ফাঁসির বদলা নেওয়ার হুমকি তালেবানের-পাকিস্তানে বোমায় নিহত ২৪

আজমল কাসাবকে ফাঁসিতে ঝোলানোয় ভারতের ওপর চরম খেপেছে পাকিস্তানি তালেবান। এই ফাঁসির বদলা নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করে অচিরেই ভারতীয় স্থাপনা ও দেশটির নাগরিকদের ওপর হামলার হুমকি দিয়েছে তারা। এ ঘটনায় ভারতের রাজধানী ও প্রধান শহরগুলোতে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
দেশটির জল ও স্থল সীমান্তে বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ ও নজরদারি বাড়িয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনীগুলো। পৃথক ঘটনায় পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি ও পেশোয়ারে তালেবানের বোমা হামলায় ২৩ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। করাচিতেও রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে গতকাল বৃহস্পতিবার বোমা হামলা চালানো হয়। দেশটিতে ডি-এইট শীর্ষ সম্মেলন শুরুর আগ মুহূর্তের এই হামলায় ভীষণ বেকায়দায় পড়েছে পাকিস্তান সরকার।
২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ের তাজ হোটেল ও রেলস্টেশনসহ কয়েকটি স্থানে বোমা হামলা চালায় লস্কর-ই-তৈয়বার জঙ্গিরা। এতে অন্তত ১৬৬ ভারতীয় নাগরিক নিহত হয়। সে সময় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে সব জঙ্গি মারা গেলেও আহত অবস্থায় ধরা পড়েন কাসাব। চার বছর ধরে বিচার শেষে গত বুধবার সকালে পুনের ইয়েরাওয়াদা কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কাসাবের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে ভারত। তাঁর পরিবার মৃতদেহ নিতে রাজি না হওয়ায় ওই কারাগারের ভেতরেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।
পাকিস্তানি তালেবান এ ঘটনায় ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে কাসাবের মৃতদেহ পাকিস্তানে ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। অন্যথায় ভারতীয়দের ওপর হামলার হুমকি দিয়েছে তারা।
গতকাল পাকিস্তানি তালেবানের মুখপাত্র এহসানউল্লাহ এহসান অজ্ঞাত স্থান থেকে টেলিফোনে রয়টার্সকে জানিয়েছেন, 'আজমল কাসাবকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে আমরা ভারতীয়দের ওপর হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।' কাসাবের মৃতদেহ ফেরত চেয়ে তিনি বলেন, 'তারা (ভারত সরকার) যদি কাসাবের মৃতদেহ আমাদের বা তাঁর পরিবারের কাছে ফেরত না দেয় তাহলে আমরাও ভারতীয়দের ধরব এবং তাদের দেহ ফেরত দেব না।' একই সঙ্গে ভারতের যে কোনো স্থানে হামলার ঘোষণাও দেন তিনি।
এদিকে আজমল কাসাবের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় স্বস্তি ও উল্লাস প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। টাইমস অব ইন্ডিয়া শিরোনাম করেছে 'ফাঁসির দড়িতে এক পুতুলের জীবনাবসান'। পাইওনিয়ার পত্রিকার শিরোনাম ছিল, 'কাসাবের ফাঁসি, ভারত উল্লসিত'। হিন্দুস্তান টাইমস সম্পাদকীয়তে লিখেছে 'ভারত সরকার গোপনীয়তা রক্ষা করে তাকে (কাসাবকে) হত্যা করে কৃতিত্ব দেখিয়েছে।'
এদিকে তালেবানের কাছ থেকে হুমকি পাওয়ার পর পাকিস্তানে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের নিরাপত্তাব্যবস্থা আরো জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ।
ইসলামাবাদে তালেবানের বোমা হামলায় ২৩ ব্যক্তি নিহত : এদিকে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের কাছে রাওয়ালপিন্ডি শহরে গত বুধবার মধ্যরাতে মুসলমান শিয়া সম্প্রদায়ের মহররমের শোভাযাত্রার অনুষ্ঠানে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ২৩ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে আরো ৬২ জন গুরুতর আহত হয়। আর গতকাল সকালে পাকিস্তানের আরো দুটি বড় শহর পেশোয়ার ও করাচিতেও রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে বোমা হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। পেশোয়ারে একটি পুলিশ চেকপোস্টের কাছে দুটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। এতে এক ব্যক্তি নিহত হয়। শহরটির অন্য এলাকায় পাতা আরেকটি বোমা ফাটার আগেই নিষ্ক্রিয় করা হয়। করাচিতে বিস্ফোরিত হয় আরেকটি বোমা। তেহরিক-ই-তালেবান (টিটিপি) নামের একটি সংগঠন করাচি ও রাওয়ালপিন্ডিতে বোমা হামলার দায়দায়িত্ব স্বীকার করেছে। পেশোয়ারের ঘটনার দায় এখনো নেয়নি কোনো জঙ্গি সংগঠন।
এদিকে ডি-এইট শীর্ষ সম্মেলন শুরুর আগ মুহূর্তে এ ধরনের বোমা হামলার ঘটনায় ভীষণ নাজুক পরিস্থিতিতে পড়েছে পাকিস্তান। দেশটির সব বিমানবন্দরে নিরাপত্তার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারির নির্দেশ দিয়েছেন পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে রাওয়ালপিন্ডি ইসলামাবাদের সবচেয়ে কাছের শহর হওয়ায় ডি-এইট সম্মেলনেও এর প্রভাব পড়তে পারে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ও তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়িপ এরদোগানসহ বিভিন্ন দেশের নেতাদের এই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। সূত্র : এএফপি, ডন, বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, হিন্দুস্তান টাইমস, টাইমস অব ইন্ডিয়া।

No comments

Powered by Blogger.