পদ্মা সেতু প্রকল্প-দুই সপ্তাহের মধ্যে আসছেন তিন দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরা

পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের কৌশল ও কর্মপদ্ধতি নির্ধারণে এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা সফরে আসছে বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকার প্রতিনিধিদল। আর বিশ্বব্যাংকের নতুন করে শর্তারোপ করার যে খবর বেরিয়েছে, তা ঠিক নয়।


অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ গতকাল রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানিয়েছেন।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ফিরে আসার ঘোষণা দেওয়ার এক দিন পর সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক-ভাবে এই বিবৃতি দেওয়া হলো। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল সংবাদ সম্মেলন করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ইআরডি সচিব জানান, বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকার দুটি মিশন ঢাকা সফরে আসবে। একটি দল দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সঙ্গে বৈঠক করবে। অন্য দলটি কতটা দ্রুততার সঙ্গে সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় তার কর্মপদ্ধতি ঠিক করতে সরকারের সঙ্গে বৈঠক করবে।
ইকবাল মাহমুদ জানান, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের সম্মতি জানিয়েছে। তবে সংস্থাটি ফিরে আসার ক্ষেত্রে নতুন কোনো শর্ত দেয়নি। নতুন ক্রয় ব্যবস্থাপনা প্রণয়ন ও স্বতন্ত্র প্যানেল গঠনের মতো যেসব শর্তের কথা সংবাদপত্রে বলা হচ্ছে তা আগেই দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি। চার উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী ক্রয় ব্যবস্থাপনা চলবে বলে জানান তিনি।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক চুক্তি বাতিল করায় সংস্থাটির সঙ্গে পুনরায় চুক্তি করতে হবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ইআরডি সচিব জানান, প্রকল্পের কাজ থেমে নেই। এটি একটি চলমান প্রকল্প। তাই নতুন করে চুক্তি করতে হবে না। পুরনো ঋণ চুক্তি কিভাবে বাস্তবায়ন হবে তা ঠিক করতেই প্রতিনিধি দল সফরে আসছে।
সচিব জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পে জাইকার ঋণ চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির চিঠি ইতিমধ্যে ইআরডির হাতে এসেছে। তবে ঠিক কতদিন মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে তা তিনি বলতে পারেননি। তবে এডিবির পক্ষ থেকে ঋণ চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির কোনো চিঠি এখনো পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান। অবশ্য ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাদের চুক্তির মেয়াদ রয়েছে।
মসিউর রহমান ছুটিতে গেছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ জানান, বিশ্বব্যাংকের দেওয়া সব শর্ত সরকার পূরণ না করলে তো সংস্থাটি এ প্রকল্পে অর্থায়নে সম্মতি জানাত না। অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত ও সেতুর নির্মাণকাজ একসঙ্গে চলবে। এর মধ্যে অভিযোগের সত্যতা মিললে বাংলাদেশের আইনে তার বিচার হবে।
ইআরডি সচিব তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সম্মতিকে সরকার আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছে। একই সঙ্গে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংককে ফিরিয়ে আনতে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, যুক্তরাজ্য ও চীন সরকারের গঠনমূলক ভূমিকাকে সরকার গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছে। তিনি বলেন, 'দুর্নীতি দমনের বিষয়ে সরকার দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকার শুরু থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' নীতি ঘোষণা করে।
ইআরডি সচিব জানান, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলার ঋণের পাশাপাশি অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সাড়ে ৫২ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার বিষয়টি অনুমোদন করেছে।
বিশ্বব্যাংকের এক্সপার্ট প্যানেলের তালিকা চেয়েছে দুদক : পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির ওপর নজর রাখতে বিশ্বব্যাংকের যে 'এক্সপার্ট প্যানেল' কাজ করবে তার সদস্যদের নামের তালিকা চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিশ্বব্যাংকের ইন্টিগ্রিটি বিভাগের প্রধানের কাছে এ বিষয়ে একটি ই-মেইল পাঠানোর কথা জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান।
দুই সপ্তাহ আগে দুদকের অনুসন্ধান টিম পুনর্গঠনের পর এ চিঠি পাঠানো হয়েছে। গতকাল বিকেলে দুদক কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান জানান, বিশ্বব্যাংকের ওই এক্সপার্ট প্যানেল পদ্মা সেতুর দুর্নীতির বিষয়ে পর্যবেক্ষণে থাকবে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ও সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন হলে তা-ও করা হবে।
শিগগিরই দুদক ও বিশ্বব্যাংক বিশেষ বৈঠকে বসবে বলে জানা গেছে। চলতি সপ্তাহের যেকোনো কর্মদিবসে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এ বৈঠক হতে পারে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে। বৈঠকে দুর্নীতির বিষয়ে যৌথভাবে অনুসন্ধান করতে একটি সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে জানা গেছে।
দুদক সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক অবশেষে রাজি হলেও তারা চায় দুর্নীতি তদন্তে দুদকের অনুসন্ধান জোরদার করা হোক। পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণ দিতে বিশ্বব্যাংকের অন্যতম শর্ত ছিল, দুর্নীতির তদন্ত জোরদার করতে হবে। এ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংক দুদকের তদন্ত দলে তাদের প্রতিনিধি রাখতে প্রস্তাব দেয়। দুদক একপর্যায়ে বিশ্বব্যাংকের এ প্রস্তাবে রাজি হয়। নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল নিয়োগের প্রস্তাব করে বিশ্বব্যাংক।
এই শর্ত মাথায় রেখেই দুই সপ্তাহ আগে দুদকের তদন্ত দল পুনর্গঠন করা হয়। বিদ্যমান তদন্তদলের সঙ্গে যুক্ত করা হয় দুদকের আরো দুজন উপপরিচালককে।

No comments

Powered by Blogger.