অস্ত্রবিরতির পর চলছে হার-জিতের বিশ্লেষণ

আট দিন ক্রমাগত সহিংসতার পর গতকাল বৃহস্পতিবার গাজা ও ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রূপ ফিরে পেতে শুরু করে। মিসরের মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ার পর ইসরায়েল বিমান হামলা বন্ধ করেছে। হামাসের সদস্যরাও রকেট ছোড়ায় বিরতি দিয়েছে।
গাজার নিয়ন্ত্রণকারী দল হামাস ও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ উভয়েই এ অস্ত্রবিরতিকে নিজেদের জয় বলে দাবি করেছে। তবে বিশ্লেষকরা এখনো কোনো রায় দেননি।
মিসরের স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৯টায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে অস্ত্রবিরতির ঘোষণা আসে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে সঙ্গে নিয়ে মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামেল আমর এ ঘোষণা দেন। গত ১৩ নভেম্বর হামলা শুরুর পর গত বুধবার রাতেই প্রথমবারের মতো গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হয়। সহিংসতা বন্ধের ঘটনা উদ্যাপন করতে শত শত লোক গাজার রাস্তায় নামে এবং পতাকা উড়িয়ে উল্লাস প্রকাশ করে। অস্ত্রবিরতি উপলক্ষে গতকাল গাজায় ছিল সরকারি ছুটি। আট দিনের সহিংসতায় ১৬৩ ফিলিস্তিনি ও পাঁচ ইসরায়েলির মৃত্যুর পর হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সমাঝোতা হলো।
হামাস ও ইসরায়েল উভয়েই যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে নিজেদের জয় বলে দাবি করেছে। হামাস-প্রধান খালেদ মেশাল বুধবার রাতে কায়রোয় উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, 'ইসরায়েল তার সব লক্ষ্য পূরণেই ব্যর্থ হয়েছে। তারা যদি অঙ্গীকার পূরণ করে, আমরাও করব। তারা শর্ত ভাঙলে আমাদের রাইফেলও গর্জে উঠবে।' ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে বলেন, "গাজায় হামলার অভিযান 'পিলার অব ডিফেন্স' হামাসের জন্য বিরাট এক ধাক্কার মতো ছিল। সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে আমরা কড়া জবাব দিয়েছি। আমরা তাদের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আক্রমণ করেছি, হাজারো রকেট ধ্বংস করেছি, হামাস নিয়ন্ত্রিত স্থাপনাগুলো ধ্বংস করেছি।" কোনো ধরনের উসকানি বা রকেট হামলা হলে যেকোনো মুহূর্তে অস্ত্রবিরতির শর্ত ভঙ্গ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী এহুদ বারাক। ইসরায়েলি কয়েকটি সংবাদমাধ্যম 'পরীক্ষামূলক অস্ত্রবিরতি' চলছে বলে মন্তব্য করেছে। অভিযান ঠিকমতো শেষ না করার অভিযোগ তুলে নেতানিয়াহুর সমালোচনা করেছে ইসরায়েলের বিরোধী দলগুলো।
হামাস দাবি করছে, অস্ত্রবিরতির চুক্তিতে তাদের প্রায় সব শর্তই পূরণ হয়েছে, বিশেষ করে হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা ও গাজায় আকস্মিক হামলা বন্ধের অঙ্গীকার করেছে ইসরায়েল। গাজার ওপর থেকে ইসরায়েলি অবরোধ তুলে নেওয়ার ব্যাপারে গতকাল থেকে আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল। আহমেদ আল জাবারিসহ জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতার মৃত্যুর কারণে অস্ত্রবিরতিকে হামাসের জন্য এক ধরনের পরাজয় হিসেবে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এবারের সহিংসতায় মিসর, তুরস্ক, কাতার ও ইরানের দৃঢ় সমর্থন পাওয়ায় বিষয়টিকে তাদের জন্য জয় বলেও ধরে নেওয়া হচ্ছে। তবে যুদ্ধবিরতির মূল্য হিসেবে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে জাতিসংঘে সার্বভৌম রাষ্ট্রের দাবি না তোলার ব্যাপারে রাজি করিয়ে ফেলেছে বলেও সন্দেহ রয়েছে। গতকাল পশ্চিম তীর থেকে ৫৫ ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করে ইসরায়েল। তবে প্রায় সব দিক থেকেই হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিকে মিসরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির জন্য বড় অর্জন বিবেচনা করা হচ্ছে। সহিংসতা বন্ধে তাদের বড় ধরনের ভূমিকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক নেতারা তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। সূত্র : বিবিসি, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.