পাসপোর্টের তথ্য যাচাই করেন দালালেরা? by অরূপ রায়

মানিকগঞ্জে পাসপোর্টের ভেরিফিকেশনের (আবেদনে দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই) কাজ করেন দালালেরা। এ সময় তাঁরা নিজেদের পুলিশের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে আবেদনকারীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন।
সাটুরিয়া উপজেলায় গতকাল বুধবার এক দালাল জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে টাকা দাবি করলে স্থানীয় জনতা তাঁকে আটক করে। পরে ক্ষমা চেয়ে তিনি ছাড়া পান। নিয়ম অনুযায়ী, পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার পর আবেদনকারীর নাম-ঠিকানাসহ বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় ডিএসবিকে। ডিএসবির উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে পাসপোর্ট কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠান। যাচাইয়ে তথ্য সঠিক পাওয়ার পরই ওই আবেদনকারীকে পাসপোর্ট দেওয়া হয়। কিন্তু মানিকগঞ্জ ডিএসবির কার্যালয়ে এসব নিয়মকানুন মানা হচ্ছে না। একশ্রেণীর দালাল ডিএসবির এসআই পরিচয়ে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করেন। সাটুরিয়ার উত্তর কাউন্নারা গ্রামের জৈনুদ্দিনের ছেলে রমজান আলী এবং শেখরীনগর গ্রামের মিন্টু বেপারীর ছেলে ছানোয়ার হোসেন ১৪ নভেম্বর জেলা পাসপোর্ট কার্যালয়ে আবেদন করেন। গতকাল সাদা পোশাকে এক ব্যক্তি তাঁদের আবেদনে দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে যান। এ সময় ওই ব্যক্তি নিজেকে ডিএসবির এসআই ফরিদ হোসেন পরিচয় দিয়ে তাঁদের কাছে দুই হাজার টাকা দাবি করেন। ওই ব্যক্তি রমজান আলী ও ছানোয়ারের পূর্বপরিচিত হওয়ায় তাঁরা তাঁর আসল পরিচয় জানতে চান। এ সময় তিনি নিজেকে একবার ডিএসবির কনস্টেবল সাইফুল ইসলাম আবার চান মিয়া ও চান্দু পরিচয় দেন। পরে স্থানীয় জনতা তাঁকে আটক করে পুলিশে দিতে চাইলে তিনি ক্ষমা চেয়ে ছাড়া পান। রমজান আলী ও ছানোয়ার হোসেন বলেন, পাসপোর্টের আবেদন জমা দেওয়ার সময় ভুয়া পরিচয়দানকারী ওই ব্যক্তি তাঁদের নানাভাবে হয়রানি করেন। একপর্যায়ে তিনি তাঁদের কাছে চার হাজার টাকা দাবি করেন। ওই টাকা না দিলে আবেদনপত্র জমা নেওয়া হবে না বলে জানান। পরে তাঁরা বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকদের জানালে তাঁদের হস্তক্ষেপে আবেদনপত্র জমা দিতে সক্ষম হন। তাঁরা গতকাল ওই দালালের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ডিএসবির এসআই ফরিদ হোসেন বলেন, সাটুরিয়ায় রমজান আলী ও ছানোয়ার হোসেনের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে যাওয়া লোকটিকে তিনিই পাঠিয়েছিলেন। ওই লোকটির নাম চান্দু এবং তিনি পুলিশের সদস্য নন বলেও নিশ্চিত করেন। নিয়ম অনুযায়ী, আপনি না গিয়ে একজন বেসরকারি লোককে এ রকম গুরুত্বপূর্ণ কাজে পাঠালেন কেন—এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ভুল হয়ে গেছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল আর হবে না। ভুয়া পরিচয় দিয়ে টাকা দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ ধরনের অন্যায় করে থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ পাসপোর্ট কার্যালয় ঘিরে একটি শক্তিশালী দালাল চক্র গড়ে উঠেছে। ওই দালাল চক্রের সদস্যসংখ্যা কমপক্ষে ১০ জন। তাঁরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কার্যালয়ে বিচরণ করেন। এ সময় সুযোগ বুঝে তাঁরা পাসপোর্ট করতে আসা নিরীহ লোকজনকে নানা হয়রানির মধ্যে ফেলে টাকা আদায় করেন। আবার ওই সব দালালই ডিএসবির কর্মকর্তাদের যোগসাজশে আবেদনকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের নামে এক থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা নিয়ে থাকেন।
জেলা পাসপোর্ট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পাসপোর্টের জন্য প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০টি আবেদন পাওয়া যাচ্ছে। আবেদনপত্রগুলো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য প্রতিদিনই ডিএসবি অফিসে পাঠানো হয়। তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের নামে প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা আদায় হয়ে থাকে, যা দালালসহ ডিএসবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পেয়ে থাকেন।
জেলা পাসপোর্ট কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক কমল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘দালালদের ডিএসবির কর্মকর্তা পরিচয়ে পাসপোর্টের আবেদনকারীদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার অভিযোগ আমরাও পেয়েছি। অনেকে এসব দালালের কাছে প্রতারণার শিকার হয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ করছেন। কিন্তু এখতিয়ারবহির্ভূত হওয়ায় আমরা ওই সব দালালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছি না।’
মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহামঞ্চদ আলী মিয়া বলেন, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.