'দেহরক্ষী'র জবানবন্দি-কামারুজ্জামানের বিপক্ষের সাক্ষীকে 'ম্যানেজ' করা হয়

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের এক সময়কার দেহরক্ষী হিসেবে পরিচিত শেরপুর জাতীয় পার্টির প্রচার সম্পাদক ইসহাক মিয়া আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। গত সোমবার দেওয়া ওই জবানবন্দিতে তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের বিপক্ষের সাক্ষী, শেরপুর শহরের চকবাজার এলাকার লিয়াকত আলীকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করা হয়েছিল।
কামারুজ্জামানের স্ত্রী ও ছেলে সাক্ষী লিয়াকতকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছিলেন। এ কারণে ট্রাইব্যুনালে দেওয়া সাক্ষ্যে অনেক ঘটনাই লিয়াকত আলী চেপে গেছেন।
শেরপুর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ওসি নজরুল ইসলাম এ তথ্য দিয়েছেন।
গত ১৭ নভেম্বর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে নাশকতামূলক কাজের পরিকল্পনার অভিযোগে ইসহাক আলীকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদকালে যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল ও জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানকে রক্ষার জন্য নানা পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। এর সঙ্গে কে, কিভাবে, কী করছে সে তথ্যও তিনি দেন গোয়েন্দা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে। সোমবার শেরপুরের ঊর্ধ্বতন বিচারিক হাকিম কামরুন্নাহারের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন ইসহাক।
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, ইসহাক স্বীকার করেছেন, ১৯৭৭ সাল থেকে জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। এরপর মাঝেমধ্যেই কামারুজ্জামানের সঙ্গে তাঁর কথা হতো। বিগত সংসদ নির্বাচনে তিনি কামারুজ্জামানের পক্ষে কাজ করেছেন। এ সময় কামারুজ্জামানের ছেলে সিয়ামের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত অভিযোগে কামারুজ্জামান গ্রেপ্তার হওয়ার পর সিয়াম ও তাঁর মায়ের সঙ্গে ইসহাকের কথাবার্তা হতো। কিছুদিন আগে শেরপুরের বাজিতখিলা গ্রামের বাড়িতে কামারুজ্জামানের মা মারা যান। তাঁর জানাজায় সিয়ামের সঙ্গে কুশল বিনিময়কালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষী লিয়াকতকে ম্যানেজের বিষয়টি তিনি আলোচনা করেন। এর মধ্যে ইসহাক কথা বলেন লিয়াকতের সঙ্গে। সপ্তাহখানেক পর সিয়াম মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে শেরপুর এসে তাঁর মাকে নিয়ে লিয়াকতের বাসায় যান। এ সময় লিয়াকতের সঙ্গে তাঁদের 'লেনদেন' হয়।
জবানবন্দিতে ইসহাক আরো জানান, এর কিছুদিন পর কামারুজ্জামানের ছেলে সিয়াম শহরের চকবাজার এলাকার লিয়াকতের প্রতিবেশী ও বন্ধু মজিবুর রহমান পানুকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করার কথা বলেন। তবে তাঁর সঙ্গে পরিচয় ছিল না বলে সিয়ামের ওই প্রস্তাবে তিনি রাজি হননি।
ইসহাকের এই জবানবন্দির সূত্রে লিয়াকতের আত্মীয় শহরের এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর মাধ্যমে ওই অর্থ লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে বলে শহরে চাউর হয়েছে।
এ ব্যাপারে শেরপুরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বলেন, 'আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট-১৯৭৩-এর ১১/৪ ধারা অনুযায়ী সাক্ষীকে ভয়ভীতি, প্রলোভন ও সাক্ষীদানে বাধা সৃষ্টি করা অপরাধের শামিল। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তথ্যসহ কাগজপত্র ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে।'

No comments

Powered by Blogger.