কি বলতে চায় ন্যান্সি! by কামরুজ্জামান মিলু

খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সংগীতাঙ্গনে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌছে গেছেন কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। অন্য অনেকের সাথে কাজ করলেও আলোচনায় উঠে আসেন হাবিবের হাত ধরে। সম্প্রতি ছয় বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টেনেছেন জনপ্রিয় এই গায়িকা।


২০০৯ সালে তাঁর প্রথম একক অ্যালবাম ‘ভালোবাসার অধরা’ বাজারে আসে। অ্যালবামটির বেশ কিছু গান জনপ্রিয়তাও পায়। এর পর দীর্ঘ তিন বছর পর প্রকাশিত হয় তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘রঙ’। এ অ্যালবামে একটি দ্বৈত গানের পাশাপাশি সবগুলো গানের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেন হাবিব ওয়াহিদ।
এবার ন্যান্সি শুরু করছেন তাঁর তৃতীয় একক অ্যালবামের কাজ। তবে নতুন এ অ্যালবামে তিনি একাধিক গীতিকার ও সুরকারের গান করার পরিকল্পনা করেছেন।

ন্যান্সি তাঁর তৃতীয় একক অ্যালবামের বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘মৌখিকভাবে জি-সিরিজের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। যেহেতু বিষয়টা চূড়ান্ত হয়নি তাই আমি এখনই কিছু বলতে চাই না। তবে শ্রোতা-ভক্তদের জন্য আমি ভিন্ন আঙ্গিকে কিছু গান করব। আশাকরি নতুন অ্যালবামের গানগুলো অনেকের ভালো লাগবে।’’

জন্মসূত্রে যশোরের মেয়ে হলেও ন্যান্সি বেড়ে উঠেছেন সোমেশ্বরী নদীর পাড়ের নেত্রকোনায়। পুরো নাম নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি। মা জোৎস্না হক ছিলেন শখের সঙ্গীত শিল্পী। ছোট্ট ফুটফুটে মেয়েটির খেলার সঙ্গী ছিল তার মায়ের হারমোনিয়াম।

গানের প্রতি এমন আগ্রহ দেখে বাবা-মা তিন বছর বয়সেই আদরের দুলালীকে তালিম নেয়ার জন্য দিলেন ওস্তাদ তারাপদ দাসের কাছে। এরপর পাঁচ বছর বয়সে নজরুলসঙ্গীত ও ক্লাসিক্যাল শেখার জন্য শিশু একাডেমিতে ভর্তি করানো হলো। পাশাপাশি নাচের উপরও তালিম নেন এসএসসি পর্যন্ত। ছোট সেই মেয়েটিই আজ দেশের অন্যতম জনপ্রিয় গায়িকা।
তবে আজকের ন্যান্সি হয়ে ওঠার পেছনে চমৎকার একটা গল্প আছে। নেত্রকোনায় থাকাকালীন ন্যান্সির বাসায় এক সন্ধ্যায় ঘরোয়া গানের আসরে তার মামা নজরুল ইসলামের সঙ্গে আসেন বিখ্যাত শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ।

সেদিন ন্যান্সির গান শুনে তিনি বেশ খুশি হয়ে তার মাথা ছুঁয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন। ফেরদৌস ওয়াহিদ তখন ঢাকায় এসে ছেলে হাবিবের কাছে ন্যান্সির কন্ঠের স্বকীয়তা ও মাধুর্যতার প্রশংসা করেন।

হাবিব ‘ভালবাসবো বাসবোরে ...’ গানটির কোরাসের জন্য সে সময নতুন মেয়ে খুঁজছিলেন। তাই ন্যান্সিকে তিনি তার স্টুডিওতে ডেকে পাঠান। সেই সময় ঢাকায় এসে ন্যান্সিকে গানটির কোরাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়েছিল।

কিন্তু সেদিন হাবিব ঠিকই ন্যান্সির জাতটা চিনেছিলেন। তাই তিনি আবারও ন্যান্সিকে ডেকে পাঠান। এবার হাবিব ন্যান্সিকে দিয়ে করিয়ে ফেলেন ফ্রেশ সয়াবিন তেলের চমৎকার একটা জিঙ্গেল।

nancy২০০৫ সালে ‘হূদয়ের কথা’ ছবির গানে কণ্ঠ দিয়ে মিডিয়ায় যাত্রা শুরু হয় ন্যান্সির। একই বছরে বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলেও অভিষেক হয় তাঁর।

