রোহিঙ্গা নাগরিকত্ব-ওবামাকে প্রতিশ্রুতি মিয়ানমারের

রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানসহ সব সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে মিয়ানমার সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপ-উপদেষ্টা বেন রোডস এ তথ্য জানিয়েছেন।
গত সোমবার মিয়ানমার সফর শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বিমানে কম্বোডিয়া যাওয়ার পথে হোয়াইট হাউসকে বেন রোডস জানান, মিয়ানমার সরকার দেশটির রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সৃষ্ট জাতিগত সংঘাত বন্ধে অঙ্গীকার করেছে। এ উদ্যোগ শুধু সেখানকার পরিস্থিতি শান্ত করতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বরং এ সংঘাতের কারণে যারা বাস্তুহারা হয়েছে, তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনা এবং তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার ব্যাপারেও তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
গত সোমবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিয়ানমার সফরে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন। সেখানে রোহিঙ্গাদের সমস্যা সমাধানের জন্য সেইনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সেইন তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাখাইন প্রদেশের জাতিগত সংঘাত বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে ওবামাকে আশ্বস্ত করেন। পরে ইয়াঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া এক ভাষণে বারাক ওবামা বলেন, মিয়ানমারের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। তবে এ জন্য দেশটির সরকারের উদ্দেশে প্রকারান্তরে বেশ কিছু শর্তও আরোপ করেন তিনি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল সামরিক বাহিনীর অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ, মানবাধিকার জোরদার করাসহ রাখাইন প্রদেশে সহিংসতা বন্ধ করে মুসলমান রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও সম-অধিকার নিশ্চিত করা।
মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া ভাষণে ওবামা সরাসরি বলেন, মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে জাতিগত সহিংসতার পেছনে কোনো ধরনের অজুহাত চলবে না। এ সময় তিনি সেখানকার মুসলিম রোহিঙ্গাদের সঙ্গে রাখাইন বৌদ্ধদের চলমান সহিংসতা ও উত্তেজনা বন্ধের জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে রাখাইন রাজ্যের মুসলিম রোহিঙ্গাদের সম-অধিকারের কথা তুলে তাদেরও সে দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে মূল সমাজে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জোরালোভাবে আহ্বান জানান।
ওবামা ওই ভাষণে স্পষ্ট করে বলেন, 'সম্প্রতি রাখাইন রাজ্যে ঘটে যাওয়া সহিংসতায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং এখনো সেখানে বিরাজ করছে ভীতিকর পরিস্থিতি। দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত রাখাইনসহ এ রাজ্যের সব মানুষই দুঃখ-দারিদ্র্যের কষাঘাত মোকাবিলা করে আসছে। কিন্তু তাই বলে নিরীহ জনগণের ওপর চালানো সহিংসতার পেছনে কোনো অজুহাত চলে না। তা ছাড়া আমি-আপনি যে মর্যাদার অধিকারী, রোহিঙ্গারাও সেই একই মর্যাদার অধিকারী।'
ওই বক্তব্যে ওবামা বলেন, 'রাখাইন প্রদেশে সংঘটিত অন্যায়, অবিচারের প্রতিকার, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা ও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করাসহ দায়-দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় আমি মিয়ানমার সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করলে মিয়ানমারের এগিয়ে যাওয়ার পথে বিশ্ববাসীর সমর্থন ও সহযোগিতা অক্ষুণ্ন থাকবে।'
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত জুন মাসে মুসলমান রোহিঙ্গা ও রাখাইন বৌদ্ধদের মধ্যে জাতিগত বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এতে নিহত হয় ১৮০ জন। নিহতদের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা। এ ছাড়া হামলা ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ায় বাস্তুচূ্যত হয় অন্তত এক লাখ ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। বাস্তুচূ্যতদের কিছু অংশ পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। আবার অনেককে সীমান্ত থেকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠান বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা। সরকারি হিসাবে, বিভিন্ন সময়ে আসা প্রায় ২৮ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী আছে বাংলাদেশে। এর বাইরে আছে আরো কয়েক লাখ অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা, যাদের শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.