স্বপ্নের পদ্মা সেতু-নির্মাণকাজ দ্রুত শুরু করা হোক

দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে। অবশেষে বর্তমান সরকারের আমলে প্রকল্পের কাজ কিছুটা এগোলেও বিশ্বব্যাংকসহ ঋণদাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে অনেক নাটকীয়তা হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন চুক্তি থেকে বিশ্বব্যাংক নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েও আবার ফিরে এসেছে।


কিন্তু স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবে কবে ধরা দেবে, তা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। অন্তত সেতুসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা এমনটাই আশঙ্কা করছেন।
বিশ্বব্যাংক গত ২১ সেপ্টেম্বর এক বিবৃতিতে পদ্মা সেতুর অর্থায়নে তাদের ফিরে আসার কথা জানিয়েছে। একই সঙ্গে আরো কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। তবে কবেনাগাদ কাজ শুরু হবে সে বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। ফলে এটি এখনো স্পষ্ট নয় যে এর আগে সেতুর কাজ যত দূর এগিয়েছিল, সেখান থেকেই কাজ শুরু হবে, নাকি নতুন করে ঠিকাদারদের প্রাকযোগ্যতা যাচাইসহ যাবতীয় কাজ নতুনভাবে সম্পন্ন করা হবে। কোনো কোনো চুক্তি আবার নতুনভাবে সম্পাদন করতে হবে কি না তাও স্পষ্ট করা হয়নি। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য তদন্তের কথা বলেছে। বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের সেই শর্ত মেনে নিয়েছে। চলতি সপ্তাহে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলের ঢাকায় আসার কথা। তারা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সঙ্গে বৈঠকে বসবে এবং তদন্তের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নির্ধারণ করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি স্পষ্ট নয় যে তদন্ত এবং সেতুর নির্মাণকাজ পাশাপাশি চলবে কি না। পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে কানাডার আদালতে একটি মামলা চলছে। আগামী বছরের এপ্রিলে সেই মামলার শুনানি শুরু হবে। মামলায় যদি কানাডার সেই প্রতিষ্ঠান নির্দোষ প্রমাণিত হয়, তাহলে প্রাকযোগ্যতায় উত্তীর্ণ সেই প্রতিষ্ঠানটি কি এখানে আইনগতভাবে তাদের অংশগ্রহণ দাবি করতে পারবে? এ রকম অনেক প্রশ্নেরই উত্তর আমাদের জানা নেই। এদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের চেয়ারম্যান প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরী জানিয়েছেন, স্বাভাবিক নিয়মে যে পর্যন্ত অগ্রগতি হয়েছে সেখান থেকে কাজ শুরু করতে হলেও সেতুর বাস্তব নির্মাণকাজ তথা পাইল ড্রাইভিংয়ের কাজ শুরু করতে ২০১৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বা আরো এক বছর সময় লেগে যেতে পারে। কিন্তু ভিন্নভাবে কাজ শুরু করতে হলে কিংবা নতুন করে চুক্তি সম্পাদন করতে হলে, কবেনাগাদ সেই পাইল ড্রাইভিংয়ের কাজ শুরু করা যাবে, তা আমাদের কে বলতে পারবেন?
কথায় বলে 'যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা'। খুঁত ধরতে চাইলে খুঁতের অভাব হয় না। আসলে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমাদের কী ধরনের সমঝোতা হয়েছে, সেটাই আসল কথা। কেবল সরকারই সে সম্পর্কে আমাদের সম্যক ধারণা দিতে পারে। কিংবা সরকারের কাজকর্মে নতুন কোনো জটিলতা কিংবা দুুর্নীতির অভিযোগ তৈরি হবে কি না- তাও কেবল তারাই বলতে পারবে। বিশ্বব্যাংকের ফিরে আসা যদি আন্তরিক হয়, তাহলে সবকিছুই সাবলীলভাবে এগোতে পারে। তদন্তও চলতে পারে, কাজও চলতে পারে। তা না হলে এক বছর পরে গিয়েও বিশ্বব্যাংক বলতে পারে, তদন্তে আমরা সন্তুষ্ট নই, তাই পদ্মা সেতুর অর্থায়ন আবার স্থগিত করা হলো কিংবা প্রত্যাহার করা হলো। আমরা কথার মারপ্যাঁচ বুঝতে চাই না। আমরা চাই, দেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুর নির্মাণকাজ অতি দ্রুত শুরু হোক।

No comments

Powered by Blogger.