হলিউড- এসে গেছেন বন্ডকন্যা

পৃথিবীজুড়ে কোটি কোটি তরুণী আছেন, যাঁদের আক্ষেপ, ‘হায় ঈশ্বর, দুই-চার ইঞ্চি বেশি লম্বা হলাম না কেন?’ বেরেনিস মারলোহের আক্ষেপটা ছিল উল্টো, ‘হায় ঈশ্বর, দুই-চার ইঞ্চি খাটো হলাম না কেন!’
সবই ঠিক আছে। দেখতে সুন্দর। লতানো শরীর। মায়াকাড়া একজোড়া চোখ। ‘সমস্যা’ এক জায়গায়ই—তিনি অনেক লম্বা! চেয়েছিলেন পিয়ানিস্ট হবেন, নয়তো চিত্রকর। ১০ বছর পড়েছিলেন ফ্রান্সের অভিজাত আর্ট স্কুল কনজারভেতয়ের ডি প্যারিসে। শিল্পকলার তীর্থভূমি প্যারিসে জন্ম নেওয়া মারলোহ শেষমেশ হতে চাইলেন অভিনেত্রী। কিন্তু বাদ সাধল তাঁর উচ্চতা। একের পর এক অডিশনে ব্যর্থ হলেন। কারণ একটাই—উচ্চতা। ‘তাঁরা আমাকে বলতেন, অভিনেতাদের তুলনায় তুমি বেশি লম্বা। এটা তোমার জন্য ভালো নয়’—সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন মারলোহ।
আট বছর আগে ঠিকই অভিনেত্রী হিসেবে অভিষেক হলো মারলোহর। যদিও চলচ্চিত্র নয়, তিনি কাজ পেলেন টিভিতে। কিন্তু সবই ছোটখাটো চরিত্রে। এমনও হয়েছে, তিনি অভিনয় করেছেন, কিন্তু অভিনয়শিল্পীর তালিকায় দেখানো হয়নি নাম। এমনই অগুরুত্বপূর্ণ সব চরিত্র।
কিন্তু মারলোহ হতাশ হননি। কারণ, প্রবলভাবে তিনি বিশ্বাস করেন ভাগ্যে। ‘আজ তুমি ছোটখাটো চরিত্রে কাজ করছ—কারণ, নিয়তিই এটা তোমার জন্য ঠিক করে রেখেছে।’ কম্বোডিয়ান বংশোদ্ভূত চিকিৎসক বাবা আর ফরাসি শিক্ষিকা মায়ের সন্তান মারলোহ অদৃষ্টে বিশ্বাসী ছিলেন বলেই ভাগ্যই আজ তাঁকে কুয়ো থেকে একেবারে বিশাল সমুদ্রে এনে ফেলেছে। ফ্রান্সের অখ্যাত টিভি অভিনেত্রী থেকে তাঁর চলচ্চিত্রে অভিষেক হলো ঠিকই, সেটিও জেমস বন্ডের ছবিতে! বন্ডকন্যা হিসেবেই!
সারা বিশ্ব কাঁপিয়ে দেওয়া বন্ড সিরিজের নতুন ছবি স্কাইফল-এ দুর্দান্ত অভিনয় করে নজর কেড়েছেন এই ৩৩ বছর বয়সী অভিনেত্রী। সেভেরিন নামের সে চরিত্রে তাঁকে দেখা গেছে বিপজ্জনক ও একরোখা এক নারী হিসেবে, যে নারী ছবির ভিলেন সিলভার সঙ্গে জড়িত।
সিলভা চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন খ্যাতনামা অভিনেতা হাভিয়ের বারদেম। মজার ব্যাপার হলো, অডিশনের ছয় মাস আগে মারলোহ নাকি স্বপ্নে দেখেছেন, বারদেমের সঙ্গে তিনি অভিনয় করছেন। অথচ তখনো চূড়ান্ত হয়নি, স্কাইফল-এ কাজ করার সুযোগ তিনি পাচ্ছেন কি না। তার চেয়েও মজার ব্যাপার, এই ছবিতে বারদেমও যে অভিনয় করবেন, সেটা তিনি জেনেছেন দ্বিতীয় অডিশন দিতে এসেই। ভাগ্য, ভাগ্যবিশ্বাসী মারলোহকে এত দূর টেনে এনেছে নিয়তিই।
‘আমি সত্যিই রাশিতে বিশ্বাস করি’—বলেছেন শৈশবে বন্ড ছবি গোগ্রাসে গেলা মারলোহ। মজার ব্যাপার হলো, আকর্ষণীয়, দুর্ধর্ষ বন্ডের চেয়ে তাঁকে নাকি বেশি আকৃষ্ট করত ছবির ভিলেনরাই। বিশেষ করে আ ভিউ টু আ কিল ছবির গ্রেস জোন্স আর ক্রিস্টোফার ওয়াকেন ছিলেন তাঁর খুবই পছন্দের। মারলোহ বলেছেন, ‘বন্ডের জগতের সঙ্গে নিজের শক্তিশালী একটা বন্ধন আবিষ্কার করতাম। আপনি এখানকার চরিত্রগুলোর মধ্যে অনেক স্বাধীনতা খুঁজে পাবেন। কারণ, এটা এমন একটা জগৎ, যেটা বাস্তবতা ও কল্পনার মাঝামাঝি।’
ভাগ্যিস, উচ্চতার কারণে ফরাসি ছবিতে সুযোগ পাননি। পাননি বলেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসার পরিকল্পনা করছিলেন। ভিসার জন্য অপেক্ষা করছিলেন, এমন সময় তাঁর এক মার্কিন বন্ধু জানান স্কাইফল-এর অডিশনের কথা। কিন্তু কী করে যোগাযোগ করবেন? তাঁর কোনো এজেন্ট নেই। উপায় করে দিল ফেসবুক! ফেসবুকের মাধ্যমেই পরিচালক স্যাম মেন্ডেসের এক এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ হলো। পেয়ে গেলেন ছবির কাস্টিং ডিরেক্টর ডেবি ম্যাকউইলিয়ামসের ই-মেইল ঠিকানা। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন ভয়ে ভয়ে। ভাবলেন, তিনি কোথাকার কে! তাঁকে চমকে দিয়ে উত্তর এল, ‘ছবি পাঠাও।’ ছবি দেখে পেলেন সবুজ সংকেত। দ্বিতীয়বার অডিশনে খোদ মেন্ডেস দেখলেন মারলোহকে। পেয়ে গেলেন সেভেরিন চরিত্রটি। পেয়ে গেলেন মেন্ডেসের মতো পরিচালক আর ড্যানিয়েল ক্রেগের মতো অভিনেতার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ। ভাগ্যে বিশ্বাসী মারলোহর ভাগ্যদুয়ারও খুলে গেছে। পেয়ে গেছেন টেরেন্স মালিকের পরিচালনায় নতুন ছবি। যে ছবিতে তাঁর সঙ্গে আছেন নাটালি পোর্টম্যান আর ক্রিস্টিয়ান বেলের মতো তারকারা।
 রাজীব হাসান
এলএ টাইমস ও হলিউড রিপোর্টার অবলম্বনে

No comments

Powered by Blogger.