দেখা হলো কথা হলো না

ছয় বছর আগের ঘটনারই যেন পুনরাবৃত্তি ঘটল। গতকাল বুধবার সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে সেনাকুঞ্জে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা অনেকটা কাছাকাছি অবস্থান করলেও তাঁদের মধ্যে কোনো কথা হয়নি।
২০০৬ সালেও এদিন একই ঘটনা ঘটে। তখন পরিস্থিতি অবশ্য কিছুটা ভিন্ন ছিল। খালেদা জিয়ার সরকারের মেয়াদ শেষে তখন ক্ষমতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সে কারণে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে অতিথি মঞ্চে একই শামিয়ানার নিচে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করতে এবং তৎকালীন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের বক্তব্য শুনতে হয়। আর এবার শেখ হাসিনা নিজে প্রধানমন্ত্রী, একইসঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। সে কারণে উপস্থিতির পৌনে এক ঘণ্টার মধ্যে বক্তৃতামঞ্চে বেশ কিছুটা সময় কাটে তাঁর। এ সময় খালেদা জিয়াকে অতিথিমঞ্চে বসে শেখ হাসিনার বক্তব্য শুনতে হয়। তাঁর পাশের আসনে ছিলেন স্পিকার আবদুল হামিদ। খালেদা জিয়াকে স্পিকারের সঙ্গে কথা বলতেও দেখা যায়।
বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠান শুরুর একটু আগে বিকেল পৌনে ৪টায় সেনাকুঞ্জে পৌঁছেন। এ সময় তিনি গোলাপি রঙের শাড়ি পরেছিলেন। ঠিক ৪টায় পৌঁছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর পরনে ছিল সোনালি রঙের শাড়ি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সদস্যদের স্মরণ করেন। সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে আওয়ামী লীগ সরকারের পদক্ষেপগুলোও তুলে ধরেন।
বক্তব্যের পর শেখ হাসিনা বেশ কিছুটা সময় নিয়ে উপস্থিত অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। তবে তিনি অতিথিমঞ্চে আসার আগেই খালেদা জিয়া ওই মঞ্চ ছেড়ে বাইরের অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহ, চেয়ারপারসনের প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান সোহেল, শিমুল বিশ্বাসসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন। সাংবাদিকরা অনেকবার তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি বলেন, আজ কোনো কথা বলার দিন না। কথা হবে পরে। আজ শুধু শুভেচ্ছা বিনিময়।
এদিকে দুই নেত্রী দুই দিকে কুশল বিনিময়ে ব্যস্ত থাকায় তাঁরা আর সামনাসামনি হননি। একবার কিছুক্ষণের জন্য মূল শামিয়ানার নিচে খুব কাছাকাছিও এসেছিলেন দুজন। কিন্তু তার পরও তাঁদের মধ্যে কথা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেই পৌনে ৫টার দিকে বিরোধীদলীয় নেতা অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।
সশস্ত্র বাহিনী দিবসের এই অনুষ্ঠানে দেশের রাজনীতিক, বিচারপতি, কূটনীতিক, সাংবাদিক ও ঊর্ধ্বতন বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূইয়া, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল জহির উদ্দিন আহমেদ এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
গতবছরের সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াসহ চারদলীয় জোটের (বর্তমানে ১৮ দলীয় জোট) কোনো নেতাকেই দেখা যায়নি। সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে যাঁরা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত তাঁদের মধ্যে কেবল সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
২০০৯ সালের ২১ নভেম্বর অবশ্য সেনাকুঞ্জের একই শামিয়ানার নিচের দৃশ্যটি ছিল ভিন্ন। সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া কাছাকাছি হয়েছিলেন। শেখ হাসিনা ওই দিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করে তাঁকে সংসদে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
২০০৬ ও ২০০৮ সালের সশস্ত্র বাহিনী দিবসেও একই শামিয়ানার নিচে অবস্থান নেন দুই নেত্রী। ২০০৬ সালে দীর্ঘ প্রায় এক ঘণ্টা কাছাকাছি থেকেও কেউ কারো সঙ্গে কথা বলেননি। ২০০৭ সালের ২১ নভেম্বর দুই নেত্রীই ছিলেন কারাগারে। এরপর ২০০৮ সালে কারামুক্তির পর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ওই বছরের ২১ নভেম্বর আবার একই শামিয়ানার নিচে হাজির হন তাঁরা। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ দিন তাঁরা পরস্পরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন, জেলজীবন নিয়ে কথা বলেন। সেদিন তাঁদের হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় কথা বলাকে উপস্থিত অতিথিরা উষ্ণ করতালির মাধ্যমে অভিনন্দিত করেন।

No comments

Powered by Blogger.