পবিত্র কোরআনের আলো-হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে আল্লাহ দান করেছিলেন মানবজাতির নেতৃত্ব

১২২। ইয়া বানী ইসরাঈলায্কুরূ নি'মাতিইয়াল্লাতি আন্'আম্তু 'আলাইকুম ওয়া আন্নী ফাদ্ব্দ্বাল্তুকুম 'আলাল 'আলামীন।
১২৩। ওয়াত্তাক্বূ ইয়াওমাল লা-তাজ্যী নাফ্সুন 'আন নাফ্সিন শাইয়াওঁ ওয়া লা-ইউক্ব্বালু মিনহা 'আদ্লুওঁ ওয়া লা-তান্ফা'উহা শাফা'আতুওঁ ওয়া লা-হুম ইউন্সারূন।


১২৪। ওয়া ইযিব্তালা ইব্রাহীমা রাব্বাহু বিকালিমাতিন ফাআতাম্মাহুন্না; ক্বালা ইনি্ন জায়িলুকা লিন্নাসি ইমামা; ক্বালা ওয়া মিন যুর্রিইয়্যাতি; ক্বালা লা-ইয়ানালু 'আহ্দিজ জলিমীন। (সুরা আল-বাকারা, আয়াত ১২২-১২৪)

অনুবাদ
১২২। হে বনি ইসরাঈল জাতি, তোমরা আমার সেই নিয়ামত স্মরণ কর, যা আমি তোমাদের দান করেছি। আমি তোমাদের দুনিয়ার অন্যান্য জাতির চেয়ে উৎকর্ষ দান করেছি।
১২৩। তোমরা অনাগত সেই দিনটির জবাবদিহিতা সম্পর্কে সতর্ক হও, যেদিন একজনের কোনো পরিণতি আরেকজনকে দেওয়া হবে না এবং কোনো বিনিময় গ্রহণ করা হবে না, কোনো সুপারিশও গ্রাহ্য হবে না। আর এরা কোনো রকম সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না।
১২৪। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর কতিপয় বিষয়ে যখন পরীক্ষা নিলেন তাঁর 'রব', অতঃপর ইব্রাহিম (আ.) পুরোপুরি তা পূরণ করলেন, তখন আল্লাহ বললেন, আমি আপনাকে মানবজাতির জন্য নেতা বানাতে চাই। তিনি বললেন, আমার ভবিষ্যৎ বংশধররাও! আল্লাহ বললেন, আমার এই প্রতিশ্রুতি জালিমদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

ব্যাখ্যা
এখানে বনি ইসরাঈল জাতির শ্রেষ্ঠত্বের গোড়ার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বনি ইসরাঈলকে সত্যের পথে আনার জন্য তাদের বর্ণাঢ্য উত্তরাধিকার ও ঐতিহ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। বনি ইসরাঈলকে যে পৃথিবীর সেরা জাতির উৎকর্ষ দান করেছিলেন_এ কথা বেশ স্পষ্টভাবেই এখানে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, তাদের সেই উৎকর্ষ শুধু রাজ্য জয়ের মাধ্যমে মানুষকে পদানত করার শ্রেষ্ঠত্ব ছিল না, সেটা ছিল বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানবিক উৎকর্ষ। বনি ইসরাঈলের আদি পূর্বপুরুষ ছিলেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)। তাঁর দুই স্ত্রীর গর্ভজাত দুই পুত্র ছিলেন। ছোট স্ত্রী হাজেরার গর্ভজাত প্রথম পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে (যিনি তাঁর মায়ের সঙ্গে মানুষ হয়েছিলেন মক্কায়) সঙ্গে নিয়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তৈরি করেছিলেন পবিত্র কা'বাঘর। আর তাঁর বড় স্ত্রী সারার গর্ভজাত পুত্র হজরত ইসহাক বা ইসরাঈলের বংশধররা পরিচিত হয়েছিলেন বনি ইসরাঈল নামে। আদি ব্যাবিলন সাম্রাজ্যের দজলার তীরবর্তী কেন্দ্রভূমি থেকে তিনি তাঁর ছোট স্ত্রীকে পুত্রসহ আল্লাহর নির্দেশে নির্বাসিত করেছিলেন মরুভূমিবেষ্টিত নির্জন মক্কা বা ফালাত উপত্যকায়। আর বড় স্ত্রীকে নিয়ে নিজে চলে গিয়েছিলেন পশ্চিমের ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী কিনান (বর্তমান ফিলিস্তিনের জেরুজালেম) অঞ্চলে। দুই পুত্রের বংশধররাই হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর গৌরবময় উত্তরাধিকারের দাবিদার। তবে ইসরাঈল বংশে আল্লাহ তা'আলা পাঠিয়েছেন অসংখ্য নবী-রাসুল। আর হজরত ইসমাইল (আ.)-এর বংশে পাঠিয়েছেন শেষ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে। ১২৪ নম্বর আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, মানবজাতির এক মহান পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.)-কে তিনি মানবজাতির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন_এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাঁর বংশধররা যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায়ই নেতৃত্বের উত্তরাধিকারী, তাও সঠিক। কিন্তু যারা অযোগ্য, যারা সত্যকে অস্বীকারকারী, আল্লাহর অবাধ্য এবং জালিম, তাদের নেতৃত্বের ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা অবশ্যই কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.