পাকিস্তানকে হারাতে হবে এখন অঙ্ক কষে by নোমান মোহাম্মদ

জুনে জিম্বাবুয়েতে তিন জাতি টুর্নামেন্টে এমনটা হয়েছিল। শুরুর দুই হারের ধকল সামলে টানা দুই ম্যাচে বাংলাদেশ হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা ও স্বাগতিকদের। তিন দলের পয়েন্ট হয়ে যায় সমান। কাজ হয়নি তাতেও, নেট রান রেটের ভিত্তিতে ফাইনালে খেলে বাকি দুই দল। কপাল পোড়ে বাংলাদেশের।


এই টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে আসার আগে ত্রিনিদাদের আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্টেও একই অবস্থা। চার দলের ওই আসরে কোনো ফাইনাল ছিল না। পয়েন্টের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়েছে শিরোপাজয়ী। সেখানে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও ত্রিনিদাদের পয়েন্ট সমান হওয়ার পর ভরসা আবার সেই রান রেট। হতাশা আবার সঙ্গী মুশফিকুর রহিমের দলের।
টোয়েন্টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্বপ্নঘুড়ি কি ভোকাট্টা হয়ে যাচ্ছে ওই রান রেটের কারণেই? এই বিশ্বকাপে এখনো গ্রুপের অন্য দুই দলের সমতায় পৌঁছতে পারেনি বাংলাদেশ। সে জন্য কাল পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে জিততেই হবে। সমীকরণটা গতকালের ম্যাচের আগেও ছিল। কেবল সঙ্গে বাড়তি প্রত্যাশা, নিউজিল্যান্ড যদি পাকিস্তানকে হারাতে পারে! তাহলে শেষ ম্যাচের জয়টাই হবে সুপার এইটের টিকিট। কাল পাল্লেকেলেতে তাই ম্যাচে না থেকেও প্রবলভাবে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ক্রিকেটদেবতা তাদের প্রার্থনা শোনেননি। পাকিস্তানের জয়ে এখন নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে তাদেরও পয়েন্ট দুই। বাংলাদেশের রয়ে গেছে শূন্য। শুধু তো তাই নয়, রান রেটেও দুই দল যোজন এগিয়ে। +১.১৫০ নেট রান রেট নিয়ে সুপার এইট প্রায় নিশ্চিত নিউজিল্যান্ডের। কাল কিউইদের ১৩ রানে হারানো পাকিস্তানের নেট রান রেট +০.৬৫০। সেখানে কিউইদের কাছে ৫৯ রানে বিধ্বস্ত হওয়া বাংলাদেশের নেট রান রেট -২.৯৫০। অর্থাৎ কাল জিতলেও হয়তো শেষরক্ষা হচ্ছে না। জিম্বাবুয়ে ও ত্রিনিদাদের টুর্নামেন্ট দুটির মতো সর্বনাশের প্রতিশব্দ হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে নেট রান রেট। আবারও!
আইসিসির পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে অবশ্য 'লাইফলাইন' একটি দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে পরে ব্যাটিং করলে হিসাবটা হবে প্রথম ইনিংস শেষে। আর আগে ব্যাটিং করে ৩৭ বা এর বেশি রানে জিতলেই পাকিস্তানকে রান রেটে টপকে যাবে বাংলাদেশ। যে ব্যবধান ৫০-৬০, এমনকি আরো বেশি রানের ব্যবধানে হতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। হিসাবটা জানার পর তাই কিছুটা স্বস্তি হওয়ার কথা মুশফিকুর রহিমের। যদিও ১৯৯৯ বিশ্বকাপের ওই মহাকাব্যিক জয়ের পর আর কোনো ফরম্যাটেই কখনো পাকিস্তানকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। সব কিছুর মতো এই চক্রেরও তো শেষ আছে। সেটি কালকের ম্যাচেই নয় কেন? আর জিতলে ব্যবধান অন্তত ৩৭ রানের নয় কেন?
এসবের কিছুই হতো না, যদি নিউজিল্যান্ড কাল পাকিস্তানকে হারাতে পারত। আগে ব্যাটিং করে ছয় উইকেটে ১৭৭ রান তোলে পাকিস্তান। তিন নম্বরে নামা নাসির জামশেদের ৩৫ বলে ৫৬ রানের ইনিংসটি যার হাইলাইটস। সঙ্গে অন্যদের মাঝারি গোছের অবদান তাদের এনে দেয় লড়াকু পুঁজি। নিউজিল্যান্ডের এলোমেলো বোলিং এবং কয়েকটি ক্যাচ ড্রপ অবশ্য তাতে রেখেছে ভূমিকা।
তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের মতো প্রথম ইনিংস শেষেই খেলার ফল নির্ধারিত হয়ে যায়নি। নিউজিল্যান্ড লড়েছে ভালোমতোই। রান রেটের সঙ্গে অবশ্য পাল্লা দিতে পারেনি সেভাবে। শেষ পাঁচ ওভারে তাই জয়ের প্রয়োজনীয়তা দাঁড়ায় ৭০ রানের। হাতে সাত উইকেট থাকায় লক্ষ্য ছোঁয়া সম্ভব ছিল। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম উইকেটে থাকায় সেই সম্ভাবনা ছিল আরো বেশি। কিন্তু উমর গুল ১৬তম ওভারের প্রথম বলে ম্যাককালামের (৩১ বলে ৩২) স্টাম্প ছত্রখান করে দিলে শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের আশাও। শেষ চার ওভারে বাংলাদেশের বিপক্ষে যে ৬৩ রান তুলেছিল কিউইরা, কাল প্রয়োজন ছিল এর চেয়েও ৬ রান কম। কিন্তু ম্যাককালাম নেই যে! ৯ উইকেটে ১৬৪ রানে গিয়ে তাই থেমে যায় তাদের ইনিংস। হার মেনে নেয় ১৩ রানের।
অতএব, কাল তাই পাকিস্তানকে হারালেই চলছে না বাংলাদেশের। হারাতে হবে অন্তত ৩৭ রানের ব্যবধানে। কাজটি কঠিন। তবে এর চেয়ে অনেক কঠিন কাজ তো অনেকবার দেখেছে ক্রিকেট। বাংলাদেশ তো তাতে নতুন এক অধ্যায়ের সংযোজন করতেই পারে, নাকি?

No comments

Powered by Blogger.