শুধু ক্ষমা চাওয়া নয়, ক্ষতিপূরণও দিতে হবে ‘সমাজচ্যুত’ পরিবার

ফতেপুর ষষ্ঠখণ্ড করঠিকর বাংলাদেশের একটি গ্রাম। জেলা সিলেট, উপজেলা গোয়াইনঘাট, ইউনিয়ন ফতেপুর। তবে এখানে বাংলাদেশের আইন বলে যা আছে, তা সম্ভবত কার্যকর নেই। তা না হলে তিন বছর ধরে ফতোয়া দিয়ে একটি পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রাখা সম্ভব হতো না!
ফতোয়ার শিকার নজরুল ইসলাম দিনমজুর। তিনি এক দিন রাগের মাথায় তাঁর স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার কথা বলেছিলেন, আর তাতেই গ্রামের মাতবর কেফায়েত উল্লাহ তালাক হয়ে গেছে বলে ফতোয়া দেন, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এর পর থেকেই নজরুল ইসলামের পরিবারটিকে ‘সমাজচ্যুত’ করা হয়।
কেফায়েত উল্লাহর বেআইনি ফতোয়ার কারণে তিন বছর ধরে নজরুল ইসলামের পরিবার অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়। এমনকি তাঁর সন্তানদের স্কুলে যেতেও বাধা দেওয়া হয়। এই দিনমজুরকে কাজ দিতেও সাহস পাননি গ্রামের অনেকে। ১৬ নভেম্বর জুমার নামাজ পড়তে গেলে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া হয় নজরুল ইসলামকে। এরপর তিনি থানায় মামলা করেন। কিন্তু তখন পর্যন্ত থানা-পুলিশের চৈতন্যোদয় ঘটেনি। গতকাল প্রথম আলোয় খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর এলাকাবাসী সালিসি বৈঠক করে ফতোয়াবাজ কেফায়েত উল্লাহকে তলব করলে তিনি তাঁর ভুল স্বীকার করে নজরুল ইসলামের কাছে ক্ষমা চান এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ফতোয়া দেবেন না বলে অঙ্গীকার করেন। এরপর দুই পক্ষ থানায় গিয়ে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয় এই শর্তে যে নজরুল ইসলামের পরিবারের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধা দেওয়া হবে না।
আপাতত নজরুল ইসলাম ও তার পরিবার সমাজচ্যুতির গ্লানি থেকে মুক্ত হলো। কিন্তু তিন বছর ধরে এই পরিবারটি যে মানসিক নির্যাতন ও দুর্ভোগের শিকার হয়েছে, তার প্রতিকার কী? যে ব্যক্তি তাঁর ওপর ফতোয়া চাপিয়ে দিয়েছেন, তাঁর বিচার হতে হবে। ক্ষমাই যথেষ্ট নয়, দিনমজুর নজরুল ইসলাম ও তাঁর পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণও দিতে হবে।
একই সঙ্গে গোয়াইন ঘাট থানা-পুলিশের কর্তব্য নজরুল ইসলাম ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ভবিষ্যতে এ ধরনের ফতোয়া যাতে কেউ না দিতে পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.