তসলিমা ক্যা জোয়ানি

হিন্দি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো পরকীয়া প্রেমের কৌশল; দেবর-ননদ, শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে ঝগড়া করে আলাদা হওয়ার কৌশল রফতানির পাশাপাশি মিস সুন্দরী, সেরা গায়িকা, সেরা নাচুনি টাইপের ডজন ডজন প্রতিযোগিতাও রফতানি করেছে আমাদের দেশে!
পাবলিক সবচেয়ে বেশি খেয়েছে হরেক রকম সুন্দরী প্রতিযোগিতা। সুন্দরী প্রতিযোগিতা বলতেই দেশসুদ্ধ তরুণী, যুবতীরা অজ্ঞান। ‘যেমন একটা চেহারা, নাম রেখেছে পেয়ারা’ হলেও কোনো সমস্যা নেই। বিউটিপার্লার আছে না!
মুখে, শরীরে মেকআপের আস্তর লাগিয়ে পরনের বস্ত্রসঙ্কট তৈরি করে ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়ে এসএমএস ব্যবসা ফেঁদে আমজনতার কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চ্যানেলগুলো। বেকুব আমজনতাও সেরা সুন্দরী নির্বাচন করতে ভোটের পর ভোট দিয়েই যাচ্ছে।
আমাদের বাড়িওয়ালার মেয়ে তিথির হঠাত্ করে শখ হলো সেরা সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দেশসেরা সুন্দরী হবে। দেখতে চরম সুন্দরী না হলেও আচার-আচরণে চরম মারকুটে স্বভাবের। গলার স্বর এতই বড় যে, আস্তে কথা বললেও মনে হয় কারও সঙ্গে বুঝি ঝগড়া করছে।
তিথির মাথায় সুন্দরী প্রতিযোগিতার ভূত চাপার পর থেকেই অশান্তির শুরু। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই ব্যালকনিতে এসে সা-রে-গা-মা টান দিয়ে মিনিট ত্রিশেক ভ্যা ভ্যা করতে থাকে। সেরা সুন্দরী হওয়ার সঙ্গে গানের কী সম্পর্ক—প্রশ্নটি করতে গিয়েও করা হয়নি দৌড়ানি খাওয়ার ভয়ে।
প্রতিদিনকার মতো আজকেও তিথির সঙ্গীতচর্চায় সাতসকালে ঘুম ভেঙে গেল। দাঁত ব্রাশ করে বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরুতেই হাউমাউ কান্না শুনে ব্যালকনিতে গেলাম। তিথিদের ব্যালকনির গ্রিলে কাপড় শুকাতে দেয়ায় কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে তিথিদের ফ্ল্যাটের কলিংবেল বাজাতেই মিথি আপু দরজা খুলে দিলেন।
—কী হয়েছে, তোমাকে এত আতঙ্কিত দেখাচ্ছে কেন?
—তিথির রুমের ব্যালকনি থেকে অনেক জোরে জোরে কান্নার শব্দ আসছে। একটু আগেও গানের রেওয়াজ করছিল। কিছু হয়নি তো ওর?
শুনেই মিথি আপু দৌড়। আমিও তার পেছনে পেছনে তিথির রুমের সামনে।
দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। বেশ কিছুক্ষণ ধাক্কাধাক্কি খুলছে না। বাংলা সিনেমার নায়কের মতো একটু দৌড়ে এসে দরজায় লাথি দিতেই ছিটকানি ভেঙে গেল।
রুমে হালকার ওপর মিউজিক চলছে। ব্যালকনিতে আয়না ঝুলিয়ে তিথি সামনে দাঁড়িয়ে কান্নার শব্দ করে একবার হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরছে, একবার ছাড়ছে।
মিথি আপু ক্ষেপে গিয়ে বলল, এই কী করছিস রে, তুই?
