আইন সংশোধনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠি- দুদকের ‘রাজনৈতিক মামলা’ প্রত্যাহার করার উদ্যোগ! by রোজিনা ইসলাম

‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ বিবেচনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলাও প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য মামলা প্রত্যাহারের ক্ষমতা দুদকের কাছ থেকে সরকারের নির্বাহী বিভাগ নিজের হাতে ফিরিয়ে নিতে চাইছে।
এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ফৌজদারি আইনের সংশ্লিষ্ট একটি ধারা পুনঃসংশোধন করা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর গতকাল বুধবার এ ধারাটি সংশোধনের প্রস্তাব দিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদের কাছে।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকার জনস্বার্থে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিকে হয়রানির জন্য দায়ের করা রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করার আইনগত প্রক্রিয়া গ্রহণ।
‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ মামলা প্রত্যাহারসংক্রান্ত জাতীয় কমিটি ইতিমধ্যে ৩০টি সভায় দুদকের দায়ের করা ৩৪৭টি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে। তবে দুদক এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সম্মতি দেয়নি।
‘দ্য ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট’-এর ১০ ধারার ৪ উপধারা অনুযায়ী, দুদকের করা মামলা প্রত্যাহারের ক্ষমতা কেবল দুদকের হাতেই ন্যস্ত। ২০০৪ সালে আইনটি সংশোধন করে দুদককে এ ক্ষমতা দেওয়া হয়। তার আগে সরকারের নির্বাহী বিভাগের হাতে এ ক্ষমতা ছিল।
কমিটি সুপারিশ করলেও দুদক সম্মতি না দেওয়ায় ৩৪৭টি মামলা অনিষ্পন্ন অবস্থায় পড়ে আছে। এসব মামলার আসামিদের মধ্যে বর্তমান সরকারের মন্ত্রী ও দলীয় নেতা-কর্মীরাও রয়েছেন।
চিঠিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সরকারের নিযুক্ত কোনো কর্তৃপক্ষের হাতে আইনের ওই ক্ষমতা ন্যস্ত করার বিষয়টি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রচলিত প্রথার বৈপরীত্য হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। আইনটি পুনঃসংশোধনে তিনি আইনমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, চিঠিটি এখনো তিনি পড়েননি। পড়ার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন।
দুদকের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, ‘এ আইন সংশোধন করা হলে দুদকের ক্ষমতা খর্ব করা হবে। বিষয়টি আইনপ্রণেতাদের। তাই এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’
রাজনৈতিক বিবেচনায় এ পর্যন্ত দণ্ডবিধি ও অন্যান্য আইনে সাত হাজার ১০১টি মামলা সম্পূর্ণ বা আংশিক প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে মামলা প্রত্যাহারসংক্রান্ত কমিটি। এর ফলে খুনি-সন্ত্রাসীসহ প্রায় এক লাখ অভিযুক্ত ব্যক্তি এখন পর্যন্ত খালাস পেয়েছেন বা খালাসের অপেক্ষায় আছেন। তবে, দুদকের ৩৪৭টি মামলার কোনোটিই প্রত্যাহার করা হয়নি।
জানা গেছে, মামলা প্রত্যাহারসংক্রান্ত কমিটি যেসব মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ দুদকে পাঠিয়েছে, এর বেশির ভাগই বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরো থেকে পাওয়া। এ ছাড়া কিছু মামলা হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে।
এসব মামলার মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রীদের নামেই বেশি। মূলত ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহারের জন্যই আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির মামলাও প্রত্যাহারের সুপারিশ করে দুদকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু দুদক থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, এসব মামলা আদালতে নিষ্পত্তি হওয়াই ভালো। ইতিমধ্যেই এসব মামলা থেকে আদালত প্রধানমন্ত্রীকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
দুদকের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের করা মামলা কোনোভাবেই ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ হতে পারে না। বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরোও কোনো অভিযোগ বা প্রমাণ ছাড়া মামলা করেনি। এ কারণে রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেয়নি দুদক। দুদক মনে করে, কেউ নিজেকে নিরপরাধ মনে করলে আদালতে আইনি সহায়তা নিতে পারেন।
মহাজোট সরকার গঠনের পর ২০০৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ‘রাজনৈতিক ও অন্যান্য কারণে হয়রানির উদ্দেশ্যে করা মামলা’ প্রত্যাহারের সুপারিশ প্রণয়নে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সভাপতি আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।

No comments

Powered by Blogger.