চারদিক- মাটির ঘ্রাণ পাই প্রথম আলোতে by কানিজ ফাতেমা

কিছুদিন থেকেই একটি বিষয় নিয়ে ভাবছিলাম। প্রতিদিন ভোরবেলা একটি কঠিনতম অভ্যাস আমাকে তাড়া করে ফেরে। ভালো অভ্যাস কি বদভ্যাস, তা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু মাথাব্যথা শুরু হয়ে যায়, যদি অভ্যাসমতো কাজটি করতে না পারি।
তাহলে আর দেরি না করে কথাটি বলেই ফেলি।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমার কাজ হলো এক কাপ চা খাওয়া আর চায়ের সঙ্গে ‘টা’য়ের বদলে কম্পিউটার খুলে প্রথম আলো পত্রিকাটি পড়ে ফেলা। এরপর নিজেকে বেশ চাঙা মনে হয়। এতই চাঙা যে শীতের সকালে তুষারপাত ঠেলে অফিসে যাওয়াটাকে বিশেষ কোনো ব্যাপার বলেই মনে হয় না।
এখন মনে পড়ে, আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে আমি যখন প্রথম আমেরিকায় এসেছিলাম, তখন বাংলায় সংবাদপত্র পড়ার কথা কল্পনাই করা যেত না। মনে আছে, বাংলায় প্রাণভরে গল্প করার জন্য কনকনে শীতের রাতে কত শত মাইল গাড়ি চালিয়ে বাংলাদেশি এক বন্ধুর বাড়ি গিয়েছি। সপ্তাহান্তে নিউইয়র্কের হাডসন নদীর ফেরিঘাটে দাঁড়িয়ে ভাটিয়ালি সুর গুনগুন করেছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ভেবেছি, হঠাৎ করেই যদি এক বাংলাদেশি ভাই ফেরি থেকে নেমে এসে বলে: ‘কী খবর, কেমন আছেন?’ কী মজাটাই না হবে! সেসব কথা এখন ইতিহাস! আমি ছাড়া আর কেউ হয়তো জানেই না।
প্রযুক্তির উদ্ভব সারা পৃথিবীকে যেন মানুষের হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। এ বিষয়ে আর কথা বাড়াতে চাই না। আমি ভাবছিলাম, প্রথম আলো পড়ার অভ্যাসটা কবে থেকে কেমন করে হলো! কিন্তু কিছুতেই মনে করতে পারলাম না। হবে হয়তো বছর দশেক অথবা তার কিছু কম। তবে যে কারণে এই দৈনিক পত্রিকাটির প্রতি আমার এত ভালোবাসা, তার একটি সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিতে পারি। যেকোনো সংবাদপত্র পড়ে সেই সংবাদপত্রটির ওপর বিশ্বাস জন্মানোতেই আছে পাঠকের আগ্রহের মূল কারণ। প্রথম আলো পত্রিকার সংবাদ পরিবেশন এবং সংবাদের সত্যতার প্রতি আমার বিশ্বাস অগাধ, অপরিসীম। এ বিশ্বাস এক দিনে জন্মায়নি। এ বিশ্বাস জন্মেছে দিনে দিনে, অনেক দিনে।
অনলাইনে প্রথম আলোয় ক্লিক করলে প্রথমেই পাওয়া যায় বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের বিশেষ বিশেষ খবরগুলো। খুব অল্প সময়ে পড়ে ফেলা যায় এই সংক্ষিপ্ত কিন্তু পরিপূর্ণ সংবাদগুলো। আমার কাছে প্রথম আলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এর ফিচার পাতা আমার অত্যন্ত প্রিয় একটি অংশ। ‘রস+আলো’ পড়ে হাসতে থাকি নিজের মনে একা একা। সাময়িক প্রসঙ্গগুলোকে এত সুন্দরভাবে রসময় করে তোলা যায়, তা প্রথম আলো না পড়লে বোঝা যাবে না। আমি অবাক হয়ে ভাবি, লেখকের কলম কত ক্ষমতাবান! আমার পেটে বোমা মারলেও তো এমন লেখা বের হবে না!
প্রথম আলোর ফিচার পাতার মধ্যে ‘ছুটির দিনে’, ‘স্বপ্ন নিয়ে’, ‘অন্য আলো’, ‘গোল্লাছুট’ ও ‘আনন্দ’ পড়ে প্রচুর আনন্দ পাই। প্রথম আলো আমার দৈনন্দিন জীবনের আনন্দের একটি উৎস। যদি কোনো কারণে আমার মন খারাপ হয়, তাহলে প্রথম আলোর ফিচার পাতায় ‘রস+আলো’ পড়ি। আমার মন তখন ভালো হয়ে যায়।
ও আর একটি কথা, বলতে প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম। প্রথম আলোর ফটোগ্যালারি থেকে দিনের ছবি দেখে আমার মন ভরে যায় তৃপ্তিতে। মনে হয়, বাংলাদেশের মাটির ঘ্রাণ পাই এ ছবিটির মধ্যে। তখন তাকিয়ে থাকি পলকহীন চোখে, মন চলে যায় সেই কৈশোর আর যৌবনে। যখন জীবন ছিল স্বপ্নে ভরপুর, ছিলাম মাটি ও মায়ের খুব কাছাকাছি। আর এত কিছুর জন্যই তো প্রথম আলো আমাদের পরিবারের একজন নিয়মিত সদস্য।
কানিজ ফাতেমা
কলাম্বিয়া, মেরিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র

No comments

Powered by Blogger.