প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু

পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসায় গোটা দেশের মানুষই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এই সেতু নির্মিত অত্যন্ত জরুরী। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের বৃহত্তম এই সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে শুধু দক্ষিণাঞ্চলই নয়, সারাদেশেই এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।


অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সেতু নির্মাণ সম্ভব হলে জাতীয়ভাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এই প্রবৃৃদ্ধির হার হবে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। ফলে এ অঞ্চলে দারিদ্র্যের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাবে। তাই বিশ্বব্যাংকের এই ফিরে আসাটা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সম্ভাব্য দুর্নীতি ও অসচ্ছতার অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে তাদের প্রতিশ্রুত ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি গত ২৯ জুন বাতিল করে দেয়। বহু দেনদরবারের পর এবং বিশ্বব্যাংকের দেয়া শর্ত পূরণ হওয়ায় তারা আবার পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে তাদের এই ফিরে আসা শর্তমুক্ত নয়। এবার আরও সুনির্দিষ্ট করে তারা কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছেÑক্রয় নীতিমালা তৈরি এবং স্বাধীন এক্সটারনাল প্যানেলকে সরকারের তদন্ত কাজ পর্যালোচনার অনুমতি প্রদান করা। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সরকার এসব শর্ত মেনে নিয়েছে বলেই বিশ্বব্যাংক আবার ঋণচুক্তি পুনর্বাহল করেছে। এই শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে উভয়পক্ষকেই অত্যন্ত যতœশীল ও সতর্ক থাকতে হবে। বিশ্বব্যাংক চায় দেশের বৃহত্তর প্রকল্পটি সব ধরনের দুর্নীতি, অসচ্ছতা ও অনভিপ্রেত হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থাকুক। এ জন্য সকল ধরনের তদারকি ও নজরদারি করার ব্যাপারে বিশ্বব্যাংক এই শর্তারোপ করেছে। স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি বন্ধের স্বার্থেই সরকার বড় বড় সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হয়নি। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সেতু বিভাগের সচিবকে এবং অর্থউপদেষ্টাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এখন সেতু প্রকল্পটা বাস্তবায়নের জন্য বাকি শর্তগুলোও মেনে নেয়া নিশ্চয় কঠিন হবে না। বর্তমান সরকার দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ। দুর্নীতির প্রশ্নে এ সরকার যে আপস করে না তার প্রমাণ সরকার ইতোমধ্যেই দিয়েছে।
এমনিতেই অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেছে। প্রকল্প শুরুর কাজ যত পেছাবে ততই ব্যয় বৃদ্ধিসহ নানা জটিলতা দেখা দেবে। বাংলাদেশের রয়েছে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা। পদ্মা সেতু প্রকল্পে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একে ত্বরান্বিত করতে হবে। পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক নাটক হয়েছে, পানি ঘোলা করা হয়েছে। মানুষ এখন আর সেসবের পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না। স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবে রূপ নিক, এটাই মানুষের প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.