পদ্মা সেতু ॥ এপ্রিলে ভিত্তিপ্রস্তর- ০ বিবৃতির মাধ্যমে এডিবির আনুষ্ঠানিক সন্তোষ প্রকাশ- ০ অক্টোবরে সেতুর টেন্ডার আহ্বান

চলতি বছরের অক্টোবর মাসেই পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হবে। আর আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাসে এ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান।


তিনি বলেন, সরকারের এই কর্মপরিকল্পনার কথা বিশ্বব্যাংকসহ অন্য সহযোগী সংস্থাগুলোর কাছে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
এদিকে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়নে ফেরার ঘোষণা দেয়ায় এ প্রকল্পের অপর ঋণদাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক সন্তোষ প্রকাশ করেছে। সেই সঙ্গে অন্য ঋণদাতা সংস্থার সঙ্গে মিলে পদ্মা সেতু নির্মাণে এডিবি বাংলাদেশকে সহযোগিতা দিয়ে যাবে।
সোমবার এডিবির এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ সরকার সন্তোষজনকভাবে শর্ত পূরণ করায় বিশ্বব্যাংক পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের যে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে, তাতে এডিবি আনন্দিত। বাংলাদেশের মানুষ এবং পুরো অঞ্চলের জন্যই এটি একটি সুখবর।’
উল্লেখ্য, ২৯১ কোটি ডলারের পদ্মা সেতু প্রকল্পে এডিবি ৬১ কোটি ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি ডলার, জাইকা ৪০ কোটি ডলার এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক ১৪ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার জন্য চুক্তি করেছে।
বাংলাদেশের মানুষের জন্য পদ্মা সেতুর গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে এডিবি এই প্রকল্পকে একটি ‘আইকনিক প্রজেক্ট’ হিসাবে উল্লেখ করেছে। এ প্রসঙ্গে সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘মানুষের জীবন বদলে দেয়ার পাশাপাশি বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের অসাধারণ সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে এই সড়ক সেতু।’ বাংলাদেশ সরকারের সব শর্ত পূরণের পর বিশ্বব্যাংক গত ২০ সেপ্টেম্বর পদ্মা প্রকল্পে ফেরার ঘোষণা দেয়। এ বিষয়ে এডিবি বলছে, ‘দুর্নীতির অভিযোগসহ সার্বিক বিষয়গুলো বাংলাদেশ গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ায় এডিবি সন্তুষ্ট। এ প্রকল্পকে এগিয়ে নিতে সাহসের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নেয়ায় এডিবি বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।’
পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরুর ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যেভাবে হিসাব করেছি ফর ব্রিজ কনস্ট্রাকশন, বিশ্বব্যাংক ইতোমধ্যে এগ্রি করেছে। আরও কিছু টেন্ডার ডকুমেন্ট তাদের কাছে আছে। সেগুলো তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগামী অক্টোবরে পদ্মা সেতুর জন্য দরপত্র আহ্বান করে এপ্রিল-মে মাসে ব্রিজের ফাউন্ডেশন করব আমরা। ‘উই শুড গো ফর টেন্ডার।’
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংক গত বৃহস্পতিবার পদ্মা সেতুতে ফেরার ঘোষণা দেয়ার পর এই প্রথম অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন।
বিশ্বব্যাংক ঋণ বাতিলের পরও অপর ঋণদাতা দুই সংস্থা এডিবি ও জাইকা গত ৩১ জুলাই তাদের চুক্তির মেয়াদ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ায়। তাদের ঋণচুক্তির মেয়াদ ৩১ জুলাই শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরপর আবার গত ৩০ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় এডিবি আরও একমাস এবং জাইকা ৩ সপ্তাহ মেয়াদ বাড়ায়। জাইকার বাড়ানো চুক্তির মেয়াদ গত ২১ সেপ্টেম্বর শেষ হলেও এখন পর্যন্ত তারা এ ব্যাপারে কোন ঘোষণা দেয়নি। তবে এডিবির ঋণের মেয়াদ ৩১ সেপ্টেম্বর শেষ হবে। তার আগেই এডিবি এ প্রকল্পে তাদের পুনরায় সহযোগিতার ঘোষণা দিয়েছে।
বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এ প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চারটি শর্ত দেয়। তা পূরণ হয়নি জানিয়ে গত ২৯ জুন তারা এ প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করে।
এরপর সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংককে ফেরাতে নানামুখী তৎপরতা শুরু করে। সমালোচনার মুখে থাকা মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেন, ছুটিতে যান সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন। প্রকল্প থেকে সরানো হয় ইন্টিগ্রিটি এ্যাডভাইজর মসিউরকে। সব শর্ত পূরণের পর গত ২০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফেরার ঘোষণা দেয় বিশ্বব্যাংক।
এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ইকবাল মাহমুদ গত রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বিশ্বব্যাংক যে শর্ত দিয়েছিল, তা পূরণ হয়েছে বলেই তারা ফিরে এসেছে।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করতে হবে কি না জানতে চাইলে তিনি জানিয়েছেন, বহুজাতিক এই আন্তর্জাতিক সংস্থার একটি প্রতিনিধি দল অচিরেই ঢাকায় আসছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণে প্রকল্প ব্যয় ২৯১ কোটি মার্কিন ডলার ধরা হয়েছিল। এতে বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা। এছাড়া এর মধ্যে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৬১.৫ কোটি, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ৪১.৫ কোটি এবং ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) ১৪ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার কথা। আর বাকি অর্থের যোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার।

No comments

Powered by Blogger.