। ব্যাপক উন্নয়ন করে শুধু ঢাকা শহর নয়, পুরো দেশের চেহারা পাল্টে দেব। কোনো দল, ধর্মের ভেদাভেদ করব না আমরা। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সবাইকে মূল্যায়ন করব।’
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট এ জনসভার আয়োজন করে। বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা থেকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ জোটের শরিক দলগুলোর নেতা-কর্মীরা সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জনসভায় যোগ দেন। খালেদা জিয়া ৩৬ মিনিট বক্তব্য দেন। এ সময় বেলস পার্ক মাঠ ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। মাঠে জায়গা না পেয়ে অনেকে আশপাশের সড়কে দাঁড়িয়ে থেকে বক্তৃতা শোনেন।
বক্তব্যের শুরুতে খালেদা জিয়া বলেন, এ জনসভা প্রমাণ করে, এই সরকারকে দেশের মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। কেন চায় না? প্রশ্ন করে তিনি নিজেই বলেন, কারণ, তারা ক্ষমতায় আসে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলে; কিন্তু কারও জন্য কিছু করে না, করে শুধু নিজেদের জন্য।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে থাকা দলগুলোকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘অন্য দল, এখনো যারা চোরদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে আছেন, তাঁদের বলব, চোরদের থেকে বেরিয়ে আসুন। নইলে কিন্তু তাদের দায়ভার আপনাদেরও বহন করতে হবে।’
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ চার বছরে দেশকে কিছুই দিতে পারেনি। যদি কিছু পেতে চান, ছেলেমেয়েদের চাকরি চান, জীবনের নিরাপত্তা চান, তাহলে আগামী দিনে বিএনপি এবং জোটের পেছনে ঐক্যবদ্ধ হোন।’ তিনি বলেন, ‘জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আমাদের চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। এই দেশ এবং দেশের ছেলেমেয়ের মুখে হাসি ও সুন্দর ভবিষ্যৎ দেখতে চাই।’
ক্ষমতায় গেলে খালেদা জিয়া মাওয়া ও আরিচায় দুটি পদ্মা সেতু নির্মাণ, বরিশালে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠা, কুয়াকাটাকে পূর্ণাঙ্গ পর্যটনকেন্দ্র করা এবং নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
‘আওয়ামী লীগের ধর্মনিরপেক্ষতা হচ্ছে মুখোশ মাত্র’—এ মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে পরাগ মণ্ডলকে ছাত্রলীগ অপহরণ করেছে। শোনা যায়, এর সঙ্গে এক মন্ত্রীর ভাগনেও জড়িত।’ তিনি বলেন, ‘কোনো ধর্মের মানুষ আওয়ামী লীগের হাতে নিরাপদ নয়। তারা সব ধর্মের মানুষের ওপর আঘাত করে। হিন্দু ভাইদের ওপর আঘাত করেছে, তাদের মন্দির দখল করেছে, মন্দির থেকে স্বর্ণালংকার চুরি করেছে। খ্রিষ্টানদের গির্জায় বোমা হামলা করেছে। কয়দিন আগে পটিয়া ও রামুতে বৌদ্ধদের মন্দির ভেঙে তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘মুসলমানদের ওপর প্রতিনিয়ত হামলা চলছে। দাড়ি-টুপিওয়ালা লোক দেখলে হয় জামায়াত-শিবির, না-হয় হরকাতুল জিহাদ, তালেবান ইত্যাদি নাম দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর আঘাত আনা হয়। এসব সন্ত্রাসী ও জঙ্গির বাংলাদেশে কোনো জায়গা নেই।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনের কথা বলে নিজেরাই সন্ত্রাস করে। আওয়ামী লীগের ঘরে ঘরে জঙ্গি। ছাত্রলীগ একটা দানব হয়ে গেছে। তাই ছাত্রলীগ অস্ত্র নিয়ে ঘুরছে। কিন্তু পুলিশকে বাধ্য করা হয় তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। বিএনপি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে না।’ তিনি বিগত বিএনপি আমলে জেএমবিপ্রধান শায়খ আবদুর রহমানসহ অনেক জঙ্গিকে ধরে শাস্তি দেওয়ার দাবি করেন।
খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ দলীয়করণ করে সব শেষ করে দেওয়া হয়েছে। এখন সেনাবাহিনীতেও দলীয়করণ চলছে। তিনি বলেন, ‘মানুষ নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। যতই চেষ্টা করুক, আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া হবে না।’
টাঙ্গাইলের উপনির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘টাঙ্গাইলের মানুষ নৌকাকে ডুবিয়ে দিয়েছে। আগামী দিনে নদীমাতৃক বরিশালের মানুষও নৌকাকে ডুবিয়ে দেবে।’
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুজিবুর রহমান বলেন, ‘শরিয়া আইনে বিচারের কথা যদি ঠাট্টা করে না বলেন, তাহলে সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা-বিশ্বাসের যে কথাটি তুলে দিয়েছেন, তা আগে সংযোজন করে এর প্রমাণ দিতে হবে।’
বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ারের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আ স ম হান্নান শাহ, আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, সাদেক হোসেন খোকা, হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা শফিকুল ইসলাম, এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ, খেলাফত মজলিসের আমির মুহাম্মদ ইসহাক, বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.