মানুষ আর এলিয়েনের প্রেমের ছবি ‘পরবাসিনী’ by অনন্যা আশরাফ

পারমানবিক অস্ত্র নিয়ে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ করতে গিয়ে তেজস্ক্রিয়তায় পৃথিবী প্রায় ধ্বংসের মুখে। মানুষের বসতির জন্য একটি নিরাপদ গ্রহ খুঁজে বের করার জন্য হন্যে হয়ে উঠেছেন বিজ্ঞানীরা। এতে সাফল্য পায় বাংলাদেশ। এদেশের নভোচারীরা আবিস্কার করে মানব বসতির জন্য আদর্শ গ্রহ ‘এরিস-৩২’।
দূষিত পৃথিবী থেকে মানুষেরা ‘এরিস-৩২’ গ্রহে বসতি গড়ার পরিকল্পনা করে। মানুষের এই পরিকল্পনা জানতে পারে এলিয়েন অর্থাৎ ভিনগ্রহের প্রাণীরা। তারা মানুষের মহাকাশ প্রযুক্তি ধ্বংস করার মিশন নিয়ে পৃথিবীতে আসে। এ মিশনে নের্তৃত্ব দেয় মেহেজ নামের এক মেধাবী এলিয়েন। মানুষের স্যাটালাইট প্রযুক্তি ধ্বংস করার খুব কাছাকাছি পৌছে মেহেজ প্রেমে পড়ে যান পৃথিবীর এক তরুণের। এলিয়েনদের সঙ্গে মানুষের সংঘাত-সংঘর্ষের মধ্যেই পাখনা মেলে দেয় প্রেমের প্রজাপতি। এমনই এক জোড়ালো সাইন্স ফিকশন গল্প নিয়ে নির্মিত হচ্ছে স্বপন আহমেদের ‘পরবাসিনী’ ছবিটি। এটি প্রযোজনায় রয়েছে এশিয়ান টিভি।
‘ছবির অর্ধেক শুটিং ‘এরিস-৩২’ গ্রহে আর বাকি অর্ধেক ছবির শুটিং হচ্ছে পৃথিবীতে’, এভাবেই ছবিটির শুটিং সম্পর্কে জানতে চাইলে রসিকতা করে বললেন ‘পরবাসিনী’ ছবির পরিচালক স্বপন আহমেদ। মাধবপুর, শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া, রেইনফরেস্ট, কমলগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে টানা শুটিংয়ে  পর কয়েকদিনের বিরতি। ২০ জুলাইয়ের পর আবারও শুরু হবে ছবির শুটিং। বর্তমানে শুটিংয়ের প্রস্তুতি চলছে  মানিকগঞ্জে। ছবির নানাদিক নিয়ে স্বপন আহমেদের সঙ্গে কথা বলে বাংলানিউজ।

রোমান্টিক ছবি ‘লালটিপ’এর পর সাইন্স ফিকশন ‘পরবাসিনী’ ছবিটি নিয়ে কেন কাজ করা হচ্ছে ? এ প্রসঙ্গে স্বপন আহমেদ বলেন, সাইন্স ফিকশন নিয়ে তেমন কোন ছবি নির্মাণ করা হয়নি বাংলাদেশে। ‘লালটিপ’ ছবির সাফল্যের পর ইচ্ছে ছিল ভিন্ন কিছু নিয়ে দর্শকদের সামনে হাজির হব। তাই নতুন ছবি কাহিনী হিসেবে সাইন্স ফিকশনের থিমকে বেছে নিয়েছি। গতানুগতিক বাংলা ছবি থেকে বেরিয়ে দর্শকদের জন্যে একটি ভিন্নধারার ছবি বানানোর চেষ্টা করছি।

হলিউড ও বলিউডে সাইন্স ফিকশন ভিত্তিক ছবিগুলো বিশ্বের সিনেমা প্রিয় মানুষদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। সে ছবিগুলোর ভক্ত বাংলাদেশেও কম নেই। সেগুলোর তুলনায় এদেশে তৈরি সাইন্স ফিকশন ছবি ‘পরবাসিনী’ কি দর্শকের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বপন আহমেদ বলেন, দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্যেই তো এত চেষ্টা। হলিউড ও বলিউডে ছবির বাজেট থাকে অনেক। সে তুলনায় সাইন্স ফিকশন হিসেবে ‘পরবাসিনী’র বাজেট তেমন কিছুই না। তবুও যথেষ্ট চেষ্টা থাকছে বৈজ্ঞানিক বিষয়গুলোকে প্রাণবন্ত করে উপস্থাপন করার। কল্পনার একটি জগতকে বিজ্ঞানের মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ছবির সেট হিসেবে মানিকগঞ্জে একটি স্পেস সেন্টার নিমার্ণ করছি। যাতে সাজানো থাকবে অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি। অবশ্যই নাসার মত দেখতে একটি বিশ্বাসযোগ্য স্পেস সেন্টার নির্মানের চেষ্টা করছি। এটা সময়ের ব্যাপার। সেট তৈরির জন্য তাই সময় নিতে হচ্ছে। এভাবে অন্যান্য বিষয়গুলোকেও বিজ্ঞানভিত্তিক করে সাজিয়েছি, যা দর্শকদের বিশ্বাসযোগ্য হবে বলে আশা করছি।

