তিন ঘণ্টায় শেষ কাসাব-অধ্যায়

'খোদার কসম, এই ভুল আর করব না।' মুম্বাই হামলায় জড়িত সন্ত্রাসী আজমল আমির কাসাবের শেষ কথা ছিল এটি। তবে জীবনের এমন এক সময়ে এসে তাঁর এ উপলব্ধি হয়েছে, যখন দ্বিতীয়বার সুযোগ পাওয়ার আর কোনো পথ খোলা ছিল না।
বুধবার ভোরে ওই কথা বলার কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাঁর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে অপারেশন এক্স নামের অতি গোপন অভিযান, যার খবর প্রধানমন্ত্রীকেও জানানো হয়নি। তিনি জেনেছেন টেলিভিশন দেখে। মিশনের পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন মাত্র ১৭ জন। বাস্তবায়নে সময় লেগেছে তিন ঘণ্টা।
তীব্র গোপনীয়তা আর নিরাপত্তায় মোড়া ছিল কাসাবের ফাঁসির রায় কার্যকরের পুরো প্রক্রিয়া। কাসাবের বিচার সম্পন্ন হয় মুম্বাইয়ে। সেখানকার আর্থার রোডের কারাগারে ছিলেন তিনি। গত মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে কাসাবকে জানানো হয়, পুনের ইয়েওয়াড়া কারাগারে নিয়ে যাওয়া হবে তাঁকে। তখনো বলা হয়নি, ভোরেই তাঁর ফাঁসি কার্যকরের সময় চূড়ান্ত হয়েছে।
কারা সূত্রের বরাত দিয়ে জি নিউজ জানায়, পুনেতে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে ফাঁসি পর্যন্ত কাসাবকে কখনোই উত্তেজিত মনে হয়নি। নার্ভাস থাকলেও শান্তভাবে প্রতিটি নির্দেশ মেনেছেন। ইয়েওয়াড়ায় পেঁৗছানোর পর তাঁকে জানানো হয়, ভোরেই ফাঁসি কার্যকর করা হবে। শোনার পর শুধু বলেছেন, 'আমার মাকে জানিয়ে দেবেন।' কোনো শেষ ইচ্ছাও জানাননি। বুধবার খুব ভোরে উঠে আধা ঘণ্টার মধ্যেই তৈরি হয়ে নেন। গোসল করে নতুন কাপড় পরে নামাজ পড়েন।
ডাক্তারি পরীক্ষার পর ঠিক সকাল সাড়ে ৭টায় ফাঁসিতে ঝোলানো হয় কাসাবকে। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আরেক আসামি আফজাল গুরুকে ফাঁসি দেওয়ার জন্য যে দড়ি তৈরি করা হয়েছিল তা দিয়েই কাসাবের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। লম্বায় ১৯ ফুট দড়িটি তৈরি করে বিহারের বঙ্ার জেলের কয়েদিরা। ১২৭ কেজি ওজন সহ্য করার মতো করে তৈরি করা হয় সেটি। ঝোলানোর ১০ মিনিট পর কাসাবের মৃত্যু নিশ্চিত করেন চিকিৎসকরা।
হামলার চতুর্থ বার্ষিকীর মাত্র চার দিন আগে ফাঁসি কার্যকর করা হলো। প্রায় দুই মাস আগে কাসাবের ফাঁসির তারিখ ধার্য করা হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্দের সইয়ের পর কাসাবের মৃত্যুদণ্ডের আদেশে রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত অনুমোদন দেন এ মাসের ৫ তারিখে। রাষ্ট্রপতি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, কয়েকজন আমলা, পুলিশ কর্মকর্তা ও জল্লাদসহ ১৭ জন এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। ফাঁসির পুরো প্রক্রিয়া ভিডিও করে রাখা হয়েছে। তিন ঘণ্টার মধ্যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। অভিযান শেষে তিন লাইনের একটি বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আর্থার রোডের কারাগারে থাকাকালে শেষদিকে একেবারে শান্ত ছিলেন কাসাব। কান্নাকাটি করতেন না। নিরাপত্তা ছাড়া আর কোনো বিষয়ে আলাদা কোনো ব্যবস্থাও তাঁর জন্য নেওয়া হয়নি। খেতেন খুব অল্প। ওজন কমছিল। শেষ দিন ওজন ছিল সাড়ে ৫২ কেজি।
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বাইয়ের কয়েকটি স্থানে একযোগে হামলা চালায় ১০ সদস্যের অস্ত্রধারী একটি দল। এতে মারা যায় ১৬৬ জন। চার দিন ধরে সংঘর্ষের পর নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। ওই হামলার একমাত্র জীবিত ও আটক সন্ত্রাসী ছিলেন কাসাব। সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস, জিনিউজ।

No comments

Powered by Blogger.