—‘ডিয়ার ভিউয়ারস, এবারের সেরা সুন্দরীর মুকুট ছিনিয়ে নিয়েছেন তিথি’—উপস্থাপিকার ঘোষণার পর কেঁদে কেটে কীভাবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করব প্র্যাকটিস করতাছি। তুমি দেখ নাই ১ম, ২য়, ৩য় হওয়ার পর কেমন স্টাইল করে কেঁদে ফেলে প্রতিযোগীরা?
—তাই বলে জোরে জোরে স্টাইল করে কান্নার প্র্যাকটিস করতে হবে?
—প্রথম দিন তো, একটু জোরে হয়ে গেছে। কয়েকদিন প্র্যাকটিস করলে ঠিক হয়ে যাবে। তা তোমরা এখানে কেন আসছ? এখন যাও। যখন সেরা সুন্দরী হব, তখন দেখো কেমন স্টাইল করে কাঁদতে পারি।
নায়কগিরি দেখাতে গিয়ে দরজার ছিটকানি ভেঙেছি ব্যাপারটা তিথি টের পেলেই হামলা করে বসবে। তাই চুপি চুপি পালিয়ে এলাম। বুয়াকে বলে দিলাম, তিথি যদি আমাকে খুঁজতে আসে, তাহলে যেন বলে—বাসায় নেই।
সারাদিন একরকম গৃহবন্দি হয়ে থেকে বিকালে আড্ডায় যেতে দোতলা থেকে নেমে দাঁড়িয়েছি, এমন সময় ওপর থেকে ফেলা রঙমাখানো পানিতে সারা শরীর ভিজে একাকার। খিলখিল হাসির শব্দে বুঝতে বাকি রইল না, সকালের ঘটনার রেশ। তিনতলার ছাদে দাঁড়ানো তিথির দিকে তাকাতেই বলল, ‘তুই শালা আমার রুমের ছিটকানি নষ্ট করেছিস, আর তোকে আমি ছেড়ে দেব? এতদিন তো সকালের ঘুম নষ্ট করেছি, আজকে থেকে রাতের ঘুমও হারাম করে দেব।’
শালা! একসময়কার কঠিন গালি। মা-বাবা তো দূরে থাক, পাড়ার কোনো মুরব্বির সামনেও কাউকে ‘শালা’ বলে গালি দেয়ার সাহস করত না ছেলেরা, কিন্তু সময় পাল্টেছে। শালা গালি ডাল-ভাতের মতো ব্যাপার-স্যাপার। এই যুগের মেয়েরা ছেলেদের ‘শালা’ বলে গালি দেয় নিঃসংকচে!
কোনো মেয়ের কাছ থেকে ‘শালা’ গালি খাবার দুঃখ হজম করতে রুমে এসে কাপড় পাল্টে কম্পিউটার অন করলাম। ইন্টারনেটে একটা নিউজ সাইটে গিয়ে দেখি ‘গালি’ নিয়ে ব্রেকিং নিউজ! তাও নারীর!
কিছুদিন এই পাড়া আর কিছুদিন ওই পাড়া আশ্রয় করে জীবন কাটিয়ে দেয়া বেওয়ারিশ কুকুরের মতো একেক সময় একেক দেশে আশ্রয় চাওয়া দাদাপ্রেমী তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশকে হিন্দি স্টাইলে ‘কুত্তির বাচ্চা’ বলে গালি দিয়েছে।
ইন্টারনেটে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। তসলিমা প্রায় নিজের জোয়ানির সময়কার বিভিন্ন পুরুষের ‘বিশেষ সঙ্গী’ হওয়ার রগরগে কাহিনী ফাঁস করে আলোচনায় থাকার চেষ্টা করে। বুড়ি হয়ে যাওয়ায় সেসব রগরগে বর্ণনা দেয়ার দিনও যে শেষ, তা বুঝে গেছে। কারণ পশ্চিমবঙ্গের একজন সাহিত্যককে কেলেঙ্কারিতে জড়াতে চেয়ে ব্যাপক অপমানিত হয়েছে। এদিকে দাদাদের দেশের মানুষরা একবার জুতাথেরাপি দিয়েছে।
নিজেকে আলোচনায় রাখতে বাংলাদেশকে গালি দেয়া ছাড়া সহজ এবং নিরাপদ উপায় আর কিছু নেই। কারণ এই দেশের চোর নেতাকে কিছু বললেও স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করার, রুল জারি করার মানুষের অভাব থাকে না। কিন্তু ‘বাংলাদেশ’কে গালি দিলে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করার ১০০ মানুষ পাওয়াটাও যে...

No comments

Powered by Blogger.