বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে ॥ নতুন শর্ত নেই- ০ পুরনো চুক্তিতেই অর্থায়ন- ০ শীঘ্র আসছে প্রতিনিধি দল- ০ দুর্নীতিমুক্ত রাখার অঙ্গীকার করে সরকারের বিবৃতি

পদ্মা সেতুতে ফিরে আসার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক নতুন কোন শর্ত দেয়নি বলে বিবৃতি দিয়েছে সরকার। তাছাড়া পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ঋণ চুক্তি পুনর্বিবেচনার পর একটিই প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল, আর তা হচ্ছে আবার নতুন করে চুক্তি করতে হবে, নাকি পুরনো চুক্তিতেই চলবে? এ বিষয়টিও পরিষ্কার করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।


অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, যেহেতু এ প্রকল্পে কো-ফাইনান্সিং আছে এবং সহযোগী অর্থায়নকারী সংস্থা এখনও আছে, তাই নতুন করে চুক্তি করতে হবে না। পুরনো চার শর্ত পূরণ হওয়ায় তারা ফিরে এসেছে। তবে দু-এক সপ্তাহের মধ্যেই বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা ও আইডিবির প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসবে। সবাই মিলে যতদ্রুত সম্ভব বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। অন্যদিকে প্রকল্পটিকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়েছে। রবিবার পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসার পর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ইকবাল মাহমুদ। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেল অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বিবৃতি প্রকাশের একদিন পর সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়া হলো।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে ইকবাল মাহমুদ বলেন, সম্প্রতি সরকার জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলপত্র অনুমোদন করেছে। এই কৌশলপত্রে প্রতিটি পর্যায়ে স্বচ্ছতা, জবাবাদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটেছে। সরকার পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পটি এমনভাবে বাস্তবায়ন করবে যেন অনুকরণীয় প্রকল্প হিসেবে উজ্জ্ব¡ল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি দমনের বিষয়ে সরকার দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই সরকার দুর্নীতি নির্মূলে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃহত্তম উন্নয়ন প্রকল্প পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার শুরু থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করে। বিশ্বব্যাংক সরকারের এই দৃঢ়তায় তার পূর্ববর্তী নীতি (সড়ক যোগাযোগ খাতে অর্থায়ন স্থগিত) পরিবর্তন করে দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্পে অর্থায়নে এগিয়ে এসেছে। সরকার তার ঘোষিত নীতিতে অটল রয়েছে এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসার ক্ষেত্রে যারা সহযোগিতা করেছে তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের ক্ষেত্রে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, যুক্তরাজ্য ও চীন সরকারের গঠনমূলক ভূমিকাকে গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছে বাংলাদেশ।
পদ্মা সেতুর বাস্তবায়ন এবং দুর্নীতির তদন্ত একই সঙ্গে চলবে বলে উল্লেখ করে ইকবাল মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ সরকার পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন ও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে সহÑঅর্থায়নকারীদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করবে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকার প্রতিনিধিবৃন্দ ওয়াশিংটন, ম্যানিলা ও টোকিও থেকে অচিরেই ঢাকা আসবেন এবং সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত ও প্রকল্প বাস্তবায়নের বাস্তব কৌশল নির্ধারণ করবেন।
ইকবাল মাহমুদ বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে এডিবি, জাইকা ও আইডিবির সহ-অর্থায়নকারী হিসেবে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশ সরকার আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে অন্যতম সহ-অর্থায়নকারী হিসেবে বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসা দেশের জনগণের জন্য প্রতিশ্রুতিশীল ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশের বৃহত্তম অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে বাংলাদেশের সহযোগী হওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের এই দৃঢ়, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও ইতিবাচক সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে একটি স্বচ্ছ, দক্ষ ও কার্যকর কৌশল নির্ধারণের লক্ষ্যে উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী গত ১২ মাসে গৃহীত সরকারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণের ফলেই আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক সেতু নির্মাণে পুনরায় অংশগ্রহণের এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এখনও বিশ্বব্যাংকের চিঠি পাইনি। তাই পরিষ্কার কিছু বলতে না। পারলেও ধারণা করা হচ্ছে অর্থায়নকারীদের মিশন দু’রকমের হতে পারে। একটি হয়ত দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে কাজ করবে। অন্যটি কত দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় সেসব বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে।
সূত্র জানায়, শুক্রবার সকালে, এক বিবৃতির মধ্যদিয়ে পদ্মা সেতুতে পুনরায় অর্থায়নের বিষয়টি পরিষ্কার করে বিশ্বব্যাংক। তবে আবারও হুঁশিয়ারির সুরে বলেছে, এ প্রকল্পে যেকোন ধরনের দুর্নীতির বাপ্যারে কোন ছাড় দেয়া হবে না।
ওই দিনই বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আজকের দিনটি (শুক্রবার) বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত খুশির দিন। বিশ্বব্যাংক ফিরে এসেছে, জাইকা, এডিবি ও আইডিবি সবাই মিলে সেতুটি বাস্তবায়ন করব। অর্থনীতির গতিটা অব্যাহত থাকবে। যেভাবে চলছে সেভাবে থাকবে।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আমি সব সময় চেয়েছি বিশ্বব্যাংক এখানে ফিরে আসুক। এতে দেশকে যে বদনাম দেয়া হয়েছে সেটি সঠিক নয়, এটি প্রমাণিত হবে। অবশেষে এ প্রকল্পটি চালু হবে। একটি বছর হারিয়েছি। অনেক ঝামেলা গেছে। আশা করছি মাঠ পর্যায়ে ফেব্রুয়ারি মাসে কাজ শুরু করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাতিলকৃত ঋণচুক্তি কিভাবে পুনর্বহাল হবে সেটি তাদের ব্যাপার। এ বিষয়ে আমার জানা নেই। সম্ভবত বিশ্বব্যাংকের জন্যও এটি নতুন অভিজ্ঞতা।

No comments

Powered by Blogger.