পাল্টাপাল্টি অভিযোগ- গাজায় অস্ত্রবিরতি কার্যকর স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয়

আট দিনের টানা রক্তক্ষয়ী সহিংসতার পর গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়েছে। দুই পক্ষ প্রতিপক্ষের ভূখণ্ডে হামলা বন্ধে রাজি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) অস্ত্রবিরতির পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।
তবে কেউ কেউ চুক্তির সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন ও স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।
চুক্তি অনুযায়ী গাজায় যেকোনো লক্ষ্যবস্তুতে জল, স্থল ও আকাশ থেকে হামলা বন্ধ রাখবে ইসরায়েল। অন্যদিকে ইসরায়েলি সীমান্তে রকেট হামলাসহ সব ধরনের হামলা বন্ধ রাখবে হামাসসহ ফিলিস্তিনি সংগঠনগুলো।
এদিকে অস্ত্রবিরতি বলবৎ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুই পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে চুক্তির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ করেছে। গাজা থেকে ১২টি রকেট হামলা চালানো হয়েছে বলে ইসরায়েলের পুলিশ দাবি করেছে। তবে এতে কেউ হতাহত বা কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। হামাস এ দাবি নাকচ করে বলেছে, চুক্তি-পরবর্তী সময়ে বরং গাজায় একটি বিস্ফোরণ হয়েছে।
এর আগে গত বুধবার মধ্যরাতে মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ কামাল আমর কায়রোয় এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, হামাস ও ইসরায়েল অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এ সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন উপস্থিত ছিলেন।
কায়রোয় ঘোষণার পরপরই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে অস্ত্রবিরতির চুক্তিতে সমর্থন দেওয়ার কথা জানানো হয়। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এ চুক্তি মেনে নিতে প্রস্তুত। তবে ইসরায়েল সরকারের এক মুখপাত্র জানান, অস্ত্রবিরতির শর্ত ভঙ্গ করা হলে আত্মরক্ষার্থে আবারও যুদ্ধে নামবেন তাঁরা।
হামাসের মুখপাত্র মুসা আবু মারজুক জানান, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী দুই পক্ষকেই সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। সীমান্ত পারাপার বাধামুক্ত এবং বিনা বাধায় মানুষ ও পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করতে হবে।
অস্ত্রবিরতি ঘোষণার পর গাজায় আকাশে ফাঁকা গুলি ছুড়ে ও আতশবাজি ফুটিয়ে উল্লাস করে ফিলিস্তিনিরা। ইসরায়েলি ড্রোনগুলো তখনো তাদের মাথার ওপর চক্কর দিচ্ছিল। এ চুক্তির মধ্য দিয়ে গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণ ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন হামাস নেতা খালেদ মেশাল।
জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন অস্ত্রবিরতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। অস্ত্রবিরতির প্রস্তাবে সম্মত হওয়ায় ইসরায়েলের প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। একই সঙ্গে তিনি আবারও বলেন, ইসরায়েল যা কিছু করেছে, তা আত্মরক্ষার্থেই করেছে। মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনের জন্য মিসরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।
নিরাপত্তা পরিষদ হামাস ও ইসরায়েলের প্রতি অস্ত্রবিরতির শর্ত মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি গাজায় জরুরি ত্রাণসহায়তা পাঠানোর জন্যও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানায়।
অস্ত্রবিরতিকে স্বাগত জানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতা হোসে ম্যানুয়েল বারোসো ও হার্মান ফন রম্পুই বলেন, উভয় পক্ষকে চুক্তির শর্ত বাস্তবায়ন এবং ফের এ ধরনের সহিংসতা যাতে শুরু না হয়, তা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ অস্ত্রবিরতিকে স্বাগত জানান। তবে এর বাস্তবায়ন নিয়ে তেমন একটা আশাবাদী হতে পারছেন না তিনি।
অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ার আগের দিনও সহিংসতায় দুই পক্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। টানা আট দিনের সহিংসতায় ১৬২ জন ফিলিস্তিনি ও পাঁচজন ইসরায়েলি নিহত হয়েছে। গাজায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৭ জনই শিশু। এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি

No comments

Powered by Blogger.