পরের বছরে ২০০৬ সালে ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’ ছবির ‘পৃথিবীর যত সুখ যত ভালোবাসা’ গানটির মাধ্যমে রাতারাতি আলোচনায় আসেন ন্যান্সি।

সে বছরের ২১ জানুয়ারি ভালোবেসে বিয়ে করেন ন্যান্সি ও সৌরভ। এর পরের বছর অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গায়িকা ন্যান্সি ও সৌরভের ঘরে জন্ম নেয় কন্যাসন্তান রোদেলা। তার বয়স এখন ছয়।

সম্প্রতি সৌরভের সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়ে ন্যান্সি বলেন, ‘আমার ছয় বছরের সংসার। সংসার জীবনে মতের অমিলের কারণেই সম্পর্কের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে সেটা একেবারেই পারিবারিকভাবে এবং দুজনের সমঝোতার মাধ্যমেই হয়েছে। একসঙ্গে সংসার করতে গিয়ে আমাদের দুজনের মধ্যে বেশ কিছু ভুল বোঝাবুঝির তৈরি হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে উভয়ের পারিবারিক হস্তক্ষেপে বিয়ে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’

ন্যান্সির গাওয়া গানগুলো গত কয়েকবছরের সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় গানের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। ‘বাহির বলে দূরে থাকুক’, ‘হৃদয়ের কথা’, ‘পৃথিবীর যত সুখ’, ‘এতদিন কোথায় ছিলে’, ‘দুই দিকেই বসবাস’, ‘চাঁদকে যেমন ঘোমটা দিয়ে’, ‘ভালবাসা অধরা’, গানগুলো বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এত জনপ্রিয় গান করেও ন্যান্সি চলছেন স্রোতের বিপরীতে । বেশি বেশি গান করা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন।

সম্প্রতি ‘পোড়ামন’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করেছেন ন্যান্সি। সফট মেলোডিয়াস ধাঁচের এ গানটির সঙ্গীত পরিচালনা করছেন ইমন সাহা। `ভালোবাসাতে পুঁড়ে পুঁড়ে খাঁটি হয় পোড়ামন` এমন কথায় গানটি লিখেছেন ও সুর করেছেন শফিক তুহিন ।
ন্যান্সি বলেন, “এর আগে `পাগলামী` অ্যালবামের টাইটেল গানটিতে তুহিন ভাইয়ের সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছিলাম। গানটি অনেকেই পছন্দ করেছেন। এবার চলচ্চিত্রের জন্য গাইলাম।”
ন্যান্সি জানান, চলতি মাসেই তিনি ‘সাগরের নোনা জল’ শিরোনামের আরেকটি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করবেন। তাছাড়া আগামী মাসে লন্ডনে বসবাসরত বাংলাদেশীদের আমন্ত্রণে একটি কনসার্টেও তার অংশগ্রহণের কথা রয়েছে।

২০১১ সালের মেরিল-প্রথম আলো তারকা জরিপে ‘পাগল তোর জন্য’ গানটির কণ্ঠশিল্পী হিসেবে সেরা গায়িকার পুরস্কার জেতেন ন্যান্সি। এর আগে ২০১০ সালেও ন্যান্সি মেরিল-প্রথম আলো তারকা জরিপে সেরা গায়িকার পুরস্কার পেয়েছিলেন।

বিবাহ-বিচ্ছেদের পর এখন নিজেকে নিয়ে কী চিন্তাভাবনা করছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে ন্যান্সি বলেন, ‘দেশ-বিদেশের সবাই আমাকে একজন কণ্ঠশিল্পী হিসেবে চেনে। তবে আমি কিন্তু কখনোই গান-বাজনাকে পেশা হিসেবে মনে করিনি। এটা আমার কাছে অন্য রকম সাধনার একটা বিষয়। তাই যত দিন শ্রোতারা আমার কণ্ঠে গান শুনতে চাইবেন, তত দিন গান করে যাব।

No comments

Powered by Blogger.