অভিনন্দন আবুল হাসান-টেস্ট ক্রিকেটে বিরল অর্জন

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের টসে জিতে ব্যাট হাতে মাঠে নামার মধ্য দিয়ে বুধবার খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম ক্রিকেটের সপ্তম ভেন্যু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বিপুল উদ্দীপনার সঙ্গে মাঠে আসা দর্শকদের নিরাশ করে একে একে প্রথম সারির স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরা সাজঘরে ফিরে আসেন।
তখন ১৯৩ রানে বাংলাদেশের আটটি উইকেটের পতন হয়েছে। মাঠে ব্যাট হাতে নেমে আসেন বোলার হিসেবে দলে ঠাঁই পাওয়া তরুণ এক খেলোয়াড়। দর্শক-বোদ্ধা সবারই তখন স্বাভাবিক যুক্তিতেই ধারণা, এখন শুধু যাওয়া-আসার পালা। হয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস ২০০ রানের মধ্যেই গুটিয়ে যাবে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমর্ষ হয়ে পড়া দর্শকরা একটু নড়েচড়ে বসতে শুরু করল। সারা দেশের মানুষ টেলিভিশন থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিতে গিয়েও আবার ফিরে তাকাল স্ক্রিনের দিকে। তারপর যে কাণ্ড ঘটতে থাকল, তাতে দর্শকরা যেন নিজেদের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারল না। বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাস নাড়িয়ে দিলেন সিলেটের কুলাউড়া থেকে উঠে এসে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষিক্ত আবুল হাসান। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রথমে অর্ধশত, তারপর অবিশ্বাস্য ও অবিস্মরণীয় শতক পূর্ণ করে শুধু শেখ নাসের স্টেডিয়ামই নয়, সারা দেশে এক নতুন প্রাণসঞ্চার করে দিলেন। টানটান উত্তেজনায় বুধবার টেস্ট ক্রিকেট উপভোগ করল বাংলাদেশে লাখ লাখ দর্শক। খোঁজ পড়ে গেল, কে, কবে ১০ নম্বরে ব্যাট হাতে নেমে এমন অসাধ্য সাধন করতে পেরেছেন, অথবা আদৌ পেরেছেন কি না। ধূসর হয়ে যাওয়া ক্রিকেট ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেল, ১৯০২ সালে, অর্থাৎ ১১০ বছর আগে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেকে ১০ নম্বরে ব্যাট করতে এসে শত রানের একমাত্র রেকর্ডটি করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড় রেগি ডাফ। এমন রেকর্ডের খেলা ক্রিকেটের ইতিহাসে আর কেউ নেই। এবার বাংলাদেশের আবুল হাসান সে রেকর্ডে ভাগ বসালেন। বলা যায়, রেকর্ড ভাঙলেন। কারণ রেগি ডাফ করেছিলেন ১০৪ রান, আর আবুল হাসান তাঁকে অতিক্রম করে সংগ্রহ করেছেন ১১৩ রান। অভিষেকে শতরান করেছেন এর আগে পৃথিবীর বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়। বাংলাদেশের মোহাম্মদ আশরাফুলও সবচেয়ে কম বয়সে অভিষেক টেস্টে শতরান করে দেশের ক্রিকেটকে গৌরবান্বিত করেছেন। কিন্তু আবুল হাসান যা করলেন, তা ক্রিকেটের ইতিহাসেই বিরল। অভিনন্দন আবুল হাসান রাজু।
এরই নাম ক্রিকেট। এ জন্যই বলা হয়, ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। এখন প্রায়ই বলা হয়ে থাকে, টেস্ট ক্রিকেটের প্রাণ নেই। তা ছাড়া বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ফলাফল এখন পর্যন্ত মোটেই সুখকর নয়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে নতুন করে যে প্রাণসঞ্চার করলেন আবুল হাসান, তা থেকে আমরা পেছনের ফলাফল ভুলে যেতে চাই। এই তরুণ ক্রিকেটার এক নতুন প্রেরণা হয়ে দেখা দিলেন। তাঁর এ উদ্দীপনায় উজ্জীবিত হয়ে তরুণদের মধ্য থেকে প্রতিভাবান ক্রিকেটার উঠে আসবে। সেই সঙ্গে ক্রিকেটে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে ভালো ফল করবে, থাকবে ইতিবাচক ফলের ধারাবাহিকতা- আমরা আশা রাখি। বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড সাধ্যমতো ক্রিকেট খেলোয়াড়দের নার্সিং করার চেষ্টা করে। কিন্তু আরো স্বচ্ছতার সঙ্গে, একাগ্রতার সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অবহেলিত এলাকায় যত্ন নিয়ে ক্রিকেটার সংগ্রহের কাজটি করলে নিশ্চয়ই আরো অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার দেশের পক্ষে অংশ নিয়ে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করবে। আরো একবার অভিনন্দন দেশের এই তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটার আবুল হাসান রাজুকে।

No comments

Powered by Blogger.