ঢিলেঢালা হরতাল- সারাদেশে ১০ যান ভাংচুর, আগুন ॥ কঠোর নিরাপত্তা শতাধিক আটক

রবিবার সারাদেশে ইসলামী ও সমমনা ১২ দলের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা ঢিলেঢালা হরতাল পালিত হয়েছে। তবে ব্যাপক কোন হামলা, সংঘর্ষ, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি। ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও চট্টগ্রামে সরকারী বিআরটিসি বাসে অগ্নিসংযোগসহ সারাদেশে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।


সংঘর্ষকালে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ সারাদেশে অন্তত ১০টি যানবাহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিক ও সাধারণ মানুষসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। এছাড়া সারাদেশেই শান্তিপূর্ণ হরতাল পালিত হয়েছে। সারাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল কঠোর। সারাদেশ থেকে শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বিকেল ৪টা থেকে মহাখালী, সায়েদাবাদ ও গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার যানবাহন ছাড়তে শুরু করে। হরতালে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যন্য জেলায় যানবাহনের চলাচল ছিল তুলনামূলক কম। সারাদেশে রেল যোগাযোগ ছিল স্বাভাবিক।
সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্¯’াপন, নারীনীতি ও ফতোয়া সম্পর্কে উচ্চ আদালতের দেয়া আদেশ বাতিল, শিক্ষানীতি সংশোধন, মহানবী (সা)-এর কটূক্তিকারী ও ফেসবুকে মহানবী (সা)কে ব্যঙ্গ করে ছবি প্রকাশকারীদের শাস্তি প্রদান, পর্দা প্রথা ও সম্প্রতি আমেরিকায় মহানবী (সা)কে অবমাননা করে ছবি নির্মাণের প্রতিবাদে শনিবার ইসলামী ও সমমনা ১২ দল খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদ, নেজামে ইসলাম পার্টি, ইসলামিক পার্টি, আহকামে শরীয়ত হেফাজত কমিটি, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, মুসলিম লীগ, ন্যাপ ভাসানী, ভাসানী ফ্রন্ট ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি গত শনিবার বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা করে। এমন ঘোষণায় আগ থেকেই কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই ইসলামী সমমনা ১২ দলের নেতাকর্মীরা শনিবার রাজধানী জুড়ে তা-ব চালায়। জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে ঢুকে এক পত্রিকার ফটো সাংবাদিকদের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। তাদের চোরাগুপ্তা হামলায় পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে রবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে হয়। হামলা ও ভাংচুরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ইসলামী ও সমমনা ১২ দলের ২ শীর্ষ নেতাসহ ৭৭ জনকে আটক করে। এরমধ্যে ৩২ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে বাকিদের ছেড়ে দেয়া হয়। নেতাকর্মীদের আটকের প্রতিবাদে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুরে সফররত থাকায় এ দু’টি জেলা বাদে সারাদেশে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হরতাল পালনের ঘোষণা দেন ইসলামী ও সমমনা ১২ দলের সদস্য সচিব ও খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা জাফর উল্লাহ।
হরতালের ঘোষণায় ভোর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম, পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব, হাইকোর্ট মোড়সহ উত্তরার আব্দুল্লাহপুর, কবি জসীম উদ্দীন রোড, আশকোনা, কুড়িল বিশ্বরোড, মহাখালী টিভি কলোনি গেট, মগবাজার, ফার্মগেট, লালবাগ, বক্সীবাজার, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, কমলাপুর, মিরপুর, সায়েদাবাদ, মোহাম্মদপুরসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলেন।
এদিকে হযরত মুহম্মদ (সা)কে কটাক্ষ করে চলচ্চিত্র নির্মাণ ও ফ্রান্সে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করার প্রতিবাদে শুক্রবার বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনে আমেরিকা ও ফ্রান্সের জাতীয় পতাকা পোড়ানোর ঘটনায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছিল রাজধানীর গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ায়।
সকাল ৭টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানাধীন মিরহাজীরবাগে ৫০ থেকে ৬০ জন হরতাল সমর্থনকারী জোরপূর্বক রাস্তায় নামার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ বাঁধা দিলে পুলিশের সঙ্গে হরতাল সমর্থনকারীদের ব্যাপক ধাওয়া পাল্টাধাওয়া হয়। এক পর্যায়ে পুলিশের লাঠিচার্জের মুখে হরতাল সমর্থনকারীরা মীরহাজীরবাগের বিভিন্ন গলিতে অবস্থান নিয়ে পুলিশের উপর চোরাগুপ্তা হামলা চালায়। হামলায় যাত্রাবাড়ী থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক রুহুল আমীনসহ অন্তত ৩ পুলিশ সদস্য আহত হন। পুলিশ এ সময় প্রথম দফায় ১২ এবং পরে আরও ২৬ জনকে সর্বমোট ৩৮ জনকে আটক করে।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর মিরপুর থানাধীন পূর্ব কাজীপাড়া ৪ তলা সিদ্দিকীয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সামনে একটি যাত্রীবাহী বাস ভাংচুর করে। হরতাল সমর্থনকারীরা পুলিশের কারণে বাসটিতে অগ্নিসংযোগ করতে পারেনি।
এছাড়া সকাল ৮টার দিকে আব্দুল্লাহপুর এলাকায় হরতাল সমর্থনকারীরা রাস্তা নামার চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশের বাঁধার মুখে সরে যায়। এ সময় হরতাল সমর্থনকারীরা যানবাহনের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। একই অবস্থা হয় উত্তরা হাজী ক্যাম্পের কাছে। সকাল ৯টার দিকে হরতাল সমর্থনকারীরা নামার চেষ্টা করে পুলিশের বাঁধার মুখে সরে যায়। সেখানেও ইটপাটকেল ছুড়ে যানবাহনের ক্ষতি করে হরতাল সমর্থকরা। লালবাগ এতিমখানার সামনে, যাত্রাবাড়ী মোড়ে, মোহাম্মদপুর বাস টার্মিনাল এলাকায় হরতাল সমর্থনকারীরা রাস্তায় নেমে মিছিল করার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশের বাঁধার মুখে চলে যায়। একই অবস্থা হয় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। হরতাল সমর্থনকারীরা মিছিল করার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা ইটপাটকেল ছুড়ে যানবাহনের ক্ষতিসাধন করে। অন্যদিকে ইসলামী ও সমমনা ১২ দলের হরতালের হার্ড পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর সড়ক ছিল শান্ত। শনিবার ভোর থেকেই সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়। প্রতিবাবের মতো এবার সেখানে কোন জোরালো পিকেটিং হয়নি। এছাড়া পুরো রাজধানী জুড়েই শান্তিপূর্ণ হরতাল পালিত হয়েছে।
হরতালের সময় রাজধানীতে যানবাহনের চলাচল ছিল তুলনামূলক কম। শুধু সিটিং সার্ভিস কিছু বাস রাজধানীতে চলাচল করেছে। তবে তাও ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক কম। রাজধানীর মহাখালী, গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কোন দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। বিকেল ৪টা থেকেই বাস টার্মিনালগুলো থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়তে শুরু করে। তবে কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে নির্ধারিত সময়ের মধেই ট্রেন ছেড়ে গেছে।
সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ে বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে ভাংচুর চালানোর পর পিকেটাররা তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ এ সময় ৩ জনকে আটক করে। সিলেটে হরতাল চলাকালে ভাংচুরের চেষ্টার সময় পুলিশ ৯ জনকে আটক করে।

No comments

Powered by Blogger.