‘পরবাসিনী’ ছবির প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করছেন নীরব ও মেহজাবিন। তাদের অভিনয় সম্পর্কে স্বপন আহমেদ বলেন, এলিয়েনদের দলপতি মেহেজের ভূমিকায় অভিনয় করছেন মেহজাবীন। আর মেহজাবীনের প্রেমিকার ভূমিকায় অভিনয় করছে নীরর। নীরবের অভিনয়ের অভিজ্ঞতাটা পুরোনো হলেও মেহজাবীন চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন এবারই প্রথম। তবে মজার বিষয় হলো চরিত্রটি নিয়ে খুব বেশী সময় দিতে হয়নি তাদের পিছনে। তারা দুজনই ছোটবেলা থেকেই সাইন্স ফিকশন ছবি দেখে আসছে। বিদেশী সাইন্স ফিকশন ছবিতে এলিয়েনদের চরিত্রগুলোর সঙ্গে তারা আগে থেকেই পরিচিত। তাই চরিত্রটি কিভাবে তুলতে হবে তা নিয়ে খুব বেশি খাটতে হয়নি তাদের। দুজনই খুব ভালো অভিনয় করছে।

যে কোন ছবিতে গান হচ্ছে সাফল্যের অন্যতম স্তম্ভ। সাইন্স ফিকশন হলেও ‘পরবাসিনী’ ছবিতেও থাকছে গান। বরাবরের মত ছবির গানগুলো করানো হবে জনপ্রিয় সব সুরকার, গীতিকার ও সংগীতশিল্পীদের দিয়েই।  তবে এখন নয়, শুটিংয়ের কাজ শেষ করেই গানের কাজে হাত দিবেন বলে জানিয়েছেন স্বপন আহমেদ।
‘লালটিপ’ ছবির মত এ ছবির পোস্ট প্রডাকশনের কাজও করা হবে দেশের বাইরে। মুক্তি দেয়া হবে বিশ্বের কয়েকটি দেশে। সে বিষয়েও আনুষ্ঠানিকভাবে কথাবার্তা চলছে দেশের বাইরে আয়োজকদের সঙ্গে। আগামী কোরবানির ঈদে ছবিটি মুক্তি দেওয়াকে সামনে রেখেই চলছে নানা প্রস্তুতি।

‘স্বপন আহমেদের পরবর্তী ছবিতে অভিনয় করছেন ইমন’। কিছুদিন আগেই এমন একটি ঘোষনা দিয়েছিলেন স্বপন আহমেদ। কিন্তু নতুন ছবির কাজ শুরুর পর দেখা গেল অভিনয় করছেন নীরব। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বপন আহমেদ বলেন, অবশ্যই ইমনকে নিয়ে ছবি বানাচ্ছি। সে আমার পরবর্তী রোমান্টিক থ্রিলারধর্মী ছবিতে অভিনয় করবেন। এ ছবিতে ইমন অভিনয় করলে পরপর ৩টি ছবিতে ইমনের উপস্থিতি দর্শকদের জন্য একঘেয়েমি হয়ে যেতে পারে। এমন চিন্তা করেই ইমনের পরামর্শেই আমি নীরবকে নিয়ে কাজ শুরু করি। তাছাড়া ইমন ও নীরব দুজনই ভালো বন্ধু। আমার ছবির বিভিন্ন কাজেই ইমন আমাকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে। এর অন্য কোন কারণ নেই।

’পরবাসিনী’ নিয়ে প্রত্যাশার কথা জানিয়ে স্বপন আহমেদ বলেন, ভিন্ন কিছু দর্শকরা সবসময়ই গ্রহণ করে। আশা করছি ছবিটি দর্শকদের সে চাহিদা পূরণ করবে। ছবিটি সব বয়সের দর্শকদের জন্যে নির্মাণ করছি। ছোটরা এ ছবি দেখে বড় হয়ে বৈজ্ঞানিক হওয়ার অনুপ্রেরণা পাবে। তরুণ ও প্রবীনরা এ ছবির মাধ্যমে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের  বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির আরও উন্নতির কথা উপলব্ধি করবে। এতে রোমান্টিক আমেজও আছে। যা দর্শকদের বিনোদনের চাহিদাও মেটাবে। এ দেশের চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে আরেকটি ভিন্নধারা নিয়ে আসবে এ ছবি, সে আশাই করছি। 

সাইন্স ফিকশন ছবি ‘পরবাসিনী’ নিয়ে স্বপন আহমেদ তো আশার আলো দেখছেন। কিন্তু ২০০ থেকে ৩০০ কোটি কিংবা আরও বেশি বাজেটে নির্মিত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির হলিউড ও বলিউডের সাইন্স ফিকশনের পাশে এ ছবি কতটা গ্রহণযোগ্যতা ও সাফল্য পাবে ; এরকম প্রশ্ন উঠেছে অনেকের মনে।

No comments

Powered by Blogger.