চারদিক- সাহসী তরুণের খোঁজে by রওশন আক্তার

ঢং ঢং করে স্কুলে ঘণ্টা বাজতেই দুমদাম করে একঝাঁক ছেলেমেয়ে বেরিয়ে এল। মুহিব ওর পাশের সজলকে একটু ধাক্কা দিয়ে পাশের মুনিয়াকে আড়চোখে দেখিয়ে কী যেন বলে হাসতে থাকলে মুহিব সজোরে বলে ওঠে, সজল এটা খুব খারাপ হচ্ছে, মুনিয়া আমাদের বন্ধু, ওকে নিয়ে বাজে কথা বলাটা অন্যায়।
দৌড়ে মুহিবের কাছে গিয়ে ওকে থামাই। মুহিব, তুমি কি একজন সাহসী ছেলে? মুহিব কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে, মনে হয় না, সাহসী হতে হলে তো অনেক মারামারি জানতে হয়। আমি মারামারি পারি না।
আসলে সত্যিই কি তাই? সাহসী ছেলে বা তরুণ আসলে কারা? কী কী গুণ থাকলে একজন ছেলেকে সাহসী ছেলে বলা যায়? ওর বন্ধু ইভ টিজিং করছিল, সেটায় বাধা দেওয়াটা সাহসের নাকি মারামারি করে জিতে শক্তির পরিচয় দেওয়াটা সাহসের? এ ধরনের প্রশ্ন সামনে রেখেই শুরু হতে যাচ্ছে এক অন্য ধরনের ক্যাম্পেইন—‘ব্রেভ ম্যান ক্যাম্পেইন’। ঢাকার বিভিন্ন স্কুল থেকে খুঁজে বের করে আনা হবে সাহসী ছেলেদের।
নারীর প্রতি সহিংসতা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে একটি বড় সমস্যা। প্রতিদিনের পত্রিকায় এবং চারপাশে আমরা নারীর প্রতি সহিংসতার নানা নজিরই দেখে থাকি। এই ধরনের ঘটনায় জড়িত থাকে অল্প কজন পুরুষই, কিন্তু বাকি পুরুষদের নীরবতা এটাকে একটা বড় সমস্যায় পরিণত করেছে। এখন এই নীরবতা ভেঙে বেরিয়ে আসার জন্য প্রয়োজন সাহসের। সেই ছেলেই তো সাহসী, যে নারীর প্রতি যেকোনো সহিংসতা থেকে দূরে থাকে বা এর প্রতিবাদ করে। আর সেসব সাহসী বালককে খুঁজে বের করবে ‘ব্রেভ ম্যান ক্যাম্পেইন’। এই প্রচারণার উদ্দেশ্য হলো, ছোটবেলা থেকেই ছেলেদের মধ্যে নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা। ভবিষ্যতে যেন তারা কখনো নারীর প্রতি কোনো সহিংস আচরণ না করে এবং এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়।
প্রচারণার উদ্যোক্তা হচ্ছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এটাকে সমর্থন জোগাচ্ছে ইউএনডিপি, সুইস কনফেডারেশন, সুইডেন এবং ডেনিডা। ক্যাম্পেইনটির কার্যক্রম বাস্তবায়নের পুরো দায়িত্বে রয়েছে সিএমএমসি (সেন্টার ফর মেন অ্যান্ড ম্যাসকুলিনিটিস) এবং ইউএনওয়াইএসএবি (ইউনাইটেড নেশনস ইয়ুথ অ্যান্ড স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ)। ঢাকার বিভিন্ন স্কুলে ১২-১৫ বছর বয়সী ৫০০ ছেলেদের মধ্যে এই ক্যাম্পেইন শুরু হতে যাচ্ছে জানুয়ারি থেকে। বিভিন্ন কার্যক্রম, ট্রেনিং এবং প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে বাছাই করা হবে এই ব্রেভ ম্যান বা সাহসী মানুষকে। তাকে দেওয়া হবে ‘ব্রেভ ম্যান’ পদক। এ ছাড়া রয়েছে অন্যান্য পুরস্কার, যেমন—সেরা আইডিয়া, সেরা টিম, অর্থাৎ নানা ধরনের কার্যক্রমের জন্যই পুরস্কারের ব্যবস্থা রয়েছে।
নভেম্বরের ২৩ তারিখে অর্থাৎ আগামীকাল টিএসসি থেকে ‘ব্রেভ ম্যান ক্যাম্পেইন’-এর শোভাযাত্রা বের করার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে এই প্রচারণা। এই শোভাযাত্রায় অংশ নেবে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা। ব্রেভ ম্যান ক্যাম্পেইনের মূল পরিকল্পনাধারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাইখ ইমতিয়াজ জানান, যদিও এই ক্যাম্পেইনটি সর্বপ্রথম বাংলাদেশে শুরু হচ্ছে, কিন্তু আমাদের লক্ষ্য এটাকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া। ব্রেভ ম্যান ক্যাম্পেইন সাহসী তরুণ বের করে আনার যে ব্রত নিয়ে আবির্ভূত হচ্ছে, তা যদি বিশ্বে ছড়িয়ে যায় তবে একদিন নিশ্চয়ই নারীর প্রতি সব সহিংসতা বন্ধ হয়ে যাবে।
‘ব্রেভ ম্যান’-এর এই আলোকবর্তিকা স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে সব নারী-পুরুষের মাঝে সঞ্চারিত হলে একটি সুন্দর সমাজ তৈরি হবে। সে সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা থেকে বিরত থাকা বা এর প্রতিবাদ জানানোটাই হবে সাহসী পুরুষের নিদর্শন।
রওশন আক্তার

No comments

Powered by Blogger.